Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পাবে কারা [ অনলাইন ] 05/05/2024
মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পাবে কারা
স্পষ্ট নীতিমালা দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক
দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। দুর্বল হয়ে পড়ছে অন্তত ১৫টি ব্যাংক। আর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি ছাড়া সবই রুগণ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে দুটি ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ বা খারাপ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এখনো কোনো নীতিমালা হয়নি। ব্যাংকের মন্দ তালিকায় থাকা সম্পদ (ঋণ) কিনে নেওয়ার জন্য আলাদা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির (সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান) কথা বলা হলেও এ বিষয়ে কোনো আইনি কাঠামো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বলছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ও নন-পারফর্মিং ঋণ আদায়ে ২০২০ সালে শতভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ গঠন আইন করার উদ্যোগ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ কোম্পানি করার পক্ষে নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ওই আইন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট কোম্পানি গঠিত হলে তারা নিজস্ব ক্ষমতাবলে খেলাপি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি লিজ গ্রহণ ও বিক্রি করে অর্থ আদায় করবে। পাশাপাশি খেলাপির রুগণ ব্যবসা দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেবে। প্রয়োজনে অর্থ আদায়ের জন্য দখলে নিতে পারবে ঋণের বিপরীতে দেওয়া জামানতের সম্পত্তি। এ ছাড়া ক্রয় করা ঋণের গুণগত মান বিবেচনায় নিয়ে তা পুরোপুরি বা আংশিক শেয়ারে রূপান্তরের ক্ষমতা থাকবে এ কোম্পানির।

এর আগে ২০১৬ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত খেলাপি ঋণ আদায়ে ‘ডেট রিকভারি এজেন্ট’ কোম্পানি গঠনের লক্ষ্যে আইনের খসড়া প্রণয়ন করেন। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানে এজেন্ট থাকার তথ্য তুলে ধরে কোম্পানি গঠনের বদলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় ঋণ আদায়ে এজেন্ট নিয়োগের পক্ষে মত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি একই বিষয়ে উল্টো মত দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। ফলে সে সময় উদ্যোগটি আলোর মুখ দেখেনি।

তবে নানা সংকট আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের কারণে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কারণ আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে খেলাপি ও নন-পারফর্মিং ঋণ বিক্রি করে দায় মুক্তি চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে বেসরকারি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি হচ্ছে, এশিয়ার দেশগুলোয় সরকারি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে বেশ সফল। তাই সরকারকে অর্থ ঝুঁকিতে না ফেলে বেসরকারি মালিকানায় দেওয়ার পক্ষে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘ভারতে সরকারি এবং বেসরকারি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি রয়েছে। সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পারফরম্যান্স ভালো নয়। ইউরোপে সবই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বেসরকারি হওয়া ভালো।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান এবং ফিলিপাইনে খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করেছে। এই সাতটি দেশ বড় অঙ্কের শ্রেণীকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ খুব সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার খেলাপি ঋণের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। তখন দেশটির ব্যাংক খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৫০ শতাংশই ছিল খেলাপি। কিন্তু ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ দেশটির খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশে নেমে আসে।

এদিকে ব্যাংক ঋণ আদায় বা ব্যবস্থার সুযোগ না থাকলেও দেশে বর্তমানে ৬৫টি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আওতাধীন এসব প্রতিষ্ঠান মূলত পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ তহবিল (মিউচুয়াল ফান্ড) গঠন ও পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে রেইস, এলআরবি গ্লোবাল ও আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানগুলো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করে। সেই অর্থ দিয়ে পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। এর মধ্য দিয়ে অর্জিত মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। তবে বিএসইসি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তাবিত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে পুঁজিবাজারে সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্থক্য জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যেই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কথা বলছে, এগুলো সে রকম নয়। ওই কোম্পানি হবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ও নন-পারফর্মিং ঋণ আদায়ের জন্য। বিএসইসি যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে, সেগুলো মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার জন্য।’

ঋণ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ধরা যাক, একটি ব্যাংকের ১০০ টাকার মন্দ ঋণ আছে। সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ৬০ বা ৭০ টাকায় সেই ঋণ কিনে নেবে। এরপর তারা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পুরো ঋণটা আদায় করবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের কোম্পানি আছে। আর বিএসইসি যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে, তাদের ব্যাংকের ঋণ আদায়ের সক্ষমতা নেই। এটা করতে হলে তাদের আইন করে ক্ষমতা দিতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘বিএসইসির অধীনে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান। ওই অর্থে সেগুলো সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যে ধরনের কোম্পানির কথা বলছে, সেটার জন্য আলাদা আইন হওয়ার কথা রয়েছে।’

অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আইনে যা আছে: ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক কোম্পানি গঠনের লক্ষ্যে ২০২০ সালে একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছিল সরকার। সেখানে বলা হয়, ‘এই কোম্পানি হবে শতভাগ সরকারি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এর অনুমোদিত মূলধন হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ৫০০ কোটি সাধারণ শেয়ারে ভাগ করা হবে। আর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে উভয় মূলধনের পরিমাণ সরকার বাড়াতে পারবে।’

খসড়া অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদমর্যাদার সাবেক কোনো কর্মকর্তা বা ব্যাংকিং পেশায় ২৫ বছরের অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তি। শর্তসাপেক্ষে সরকার চুক্তিভিত্তিক চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবেন। যিনি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ও নন-পারফর্মিং জামানতি ঋণ, অগ্রিম ঋণ ও ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত অর্থ কিনতে ও বেচতে পারবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কেনার পর তা সংরক্ষণ, ঋণ আদায়, গ্রহীতাকে পরামর্শ দেওয়া ও ব্যবসা পরিচালনায় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে পারবে। এ ছাড়া খেলাপি ও নন-পারফর্মিং ঋণ ক্রয়-বিক্রয়ের লক্ষ্যে ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম গঠন, একটি ঋণ ক্রয়-বিক্রয়ের প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি, প্রসার ও উন্নয়ন করার উদ্যোগ নেবে এ কোম্পানি। এ ছাড়া ঋণখেলাপির সম্পত্তির নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা করতে পারবে।

এ আইনে বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কোনো ঋণখেলাপির প্রতিষ্ঠান রুগণ হলে তা আধুনিকায়ন, বিস্তার ও প্রতিস্থাপনের (বিএমআরই) বিষয়ে পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণ এবং ‘সরকারি রিসিভার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ক্ষমতা রাখবে। আর কোনো ঋণখেলাপির প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হলে তা শনাক্ত ও সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

যে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে এ কোম্পানি সরকারের অনুমোদনক্রমে পুঁজি বা অনুদান সংগ্রহ করতে পারবে। পাশাপাশি দেশের শেয়ারবাজারে বন্ড বা ডিবেঞ্চার ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করার বিধান থাকছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারী বা ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির ফান্ড সংগ্রহ করলে আইনের অধীনে জেনারেল পার্টনার হিসেবে বিবেচিত হবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
• অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবসায়িক অগ্রগতি বিষয়ক সভা
• জেনেক্স ইনফোসিসের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চুক্তি
• কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিল সাউথইস্ট ব্যাংক
• কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
• অগ্রণী ব্যাংকে ব্যবসায়িক অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা সভা
• কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
• অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবসা উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত
• ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ
• অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবসা উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved