[ অনলাইন ] 28/04/2024 |
|
|
|
সাব-রেজিস্ট্রার দম্পতির অঢেল সম্পত্তি |
|
বিএফআইইউর অনুসন্ধান |
সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার ও তার স্ত্রী নাসরিন হকের অঢেল সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। নামে-বেনামে এই দম্পতির রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার এফডিআর। এ ছাড়া এই দম্পতির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২০ ডিসেম্বর কালবেলায় ‘এক ভবনেই আট ফ্ল্যাট সাব-রেজিস্ট্রারের স্ত্রীর, স্বামীর দুর্নীতির টাকায় সম্পদ’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রাষ্ট্রীয় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করে।
জানা গেছে, বিএফআইইউ গত ১ জানুয়ারি সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার এবং তার স্ত্রী নাসরীন হকের সম্পদ বিবরণ চেয়ে ৩টি দপ্তরে একাধিক চিঠি দেয়। যার মধ্যে রয়েছে নিবন্ধন অধিদপ্তর, বাংলাদেশে কর্মরত সব তপশিলি ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান/মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার এবং বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ।
নিবন্ধন শাখার চিঠিতে বোরহান উদ্দিন সরকার ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা সব স্থাবর সম্পত্তি থাকলে তার তথ্যাদি চাওয়া হয়। তপশিলি ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান/মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বোরহান এবং তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে অতীতে কিংবা বর্তমানে কোনো হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসাব সংক্রান্ত তথ্যাদি ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রেরণ করতে বলা হয়। এ ছাড়া পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে পাঠানো চিঠিতে বোরহান উদ্দিন সরকার, স্ত্রী নাসরিন হক এবং তাদের সন্তান নাজমুল আহসানের পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্যসহ আন্তর্জাতিক বহির্গমনবিষয়ক সব তথ্যাদি প্রেরণের অনুরোধ করা হয়। এর পরই মেলে এই দম্পতির অঢেল সম্পত্তির সন্ধান।
বিএফআইইউ সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানে এই দম্পতির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এই দম্পতি দুটি ব্যাংক থেকে একাধিকবার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিলেও তা কয়েক মাস পরই এককালীন পরিশোধ করে দেন, যা অস্বাভাবিক এবং তাদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। এ ছাড়া কয়েকটি ঋণ সমন্বয় করা হয় একাধিকবার।
সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বলছে, আইডিএলসি ব্যাংক থেকে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ১ কোটি ২০ লাখ টাকার গৃহনির্মাণ ঋণ গ্রহণ করা হয়। এই টাকা ৩০৭ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। তবে মাত্র ৪টি কিস্তি প্রদানের পরই ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এককালীন পরিশোধের মাধ্যমে ঋণটি পুনরায় সমন্বয় করা হয়। সাউথইস্ট ব্যাংকে নাসরিন হকের নামে ১ কোটি টাকার একটি এফডিআর হিসাব লিয়েন রেখে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ ৮০ লাখ টাকার ১ বছরমেয়াদি ওভার ড্রাফট ঋণ (হি: নং ৭৩১-০৬) সুবিধা গ্রহণ করা হয়, যা প্রতি বছর নবায়নযোগ্য। ঋণটি ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এবং ওই বছরের ১১ জুলাইয়ে যথাক্রমে ৪৭ লাখ ও ৩০ লাখ টাকা প্রদানের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়। একই সময়ে ব্যাংকটিতে নাসরিন হকের নামে আরও একটি ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা মূল্যমানের এফডিআর হিসাব ছিল।
এ ছাড়া একই ব্যাংক থেকে ব্লিস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক ব্লিস বাসেত ক্যাসেল নামীয় তৈরিকৃত বাড়ির জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের ৩টি ফ্ল্যাট ক্রয়ের এ ঋণটি গ্রহণের সময় গ্রাহক কর্তৃক ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের জমি ও বিল্ডিং রয়েছে বলে জানানো হয়। ফ্ল্যাট ৩টি ক্রয়ের জন্য ২০২৮ সালের ১৫ নভেম্বর ব্যাংক থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ গ্রহণ করা হয়। ঋণ হিসাবটির বিপরীতে মাসিক কিস্তির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এরপর ২০২১ সালের ২৮ জুন এককালীন নগদ ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা দিয়ে ঋণ হিসাবটি সমন্বয় করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, বোরহান উদ্দিন সরকার ২০১৭-১৮ সালে রিটার্নে মাত্র ৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা আয় এবং নিট সম্পদ ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এ ছাড়া তার স্ত্রী নাসরিন হক ২০১৭-১৮ সালে রিটার্নে মাত্র ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় এবং নিট সম্পদ ২৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা দেখিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংক ঋণ নিয়ে কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করলে সেসব সম্পত্তির ওপরে সরকারকে কোনো রাজস্ব দিতে হয় না। তবে নগদ টাকা দিয়ে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করলে এসব সম্পত্তির ওপর রাজস্ব দিতে হয়। যে কারণে এই সাব-রেজিস্ট্রার দম্পতি নগদ টাকা থাকার পরও ব্যাংক ঋণে বাড়ি-ফ্ল্যাট ক্রয় করে মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকারের একাধিক নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয় যায়নি। তবে এর আগে তিনি কালবেলাকে বলেছিলেন, আমার সম্পর্কে আপনাদের ধারণা খুবই কম। আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই।
|
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|