[ পাতা ১ ] 09/05/2024 |
|
|
|
ব্যাংক ঋণের সুদহার হলো বাজারভিত্তিক |
|
বেড়েছে নীতি সুদহার |
অবশেষে ঋণের সুদহার ‘বাজারভিত্তিক’ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজেরাই বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। এতে ঋণের সুদহার আরও বাড়বে। অন্যদিকে নীতি সুদহারও ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়েছে, যা ঋণের সুদ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। এসব এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন কলাকৌশল ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে সফররত প্রতিনিধিদলের শেষ দিনে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক তড়িঘড়ি করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘদিন ধরে এমন পদক্ষেপ নিতে অর্থনীতিবিদরা আহ্বান জানালেও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার আইএমএফের ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এসব শর্ত মানতে বাধ্য হয়েছে তারা। এ নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর পৃথকভাবে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বলে মনে করে কমিটি। চ্যালেঞ্জ দুটি হলো মূল্যস্ফীতির অব্যাহত উচ্চহার ও বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের ক্রমাগত অবক্ষয়। কমিটি আরও জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে মুদ্রা সংকোচন নীতিমালা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে যোগ দেন ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ,বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. এজাজুল ইসলাম। এ ছাড়া ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ ও পূর্বাভাস নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি, ব্যাংকিং খাতের মুদ্রা ও তারল্য পরিস্থিতি, সুদহার করিডোরের অবস্থা, বহিঃস্থ খাত থেকে আসা চাপ এবং বিনিময় হার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। দুটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে এমপিসির বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার মূল্যস্ফীতি কমানো, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা ও রিজার্ভের অবক্ষয় রোধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরও মূল্যস্ফীতি অনমনীয়ভাবে উঁচুতে রয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত প্রত্যাশিত পর্যায়ে উন্নীত করা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন জারির পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) ডেকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তাদের বলা হয়েছে, সুদ হার বাজারভিত্তিক করা হলেও তা যেন বর্তমানের চেয়ে ১ শতাংশের বেশি না বাড়ে। গতকাল এসব সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও তাতে অংশ নেননি সাংবাদিকরা। কারণ, দেড় মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। আইএমএফের চাওয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক যেন বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পথে এগোয়। সেইসঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদহারও যেন বাজারভিত্তিক করা হয়।
বাজারভিত্তিক সুদহার: গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণের পদ্ধতি স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) চালু করলেও গতকাল তা প্রত্যাহার করেছে। তারা বলছে, ব্যাংক ঋণের সুদহার সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগান সাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। ঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাঁচটি নির্দেশনা পরিপালন করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।
এর মধ্যে ব্যাংকগুলো ঋণের খাতভিত্তিক সুদের হার ঘোষণা করবে এবং তুলনামূলক ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহক ভেদে ঘোষিত হার অপেক্ষা ১ শতাংশের কম বা বেশি হারে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। ঋণ অনুমোদনের সময় সুদহার অপরিবর্তনশীল নাকি পরিবর্তনশীল, তা উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো ঋণের সুদহার পরিবর্তনশীল হলে তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বৃদ্ধি করা হবে এবং উক্ত বৃদ্ধি কত শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তাও ঋণে উল্লেখ থাকতে হবে। সেইসঙ্গে কোনো ঋণ অথবা ঋণের কিস্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলে যে সময়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, সেই সময়ে চলমান বা তলবি ঋণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঋণস্থিতির ওপর এবং মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ওপর সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ শতাংশ দণ্ড সুদ আরোপ করা যাবে। এ ছাড়া ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত সুদহারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ আরোপ করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার কর্তৃক গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ বা বিশেষ তহবিল বা পুনঃঅর্থায়ন বা প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধি: নীতি সুদহারও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিপত্রে বলা হয়েছে, গতকাল মুদ্রানীতি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতি সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৮ শতাংশ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ঋণের সুদহার নির্ধারণের পদ্ধতি স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) প্রত্যাহার করেছে। তারা বলছে, সুদহার সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নীতি সুদের করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা এবং নিম্নসীমাও বাড়ানো হয়েছে। নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে সুদহার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে এবং নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত আজ বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যকর হবে। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|