সরকারি বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী। তাদের দাবি-রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক যেমন আছে তেমনি থাকবে, কারও সঙ্গে একীভূত নয়। রাজশাহীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
এটি উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের আপন ব্যাংক। প্রয়োজনে এর সংস্কার করা যেতে পারে; কিন্তু একত্রীকরণ নয়। রাকাবকে বিকেবির সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ১৬ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় সরকারি খাতের দুটি ব্যাংককে অন্য দুটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। জানানো হয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ১৭ এপ্রিল একটি স্মারকলিপি রাকাবের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করে রাজশাহীর সচেতন ব্যবসায়ী মহল। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে রাকাব-বিকেবি একীভূত না করার পক্ষে ১১টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। প্রথমত, ব্যাংক একীভূতকরণের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, তাতে করে বিকেবির মতো একটি বৃহৎ লোকসানি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাবকে মিলিত করা হলে একীভূতকরণের যে সুফল তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয়ত, বিকেবির প্রতিবছর লোকসানের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। পক্ষান্তরে রাকাব বিগত তিনটি অর্থবছর থেকে অপারেটিং মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তৃতীয়ত, আর্থিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন সূচকে বিকেবির তুলনায় রাকাব ভালো অবস্থায় আছে। চতুর্থত, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কৃষিভিত্তিক ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা বর্তমানের চেয়ে অনেকাংশে মন্থর হয়ে পড়বে। পঞ্চমত, রাকাবের প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে অবস্থিত হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ব্যাংক দুটিকে একীভূত করা হলে চলমান অগ্রগতির ধারা বাধাগ্রস্ত হবে। ষষ্ঠত, রাকাবের ক্রমপুঞ্জীভূত মূলধন-ঘাটতি এখনো সহনীয় পর্যায়ে আছে, যা দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পূরণ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। অপরদিকে বিকেবির ক্রমপুঞ্জীভূত মূলধন-ঘাটতি পূরণের সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। সপ্তমত, রাকাব অনলাইনের মাধ্যমে ঋণ শ্রেণিকরণ স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করে থাকে। বিকেবিতে শ্রেণিকৃত ঋণ গোপনের সুযোগ রয়েছে। অষ্টমত, অদ্যাবধি রাকাবের অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমে সাইবার আক্রমণ সফল হয়নি। অপরদিকে বিকেবির দুর্বল আইটি ব্যবস্থাপনার কারণে গত বছর ১২ দিন ধরে সাইবার হ্যাকার গ্রুপ অনায়াসে ব্যাংকের সংবেদনশীল আর্থিক রেকর্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়। নবম, বিকেবি কর্তৃক ৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা শ্রেণিকৃত ঋণ গোপন করায় ব্যাংকটির প্রভিশন-ঘাটতি ন্যূনপক্ষে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা হবে। কিন্তু রাকাবের কোনো প্রভিশন ঘাটতি নেই।
দশম, রাকাব দেশের একমাত্র ব্যাংক, যার প্রধান কার্যালয় রাজধানী ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে অবস্থিত। ব্যাংকটির নামের শুরুতে ‘রাজশাহী’ শব্দটি সংযুক্ত থাকায় রাকাব রাজশাহীর ঐতিহ্যের একটি অংশ এবং বিষয়টি এতদঞ্চলের মানুষের কাছে স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। একাদশ, রাকাব-বিকেবি একীভূত হওয়ার ফলে রাজশাহীতে অবস্থিত রাকাবের প্রধান কার্যালয় বন্ধ হলে রাজশাহীতে কর্মরত ব্যাংকটির প্রায় ৩০০ কর্মকর্তার পদ শূন্য হবে। এতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাসহ পুরো রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হবে।