[ অনলাইন ] 05/05/2024 |
|
|
|
ঋণের প্রলোভনে ফেলে কোটি টাকা নিয়ে উধাও |
|
|
চট্টগ্রামের রাউজানে অন্তত কয়েকশ মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘ডিপ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি এনজিওর বিরুদ্ধে। সহজ শর্তে ঋণ নেওয়ার যে আশায় টাকা সেখানে জমা দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ, প্রতারকচক্রটি পালিয়ে যাওয়ায় সেই আশা যেন গুড়েবালি হয়েছে তাদের।
পঞ্চাশোর্ধ্ব কৃষক মো. আলম লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুটি গরু কিনতে চেয়েছিলেন। গরু দুটি লালন-পালন করে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। ডিপ ফাউন্ডেশনের ঋণ দেওয়ার খবর পেয়ে নিজের সঞ্চিত ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন এক লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য। পূর্ব নির্ধারিত তারিখে ওই এনজিওর নোয়াপাড়াস্থ কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন সাইনবোর্ড আর অফিসের বাইরে একটি তালা ছাড়া আর কেউ নেই। পরে জানতে পারেন, তার মতো শত শত মানুষের লাখ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে কথিত ওই ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টরা। শুধু তিনি নন, তার মতো রাউজানের অন্তত কয়েকশ মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতারকচক্রটি।
জানা যায়, রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন খালেদা বেগমের বহুতল ভবনের তৃতীয় তলায় চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নেন প্রতারকচক্রের দুই সদস্য ও ডিপ ফাউন্ডেশনের ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার এবং পরিচালক পরিচয়দানকারী নার্গিস আকতার ও মো. আলম মিয়া। ভাড়া নেওয়ার ১০-১৫ দিন পর তালা লাগিয়ে হঠাৎ পালিয়ে যান তারা। এর পর থেকে ঋণের টাকা নেওয়ার জন্য টাকা জমাদানকারী ব্যক্তিরা ওই ভবনের সামনে ভিড় করছেন। বাড়ির মালিক খালেদা আকতার এনজিও সংস্থার সাইনবোর্ডটি সরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত ছুটে যাচ্ছেন সেখানে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাউজান উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কয়েকশ মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে পলিয়ে গেছে প্রতারকচক্রটি। বিনাজুরী ইউনিয়নের ক্তভোগী মো. ইউসুফ বলেন, আমাকে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার শর্তে আমি ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। যেদিন ঋণের টাকা দেওয়ার কথা, সেদিন অফিসে গিয়ে দেখতে পাই দরজায় ঝুলছে তালা। বন্ধ পাওয়া যায় এনজিও সংস্থাটির লোকজনের মুঠোফোনও। একই এলাকার মনির উদ্দিন ব্যবসা করতে ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য দিয়েছিলেন ৪০ হাজার টাকা, সাদ্দাম হোসেন মোবাইল বিক্রি আর ধার-দেনা করে দেন ১০ হাজার টাকা এবং ৬ জন মিলে ৫৩ হাজার টাকা জমা দেওয়ার কথা জানান ভুক্তভোগী এক সিএনজিচালকও।
এ ছাড়া ফটো বেগম নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি অশিক্ষিত মানুষ তাই শিক্ষিত যুবক মনিরকে নিয়ে সেখানে যাই। সবাই মিলে প্রায ৮০ হাজার টাকা জমা দিই। পরে জানতে পারি আমার টাকাসহ ওরা পালিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে নেয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন খালেদা মঞ্জিলের স্বত্বাধিকারী বলেন, আমার কাছ থেকে বাসাভাড়া হিসেবে মাসিক ৭ হাজার টাকা করে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে ভাড়া নিয়েছিল। আমি একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রও জমা রেখেছি। ভাড়া নেওয়ার সপ্তাহের মধ্যে তারা উধাও হয়ে যায়। আমি শহরে থাকি, পরে জানতে পারি এনজিও সংস্থার পরিচয়ে কিছুসংখ্যক লোক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা জমা দেওয়ার আগে কেউ আমাকে জানায়নি।
নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, এনজিও সংস্থার লোক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার কয়েকজন আমার কাছে এসেছিলেন। তাদের কাছে কোনো প্রকার ডকুমেন্ট ছিল না। তবে যেখানে অফিস ভাড়া নিয়েছিল, সেটি ভাড়া বাসা ছিল। কোনো ডকুমেন্ট ছাড়া কীভাবে তারা টাকা জমা দিয়েছিল, সেটি আমার বুঝে আসছে না। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে কেউ আসেনি। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কিনা ডিউটি অফিসারের কাছ থেকে জানতে হবে।’
|
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|