Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
সমাজসেবা কর্মকর্তার জন্য গুনে গুনে ঘুষ নেন অফিস সহকারী, ভিডিও ফাঁস [ অনলাইন ] 28/04/2024
সমাজসেবা কর্মকর্তার জন্য গুনে গুনে ঘুষ নেন অফিস সহকারী, ভিডিও ফাঁস
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে গুনে গুনে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ নেওয়ার ৬ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। ওই টাকা তিনি এক কর্মকর্তার হয়ে গুনে রাখছিলেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বসে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মমতাজ বেগম গুনে গুনে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেনের জন্য টাকাগুলো নিচ্ছিলেন তিনি। নিজ কার্যালয়ে বসে ঘুষের টাকা বুঝিয়ে পাওয়ার কথা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করতেও দেখা যায় তাঁকে।

মমতাজ বেগমের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ক্লিপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এক ব্যক্তি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মমতাজ বেগমের অফিসকক্ষে যান। এ সময় মমতাজ বেগমকে ওই ব্যক্তি পকেট থেকে এক হাজার টাকার বেশ কিছু নোটের একটি বান্ডিল দেন। মমতাজ বেগম জানতে চান, এখানে কত দিয়েছেন? তখন ওই ব্যক্তি গুনে নিতে বললে, মমতাজ মুখে বলতে বলেন। এরপর মমতাজ টাকার বান্ডিল হাতে নেন এবং টাকাগুলো গুনতে থাকেন।

ওই ব্যক্তি মমতাজ বেগমের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি টাকা তুলতে পারিনি। অনেক কষ্ট করে টাকা এনেছি। প্রথম কিস্তির বরাদ্দ ১ লাখ ৯২ হাজার সই না থাকায় তুলে পারিনি।’ তখন মমতাজ বেগম ওই ব্যক্তিকে বলেন, ‘আপনি ঠকে যাবেন। আপনার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।’ তখন মমতাজ বেগমকে তিনি অনুরোধ করে বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকলে পাবেন।’

‘এ টাকা নিলে আমাকে বকা দিবে’ জানিয়ে মমতাজ বেগম ফোন কল দিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলেন, ‘স্যার (আমজাদ হোসেন) রফিক মেম্বার ৮০ হাজার দেওয়ার কথা ছিল, ৪০ হাজার দিয়েছে। স্যার, এক মাস পর আবার বিল আছে, তখন কেটে রাখতে হবে।’

ভিডিওতে ঘুষ দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি হারবাং মধ্যম পহরচাঁদা এতিমখানার সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য। এ ব্যাপারে তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রী, সচিব, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভিক্ষুকদের সেলাই মেশিন দিবে বলে আমার কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল চকরিয়া সমাজসেবা অফিস। এ চাঁদা দিতে না পারায় ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এতিমখানা পরিদর্শন করে। পরদিনই আমি অফিসে যাই, কেন এসেছি জানতে চেয়ে বকাবকি শুরু করে, “জরিপ ও বিলের সময় দেখিয়ে ছাড়ব” বলে হুমকি দেয়। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের বিল দাখিল করলে আমাকে বলে, পরিদর্শন কর্মকর্তা বিল না দিতে বলেছে।’

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সমাজসেবা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ও অফিস সহকারী মমতাজ বেগমের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করি। ২০২৩-২৪ সালের প্রথম কিস্তি ১ লাখ ৯২ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা তাঁদের ঘুষ দিতে হবে। অন্যথায় এতিমখানার টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেবে। তাঁদের কথায় রাজি হয়ে চেক গ্রহণ করি। চলতি মাসের ৮ তারিখ সমাজসেবা অফিসে গিয়ে দুপুর ১২টার দিকে অফিস সহকারী মমতাজ বেগমকে ৪০ হাজার দিই। এ টাকা গুনে নেওয়ার সময় জানতে চান, বাকি ৪০ হাজার কোথায়? এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমজাদ হোসেনকে ফোন করে বলে, রফিক মেম্বার আমার সঙ্গে বাটপারি করেছে, দ্বিতীয় কিস্তির সময় ৪০ হাজার টাকা রেখে দেব।’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলায় সমাজসেবার তালিকাভুক্ত ২৮টি এতিমখানা রয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন এতিমখানা অডিট করতে গেলে ১০ হাজার টাকা নেন। এ টাকা না দিলে অডিট না করেই চলে আসেন। এতিমখানা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও উপবৃত্তির উত্তোলনের সময় ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ লেনদেন ছাড়াও এ কর্মকর্তার দুর্ব্যবহার করা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মমতাজ বেগমের মোবাইল ফোনে আটবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।
 
অফিসকক্ষে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনি আগামীকাল (রোববার) আমার অফিসে আসেন। আপনাকে বিষয়টি বিস্তারিত বুঝিয়ে বলব। আসলে বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হাসান মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved