দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় সঙ্কট মুদ্রাপাচার। তবে পাচার বিষয়ে
সরকার নীরব। আবার কেন জানি আইএমএফও এ নিয়ে কিছু বলে না। বছরে ৭০০ কোটি ডলার
চলে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবার সোচ্চার হওয়া উচিত। ঋণখেলাপি, করখেলাপি,
অর্থপাচারকারী সবই একই সূত্রে গাথা। আমাদের এখানে যত বড় খেলাপি তত বড়
সুবিধা দেওয়া হয়। এখানে ১০ হাজার টাকার কৃষি ঋণের জন্য জেলে পাঠানো হয়। আর
১০ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপিকে সবাই স্যালুট দেয়। বৃহস্পতিবার ইকোনমিক
রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক
গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বারবার ঋণ পুনঃতপশিলের কারণে টাকা ছাপিয়ে বাজারে দিতে হচ্ছে।
এতে করে মূল্যস্ফীতি কমছে না। এটা না করে শক্ত হাতে খেলাপি ঋণ আদায় করলে
অর্থপ্রবাহ বেড়ে সমস্যার সমাধান হতো। জোর করে ব্যাংক একীভূতকরণ,
অর্থপাচার, কারেন্সি সোয়াপসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। তিনি
গভর্নর থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম রোধে সাংবাদিকদের সহায়তা নেওয়ার বিষয়টি
উঠে আসে আলোচনায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ অনেক আগের
ধারণা। তবে দুর্বল ব্যাংক সবল করার একমাত্র উপায় এটা না। তিনি গভর্নর থাকা
অবস্থায় ৫টি দুর্বল ব্যাংক আলাদা তদারকির মাধ্যমে ভালো ব্যাংকে পরিণত করেন।
এখন সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এক
সময়ের সবচেয়ে ভালো এ ব্যাংকটি খারাপ করার পেছনে যার ভূমিকা তার কিছু হচ্ছে
না। আবার কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এক করে দিলে
উত্তরবঙ্গের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া কারেন্সি সোয়াপ ঠিক না বলেও মত
দেন তিনি।
ফরাসউদ্দিন বলেন, বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এখানে সরকার যে দর
নির্ধারণ করেছে, তা ভালো। তবে কিছু খাদ্য কর্মকর্তা এবং মিল মালিক গিয়ে
বলবে আপনার ধান মানসম্মত না। তখন কৃষকরা মিলারদের কাছে কম দরেবিক্রি করতে
বাধ্য হবে। আগামী ১৫ দিন এ বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে। খাদ্যের যথেষ্ট
মজুদ রাখতে না পারলে দর বাড়িয়ে দেবে। আবার এখন বিভিন্ন পণ্যের দর নিয়ে
সিন্ডিকেট হয়। এর বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হতে হবে, তদারকি বাড়াতে হবে। এই
তদারকির মানে টিভি ক্যামেরা সামনে রেখে নজরদারি না।
রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত ‘কনভারসেশন উইথ মোহাম্মদ
ফরাসউদ্দিন’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ
রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।