বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক মন্দার বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেড়েছে সব ধরনের সুদের হার। তবে তা সমান্তরালভাবে বাড়েনি। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সাধারণ গ্রাহকদের নিরাপদ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সুদ বেড়েছে অতি নগণ্য হারে। অন্যদিকে ঋণের সুদ বেড়েছে বেশি হারে। এর চেয়েও বেশি বেড়েছে সরকারি স্বল্পমেয়াদি ঋণের উপকরণ ট্রেজারি বিলের সুদহার।
লক্ষণীয়, সরকারের স্বল্পমেয়াদি ঋণের উপকরণ ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার গত দুই বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। অপরদিকে এ সময়ে আমানতের সুদহার খুব কমই বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতির হার যেখানে সাড়ে ৯ শতাংশের উপরে, সেখানে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে আমানতের গড় সুদের হার ৮ শতাংশেরও কম। আবার নানা নিয়মের বেড়াজালে ফেলে অনেক ব্যাংক সাধারণ সঞ্চয়ী আমানত হিসাবে কোনো মুনাফাই দিচ্ছে না। এর ওপর প্রাপ্ত মুনাফা থেকে সার্ভিস চার্জ ও সরকারি কর কেটে রাখলে মুনাফার অঙ্ক যাচ্ছে আরও কমে। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার সমন্বয় করলে মুনাফা তো দূরের কথা, আসল টাকার মানই সঞ্চয়ের চেয়ে কম হচ্ছে। অবশ্য দুর্বল ব্যাংকগুলো বেশি মুনাফা দিলেও ঝুঁকির কারণে গ্রাহকরা সেখানে আমানত রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ঋণের সুদ বৃদ্ধিতে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। সুদহারের এমন তারতম্য যে সাধারণ আমানতকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক নয়, তা বলাই বাহুল্য।
মনে রাখা দরকার, আমানতকারীদের অনেকেই ব্যাংকে সঞ্চয় করেন। তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকের কার্যক্রমকে বেগবান করে। ফলে এ খাতে সুদহার একেবারেই কম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ব্যাংকগুলোও আমানত সংকটে পড়ছে। আবার সুদের বিনিময়ে ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়ার ফলে ব্যাংক খাত শুধু উপকৃতই হয় না, অর্থনীতির পালেও হাওয়া লাগে। সেখানে ঋণের সুদ বেশি হারে বাড়ায় চাপের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই সুদহারের এ অসামঞ্জস্যের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। কারণ, স্বল্প সুদ দিয়ে যেমন সাধারণ আমানতকারীদের আকর্ষণ করা যাবে না, তেমনি উদ্যোক্তাদের পক্ষেও উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কোনোভাবেই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকা যাবে না। আমানতকারী ও উদ্যোক্তাদের কথা চিন্তা করে সরকার সুদহার সমন্বয়ের পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।