গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আলোচিত দুই মামলার আসামিরা। তাদের একজনের বিরুদ্ধে হত্যা এবং অন্যজনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে মামলা রয়েছে।
অভিযুক্ত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন– গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাকিল আলম।
এই দুই প্রার্থীই দাবি করেন, তারা মামলায় জামিনে রয়েছেন। কিন্তু এ-সংক্রান্ত আদালতের কোনো কাগজপত্র কিংবা নির্দেশনা দেখাতে পারেননি। আগামী ২১ মে এ উপজেলায় ভোট হবে। তারা পুরোদমে প্রচারকাজ চালাচ্ছেন। তবে জনগণ এতে উষ্মা প্রকাশ করেছে।
আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২২ কোটি টাকার দুর্নীতির একটি মামলা করে। মামলাটির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। দুদক রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এ মামলার অভিযোগপত্র কমিশনে পাঠানো হয়। পরে কমিশন কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়। শিগগির আবার প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
অভিযোগ রয়েছে, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে আব্দুল লতিফসহ ১৬ ইউপি চেয়ারম্যান কবরস্থান, মসজিদ ও ধর্মীয় সভার জন্য বরাদ্দের ৫ হাজার ৮২৩ টন চাল আত্মসাৎ করেন। এর আনুমানিক বাজারদর ছিল ২২ কোটি টাকা।
দুদকের হোসাইন শরিফ বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের দুই প্রার্থী আব্দুল লতিফ ও শাকিল আলমের নাম রয়েছে।
আব্দুল লতিফ নির্বাচনী হলফনামায় তিনটি মামলার কথা উল্লেখ করলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করেননি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সব ধরনের মামলার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেছি। কোনো তথ্যই গোপন করিনি। দুদকের মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যজন গোবিন্দগঞ্জে বহুল আলোচিত সাঁওতাল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি শাকিল আলম। সিআইডি এবং দুদকের দেওয়া চার্জশিটে নাম রয়েছে তাঁর।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৯ জন পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ ও চারজন সাঁওতাল গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন সাঁওতাল মারা যান।
এ ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা করেন। এর আগে থোমাস হেমব্রম নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে অন্য একটি মামলায় চিনিকলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করেন।
হাইকোর্টের নির্দেশে দুটি মামলারই তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর গাইবান্ধা ইউনিটের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল হাই গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে ৯০ জনকে আসামি করা হয়।
তবে মামলার বাদী থোমাস হেমব্রম অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে অধিকতর তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডিও ২০২০ সালের ২ নভেম্বর আদালতে একই ধরনের অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাচনে এবার দু’জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। তারা উভয়ই হলফনামায় তাদের সব ধরনের তথ্য দিয়েছেন। আদালত থেকে কমপক্ষে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত না হলে আমাদের কিছুই করার নেই।
অভিযুক্ত শাকিল আলম বলেন, ‘মামলার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেছি। আদালতে বিচারাধীন এসব মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
অভিযুক্ত দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ্ বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের থানায় কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। পরোয়ানা ছাড়া আমাদের অভিযান কিংবা গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নেই। তবে তিনি স্বীকার করেন, জামিনের কোনো কাগজও থানায় জমা দেওয়া হয়নি।