Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
রিটার্ন দেয় না অ্যাপল গ্যাজেট ভ্যাট ফাঁকি ৪৭ কোটি টাকা [ পাতা ১ ] 05/05/2024
রিটার্ন দেয় না অ্যাপল গ্যাজেট ভ্যাট ফাঁকি ৪৭ কোটি টাকা
অনলাইন ও শোরুম দুভাবেই বিক্রি হচ্ছে আইফোন, ম্যাকবুক। বিক্রি হচ্ছে ব্র্যান্ডের সব মোবাইল ফোন। শুধু ফোন নয়, বিক্রি হচ্ছে ফোনের সামগ্রী, ডিজিটাল সব ডিভাইস। প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা বিক্রিও করে। কিন্তু কখনও রিটার্ন (দাখিলপত্র) দেয় না। দেয় না মোবাইল ফোন, মোবাইল অ্যাকসেসরিজ, কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস সামগ্রীর ওপর ভ্যাট। প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ খাতে ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি ৮৮ টাকা বা ৪৭ কোটি টাকা, যা সুদসহ প্রায় শতকোটি টাকা ছুঁবে। বিপুল পরিমাণ এই ভ্যাট ফাঁকি দেয়া প্রতিষ্ঠানটি হলো অ্যাপল গ্যাজেট লিমিটেড।

ভ্যাট ফাঁকির মামলার পর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। ভ্যাট কর্মকর্তারা বলছেন, কোটি কোটি টাকা বিক্রির পরও প্রযোজ্য ভ্যাট দেয় না। বিক্রি গোপন করতে মাসিক দাখিলপত্রও দেয় না। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ভ্যাট ফাঁকি, মামলা ও অভিযানের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

এনবিআর সূত্রমতে, অ্যাপল গ্যাজেট মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির ওপর ভ্যাট পরিশোধ করছে না। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি মাসিক দাখিলপত্র (রিটার্ন) দেয় না বলে অভিযোগ পায় এনবিআর। বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট গ্রিন রোডের জেআইআর হেরিটেড ভবনে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেন ভ্যাট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছে মূসক-সংক্রান্ত দলিলাদি ও দাখিলপত্র চাইলে তা দেখাতে ব্যর্থ হন তারা। পরে ভ্যাট অনলাইন সার্ভারে অ্যাপল গ্যাজেটের দাখিলপত্র সার্চ (তল্লাশি) করেও কোনো দাখিলপত্র পাননি ভ্যাট কর্মকর্তারা। ভ্যাট কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সহায়তায় কম্পিউটার থেকে প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য নেয়া হয়। এছাড়া ‘হ্যান্ড ক্যারি’ নামে একটি ফাইল থেকে প্রতিষ্ঠানের দুবাই থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার ডিভাইসের আমদানির তথ্য নেয়া হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের জিমেইলের গুগল ড্রাইভ থেকে প্রতি মাসের বিক্রির তথ্য নেয়া হয়, যাতে প্রতিষ্ঠানে সব ব্রাঞ্চভিত্তিক বিক্রয় তথ্য ছিল। এসব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি পায় ভ্যাট গোয়েন্দা। পরে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রতিবেদন পাঠানো হয় ভ্যাট ঢাকা পশ্চিম কমিশনারেটে। কমিশনারেট সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকে মোবাইল ফোনের ওপর অব্যাহতি সুবিধা সরকার বাতিল করেছে। সে অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের আগে অ্যাপল গ্যাজেটের সব শাখার হিসেব একসঙ্গে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর চার মাসে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ভ্যাটযোগ্য পণ্য বিক্রি করেছে ১৬৬ কোটি ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬১ টাকার। যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট ৭ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৯ টাকা।

প্রতিবেদনে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার সামগ্রীর ওপর ভ্যাট বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার সরবরাহের ওপর শর্ত সাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে এনবিআর। শর্ত পরিপালন করলেই কেবল অব্যাহতি সুবিধা পাওয়া যাবে। শর্তের মধ্যে রয়েছেÑপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত দাখিলপত্র বা ভ্যাট রিটার্ন দাখিল, মূসক চালান ইস্যু করা, মূসক-সংক্রান্ত হিসাব পুস্তক সংরক্ষণ করা। তবে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠান কোনো দাখিলপত্র দেখাতে পারেনি। ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমেও প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন দাখিলের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠান কোনো মূসক চালান ইস্যু করে না। শর্ত পরিপালন না করায় প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রির ওপর ভ্যাট দিতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাপল গ্যাজেট মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার ছাড়াও বেশ কিছু পণ্য বিক্রি করে। এসব ডিজিটাল ডিভাইস বা পণ্যের ওপর ভ্যাট দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত ৯ কোটি ৮৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬১ টাকা  সামগ্রী বিক্রি করেছে, যাতে প্রযোজ্য ভ্যাট ৪৬ লাখ ৮২ হাজার ৫৪১ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছর মোবাইল ফোনের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। আবার কম্পিউটার বিক্রয়ের ওপর সরবরাহ পর্যায়ে অব্যাহতি থাকলেও শর্ত পরিপালন না করার সব বিক্রয়কে একীভূত করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার, সামগ্রী বিক্রি করেছে ১৬১ কোটি ৬৮ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৭ টাকার। এর ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৮ কোটি ৮ লাখ ৪৩ হাজার ২৭১ টাকা। আবার ভ্যাট কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থেকে ‘অর্ডার ও কুরিয়ার’ নামে চারটি ফাইল পেয়েছে। যাতে প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত চার বছরে কুরিয়ার ও পিকআপের মাধ্যমে যেসব পণ্য বিক্রয় করেছে, তার তথ্য রয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত কুরিয়ার ও পিকআপের মাধ্যমে বিক্রি করা পণ্যে ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার ৬০২ টাকা।

প্রতিবেদনে উৎসে মূসক বিষয়ে বলা হয়েছে, লিমিটেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেবা গ্রহণ বা পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে উৎসে মূসক কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে বলে এনবিআরের আদেশ রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কোনো উৎসে মূসক কর্তন করেনি। অ্যাপল গ্যাজেট ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ২৫৯ কোটি ৬৯ লাখ ১৩ হাজার ৬৫৩ টাকার পণ্য ক্রয় করেছে। এর ওপর মূসক কর্তন করা হয়নি ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৫ টাকার। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানটির ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি খাতে মোট ৪৬ কোটি ৮৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮ টাকা (সুদ ছাড়া) ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার বিক্রয়, অন্যান্য পণ্য বিক্রয়, শোরুমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়, কুরিয়ার ও পিকআপের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় ও উৎসে কর্তন। তবে সুদসহ ফাঁকির পরিমাণ শত কোটি টাকার কাছাকাছি যাবে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। ভ্যাট গোয়েন্দা অ্যাপল গ্যাজেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ভ্যাট ঢাকা পশ্চিম কমিশনারেটকে মামলার প্রতিবেদন দিয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে ভ্যাট কমিশনারেট।

অন্যদিকে, অ্যাপল গ্যাজেটের প্রধান কার্যালয়ে ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান সম্পর্কে জানেন না বলে শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম। এমনকি ভ্যাট গোয়েন্দা যে মামলা করেছে, ভ্যাট পশ্চিম কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে, তাও জানেন না তিনি। তিনি বলেন, মামলা হয়েছে কিনা, ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে কিনা আমি খোঁজ নিয়ে জানাব। মামলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাপল গ্যাজেট কখনও রিটার্ন দেয়নি। প্রশ্ন করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমাদের তো মার্কেট থেকে প্রতি মাসে ভ্যাটের লোকজন এসে সেলের ওপর ভ্যাট নিয়ে যায়। রিটার্ন দেব না কেন? বসুন্ধরা সিটিতে ভ্যাট না দিয়ে থাকা যায়? অ্যাপল গ্যাজেট পাঁচটি খাতে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেÑএই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শরিফুল ইসলাম বলেন, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমাদের তো আলাদা আলাদা শোরুম, আলাদা আলাদা মালিক। আমরা তো ফ্র্যাঞ্জাইজি। আপনাদের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান করল, কাগজপত্র জব্দ করল, মামলা করল, কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করলÑএরপরও আপনি জানেন নাÑপ্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি কথা বলে জেনে আপনাকে জানাব। তবে পরে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে, এ বিষয়ে এনবিআরের একজন সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, আইফোন ও আইফোনের সামগ্রী, কম্পিউটার, সব ব্র্যান্ডের সব ও ফোনের অ্যাকসেসরিজ, ডিজিটাল সব ডিভাইস বিক্রি করে অ্যাপল গ্যাজেট। প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন বড় হচ্ছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট রিটার্ন দেয় না। ভ্যাট কর্মকর্তাদের অভিযানে দেখা গেছে, প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট দেয়ার রেকর্ড নেই। পাঁচ খাতে সুদবাদে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের ক্রেতাদের মধ্যে সাধারণ ক্রেতার সংখ্যা কম। ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে ভ্যাট কমিশনারেট কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ১১০০০ বাংলাদেশিকে দ্রুত ফেরত পাঠাচ্ছে বৃটেন
• যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
• চার বিভাগে আরো দুইদিন থাকবে তাপপ্রবাহ
• শনিবার থেকে আবারো বৃষ্টি, কমে যাবে গরম!
• ১০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য
• দেশে ব্যাংক একীভূতকরণে সুশাসন নিশ্চিত জরুরি
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved