Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের কোটি টাকা হাতিয়ে পালালেন জুলকারনাইন [ অনলাইন ] 05/05/2024
চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের কোটি টাকা হাতিয়ে পালালেন জুলকারনাইন
চট্টগ্রামের জুলকারনাইন মোহাম্মদ আরিফুর রহমান (৪৫)। জড়িত ছিলেন রয়েল সিমেন্টের বিক্রয় ও বিপণনের সঙ্গে। কিন্তু নিজেকে পরিচয় দিতেন রয়েল সিমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে। এই পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে দিতেন হুমকি, হামলার ধমকি। তবে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছেন এক ব্যবসায়ী।

ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ। এদিকে রয়েল সিমেন্টের নাম ভাঙিয়ে জুলকারনাইন যে প্রতারণা করত, বিষয়টি বুঝতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটিও। এমন অভিযোগ স্বীকার করে তাকে বিক্রয় ও বিপণনের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শুধু জুলকারনাইনই নয়, চট্টগ্রামে সম্প্রতি রেড়েছে ঋণখেলাপি ও ব্যবসায়ীর টাকা আত্মসাতের আরও অনেক ঘটনা। সবকিছু আমলে নিয়ে দ্রুত এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ বিশেষজ্ঞদের। আর না হয়, এমন ঘটনা বাড়তেই থাকবে-নিঃস্ব হবে অসহায়রা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর এলাকার জে এন মুজিবুর রহমানের ছেলে জুলকারনাইন মোহাম্মদ আরিফুর রহমান (৪৫)। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নামে বেনামে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। রয়েল সিমেন্টের ডিলার নিয়ে দেওয়া, ব্যবসায় বিনিয়োগ করা প্রলোভনে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামে অনেক ঋণ খেলাপি রয়েছে। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হয়েছে মামলাও। রয়েছে অনেক মামলা বিচারাধীন। টাকা পরিশোধের মাধ্যমে অনেক মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কালবেলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে জুলকারনাইনের অনেক প্রতারণার তথ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোতোয়ালি এলাকার এক সিমেন্ট ব্যবসায়ী কালবেলাকে বলেন, আমি দেশের নামকরা অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ডিলার। বহু বছর ধরেই তাদের পণ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার কাছে আসে জুলকারনাইন। তিনি নিজেকে রয়েল সিমেন্টের বড় কর্মকর্তা পরিচয় দেন। বলেন, মীরসরাইয়ের একটি প্রকল্পে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও বিনিয়োগ সংগ্রহ করছি। আপনি চাইলে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। নানাভাবে আমাকে প্রলোভনে ফেলে আমার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। পরে জানতে পারি তিনি অফিসার না, একজন সাধারণ বিক্রয়কর্মী।

একই অভিযোগ কোতোয়ালির আরেক ব্যবসায়ীর। তবে তিনি মামলা-মোকাদ্দমায় জড়াতে চান না বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জুলকারনাইন আমাকেও নানাভাবে প্রলোভন দেখান। হাতিয়ে নেন ২০ লাখ টাকা। ডিলার দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন বলেছেন, কিন্তু তা পারেননি। এই টাকা আজ না হয় কাল দিবেন বলে শুধু ঘুরাচ্ছেন। আমি তার শাস্তি চাই। কিছু বললেই তিনি নানাভাবে আমাকে হুমকি-ধমকি দেন। কল রিসিভ করেন না।

জানা যায়, চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সম্প্রতি একটি চেক ডিস অনার মামলা দায়ের করেন জুযার মোহাম্মদ হোসেইন। তার অভিযোগ, পাওনা ২৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাতের চেষ্টা চালায় জুলকারনাইন মোহাম্মদ আরিফুর রহমান (৪৫) নামে আরেক ব্যবসায়ী। প্রথমে ভালো সম্পর্ক থাকলেও পরে নানা কৌশলে এই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান তিনি।

জুযার মোহাম্মদ হোসেইন চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার এনায়েত বাজার এলাকার মোহাম্মদ হোসেইনের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শামসুল আলম (পাটোয়ারী)।

