[ অনলাইন ] 07/05/2024 |
|
|
|
গোদাগাড়ী-তানোরের দুই প্রার্থীর সম্পদের উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন |
|
|
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় ভোট হতে যাচ্ছে আগামী ৮ মে। রাজশাহী-১ আসনভুক্ত দুই উপজেলায় সাতজন লড়ছেন চেয়ারম্যান পদে। এর মধ্যে গোদাগাড়ীতে পাঁচ এবং তানোরে দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গোদাগাড়ী উপজেলার প্রার্থী বেলাল উদ্দীন সোহেলের সম্পদ পাহাড় সমান। তাঁর সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও অর্থসম্পদই তাঁকে নির্বাচনী প্রতিযোগিতার সম্মুখভাগে নিয়ে এসেছে। এদিকে আয় ও সম্পদের দিক থেকে আলোচনায় পিছিয়ে নেই অন্য প্রার্থী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। গত পাঁচ বছরে তাঁর সম্পদ অনেক বেড়ে যাওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সীমান্ত এলাকা গোদাগাড়ী মাদক পাচারের অন্যতম রুট। এ ছাড়া এই রুট দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় পণ্য দেশে আসে। রাজশাহী জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতি মাসে যে মাদক উদ্ধার করে, তার বড় অংশ এই উপজেলা থেকেই উদ্ধার হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালন চক্রের সঙ্গে স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি জড়িত। এরই মধ্যে তাদের অনেকেই শূন্য থেকে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে গেছেন। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।
গোদাগাড়ীতে পাঁচজন প্রার্থী হলেন– বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক সুনন্দন দাস রতন, উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগকারী দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দীন সোহেল এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুববিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনী। তানোর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী হলেন– বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, সাত প্রার্থীর মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দীন সোহেল বিপুল অর্থসম্পদের মালিক। তাঁর হঠাৎ বাপুল অর্থসম্পদের মালিক হওয়া নিয়ে এরই মধ্যে রাজশাহীর রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়েছে। সোহেলের আয় এবং সম্পদের ধারেকাছেও নেই অধিকাংশ প্রার্থী। এসএসসি পাস সোহেলের পেশা হিসেবে দেখানো রয়েছে আমদানি-রপ্তানিকারক এবং মৎস্য চাষি। তাঁর নগদ টাকা ১ কোটি। এ ছাড়া রয়েছে ৪৯ বিঘা কৃষি ও অকৃষি জমি এবং রাজশাহীর অভিজাত আবাসিক এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন কাঠার ওপর নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন। অর্জনকালীন এসব সম্পদের বাজার মূল্য দেখান হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। রয়েছে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়ি। এ ছাড়া সোহেলের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ৮৩ লাখ টাকা এবং মৎস্য খাত থেকে আয় দেখানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ টাকা। এর বাইরে সাড়ে ৪ লাখ টাকার ওপরে আয় করেন কৃষি খাত থেকে। তবে সোহেল দেনা দেখিয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৯৮ লাখ টাকা ব্যবসায়িক দেনার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এসব বিষয়ে জানতে সোহেলকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রচারণায় আছি। এ বিষয়ে এখন কথা বলতে পারব না।’
এদিকে গোদাগাড়ী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের পাঁচ বছর আগের হলফনামায় কোটির অঙ্কে কোনো হিসাব না থাকলেও এবারের হলফনামায় দেখা গেছে, তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এমএসসি পাস জাহাঙ্গীর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৪ লক্ষাধিক টাকা। তাঁর কাছে নগদ টাকা ১০ লাখ এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক পরিসম্পদ রয়েছে ৪ কোটি ৩৪ লক্ষাধিক টাকার। রয়েছে ৪৬ বিঘা কৃষি জমি। গবাদি পশু পালনে বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি ১০ লক্ষাধিক টাকা এবং মৎস্য খামারে বিনিয়োগ ২০ লক্ষাধিক টাকা। পাশাপাশি স্ত্রী-সন্তানের নামেও করেছেন কৃষি ও অকৃষি জমি, মার্কেটসহ অ্যাপার্টমেন্ট। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যবসায়িক সম্পদ রয়েছে ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। অথচ পাঁচ বছর আগে জাহাঙ্গীরের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই সময় তাঁর সম্পদ বলতে ছিল ৫০ লক্ষাধিক টাকার কৃষি ও অকৃষি জমিসহ একটি মার্কেট। বার্ষিক আয় ছিল ১৯ লক্ষাধিক টাকা। বর্তমানে জাহাঙ্গীরের বিভিন্ন ব্যাংকে দেনা রয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার সব সম্পদের বিবরণ আয়কর রিটার্নসহ হলফনামায় দেওয়া আছে। এর বাইরে আমার কোনো সম্পদ নেই। আমার অর্থ ও সম্পদ সবই ব্যবসা করে অর্জন করা।’
গোদাগাড়ীর চেয়ারম্যান প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী সুনন্দন দাস এইচএসসি পাস। বার্ষিক আয় ৭ লক্ষাধিক টাকা। নগদ অর্থ রয়েছে ৬৭ লক্ষাধিক টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা আছে প্রায় ৮ লাখ টাকা সমমূল্যের। এ ছাড়া ২ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে সঞ্চয়পত্র ও আমানতে। এমনকি স্ত্রীর নামে রয়েছে দেড় কোটি টাকার বেশি অর্থ, যা তিনি নগদসহ বৈদিশ মুদ্রা, সঞ্চয়পত্র ও আমানতে বিনিয়োগ করে রেখেছেন।
অপর প্রার্থী স্নাতক পাস রবিউল আলমের নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টাকা। রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কৃষি ও অকৃষি জমিসহ ফ্ল্যাট। নির্ভরশীলদের নামে কোনো সম্পদ নেই। তবে ব্যাংকে রয়েছে ৯০ লাখ টাকার ঋণ। বিএনপির সাবেক নেতা সাজেদুর রহমান খান মার্কনী এলএলবি পাস। চাষাবাদ ও জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত তিনি। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা। নগদ অর্থ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। দেনা ৬ লাখ টাকা।
তানোরের বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বিএ পাস। তার পেশা ঠিকাদারি ও কৃষি। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। তাঁর মাসিক আয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। যার মধ্যে প্রায় ৫ লাখ টাকা সম্মানি ভাতা পান চেয়াম্যান পদ থেকে। নগদ অর্থ রয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা ও সঞ্চয় ৩৫ লাক্ষাধিক টাকা। রয়েছে ৩২ বিঘা জমি এবং বাড়ি। পাঁচ বছর আগে ময়নার বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৫ লাখ টাকা। এ সময় তাঁর ব্যাংকে ও নগদ টাকা ছিল সাড়ে ৬ লাখ টাকা। কৃষি জমি ছিল ১৫ বিঘা।
তানোর উপজেলার অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুলাহ-আল-মামুন এমএ পাস। তিনি পেশায় শিক্ষক। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বার্ষিক আয় সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকা। নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ১০ লক্ষাধিক টাকা। হলফনামা অনুসারে নিজের ও স্ত্রীর নামে তেমন কোনো সম্পদ নেই। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|