কালবেলাকে তিনি বলেন, জুলকারনাইন মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের সঙ্গে ব্যবসায়ীক ও আর্থিক লেনদেন ছিল জুযার মোহাম্মদ হোসেইনের। তিনি জুলকারনাইন মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের কাছে ২৫ লাখ টাকা পেতেন। কিন্তু কোনোভাবেই এই টাকা তিনি পরিশোধ করছিলেন না। যতবারই টাকা চাওয়া হত তিনি আজ নয় তো কাল দেবেন বলে ঘুরাতেন। শেষ পর্যন্ত গেল জানুয়ারির ৩ তারিখ জুযার মোহাম্মদ হোসেইনকে ২৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন জুলকারনাইন। এই টাকা নগদে উত্তোলন করতে ওই দিনই নগরের ওআর নিজাম রোড এলাকার মার্কেন্টাইল ব্যাংকে যান জুযার মোহাম্মদ হোসেইন। কিন্তু টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন জুলকারনাইনের একাউন্টে কোনো টাকাই নেই। পরে তার অনুরোধে তখনই মামলা করেননি জুযার মোহাম্মদ হোসেইন। কথা ছিল, চেকে নয়, নগদেই দেবেন টাকা। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও এই টাকা আর পরিশোধ করেননি তিনি। চেয়েছিলেন আত্মসাৎ করতে। এই কারণেই ১৬ জানুয়ারি একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ না করায় গেল ২৩ জানুয়ারি তা ফেরত আসে। পরে চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চেক ডিসঅনার (এনআই এক্ট) মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও অনেকজনের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে জুলকারনাইন মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের এমন প্রতারণার খবরের সত্যতা পেয়েছে রয়েল সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, জুলাকারনাইন মো. আরিফুর রহমান এক বছর ধরে রয়েল সিমেন্টের বিক্রয় ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত নেই। অতএব তার সঙ্গে সিমেন্ট ক্রয় বিক্রয়সংক্রান্ত কোনো ধরনের লেনদেন না করার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে রয়েল সিমেন্ট ক্রয় বিক্রয়সংক্রান্ত অর্থ লেনদেনের দায়ভার রয়েল সিমেন্ট লিমিটেড বহন করবে না।

জানা যায়, এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এরপর থেকেই পলাতক রয়েছেন জুলকারনাইন। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে জুলকারনাইনের নম্বরে কয়েকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে কোতোয়ালি থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আদালত থেকে অনেকগুলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রায় সময় আসে। এর মধ্যে অর্থ ঋণসহ বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসে। কোনটা কার, এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে এমন কোনো কাগজ আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামে বেড়েছে ঋণ খেলাপি ও আত্মসাতের ঘটনা বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বেড়েছে ঋণ খেলাপি ও ব্যবসায়ীর টাকা আত্মসাতের ঘটনা। শুধু জুলকারনাইন মোহাম্মদ আরিফুর রহমানই নয়, বড় বড় অনেক ব্যবসায়ী এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন খোদ বিভিন্ন ব্যাংকের ম্যানেজার-মালিকপক্ষও।

সম্প্রতি ‘ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি’র পক্ষ নিয়ে ‘বেআইনি’ আবেদন করায় পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারেক রিয়াজ খানকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের অর্থ ঋণ আদালত। চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।

আদালত নথি সূত্রে জানা যায়, একজন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিকে আইনের শর্ত পূরণ ছাড়া জামিনের এবং সম্পত্তি অবমুক্ত করায় আবেদন করায় পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবরে আদেশ পাঠানো হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ৯ মে এর মধ্যে পদ্মা ব্যাংক এমডিকে লিখিত জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতের নথি সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ব্যাংকের ৮৮ কোটি টাকার ঋণ খেলাপির দায়ে চট্টগ্রামের জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদের পক্ষে বাদী ব্যাংক যৌথভাবে আবেদন করলে আদালত এ নির্দেশ দেন। আবেদনে বিবাদীর বিরুদ্ধে ইস্যু করা ওয়ারেন্ট রিকল এবং সম্পত্তি জব্দের আদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোনো লিখিত মঞ্জুরিপত্র ছাড়া বিবাদীর পক্ষে দরখাস্ত করায় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, ‘অর্থ ঋণ আদালত আইনের ৩৪ (৬) ধারা অনুযায়ী, ৮৮ কোটি টাকার ২৫ শতাংশ হিসেবে ২২ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় এবং তারিখবিহীন চেক গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ডিক্রিদার পদ্মা ব্যাংকের যৌথ দরখাস্ত না মঞ্জুর করেন আদালত।’

এর আগে ২০২৩ সালে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চট্টগ্রামের শীর্ষ ৫৪ ব্যবসায়ী ও শিল্প গ্রুপের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৪৬ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। এই টাকা আদায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেনাদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে জানানো হয়। আদালত থেকে খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। এরপরও পাওনা পরিশোধ করছে না তারা, রহস্যজনক কারণে গ্রেপ্তারও হচ্ছে না।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ৫২৩ হজযাত্রীর টাকা নিয়ে উধাও ২ এজেন্সি মালিক
• দুবাইয়ে ৫৩২ বাংলাদেশির সম্পত্তি, কী বলছে দুদক
• মানব পাচার নিয়ন্ত্রণ করে ৭০ সিন্ডিকেট
• উপাচার্যের দুই ছেলে ও ভাগনির চাকরি, ভাড়ায় চলে স্ত্রীর গাড়ি
• শারজাহ থেকে আসা যাত্রীর শরীরে মিললো সাড়ে চার কোটি টাকার সোনা
• টেকনাফ ও রামুতে ৪ কেজি আইস উদ্ধার
• সিলেটে টাকা নিয়ে লাপাত্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারী
• শারক্বিয়ার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী গ্রেপ্তার
• অনলাইনে সক্রিয় কিডনি কেনাবেচার দালালচক্র
• ৫২৩ হজযাত্রীর টাকা নিয়ে উধাও দুই এজেন্সি
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved