[ Online ] 10/05/2024 |
|
|
|
পদে পদে জালিয়াতি দুর্নীতি দুই শিক্ষকের |
|
টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ |
ইয়াসির আরাফাত
গাজীপুরের টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের দুই শিক্ষকের জালজালিয়াতি সীমা ছাড়িয়েছে। সনদ জালিয়াতি থেকে শুরু করে এমপিও এবং পদোন্নতিতে অনিয়ম, দুর্নীতি সবই তারা করে চলেছেন অবলীলায়।
অভিযুক্তরা হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার জীববিজ্ঞানের প্রদর্শক ও শিক্ষক প্রতিনিধি আবু জাফর আহমেদ এবং হিসাববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক আমজাদ হোসেন।
আবু জাফর নিজের সনদে বয়স পাঁচ বছর কমিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এতদিনে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি বহাল তবিয়তে শিক্ষকতা করে চলেছেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্যের দাপট দেখিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাগিয়ে নিচ্ছেন নানা সুবিধা।
টানা ১২ বছর শিক্ষক প্রতিনিধি রয়ে গেছেন আবু জাফর। জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের এড়িয়ে একজন প্রদর্শক কীভাবে এক যুগ এই পদে থাকেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অধ্যক্ষের পরই সবচেয়ে বেশি বেতন তোলেন এই শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি-অনিয়মের নানা অভিযোগ।
স্কুলের মূল ফটকের পাশে একটি দোকান দেড় লাখ টাকায় কিনে বিক্রি করেছেন ৩৫ লাখে। কলেজ লাগোয়া আলিশান ফ্ল্যাটে থাকেন পরিবার নিয়ে। শিক্ষকতার পাশাপাশি শুরু করেছেন আবাসন ব্যবসা। এ ছাড়া ২০১৫-১৬ সালে তিনি শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় সংগঠনের প্রায় ১৪ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। অধ্যক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আবু জাফর যে সনদ জমা দিয়ে চাকরি করছেন, তার রেজিস্ট্রেশন ১৭০৪৪/১৯৮২ ও রোল নম্বর ৭১০০০। ওই সনদে জন্মতারিখ দেওয়া হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৬৮ সাল। শিক্ষা বোর্ডে জমা থাকা তাঁর মূল সনদটি দেখেছে সমকাল। তাতে রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর একই রয়েছে। তবে জন্মতারিখ ১৮ ডিসেম্বর ১৯৬৩। দুটিতেই ফলাফল অভিন্ন। দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে পাস করেছেন তিনি।
অন্যদিকে সহকারী অধ্যাপক স্নাতক পাস আমজাদ হোসেন ১৯৯১ সালে স্কুল শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরের বছরই হন কলেজ শাখার প্রভাষক। সে সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয় ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর, যেটি আমজাদের ছিল না।
১৯৯৪ সালে এসে আবার ১৯৯১ সালের নিয়োগপত্র দিয়ে স্কুল শাখায় এমপিওভুক্ত হন তিনি (ইনডেক্স নম্বর ২৭৩২৩২)। ২০০১ সালের মে পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। কিন্তু স্কুল থেকে পদত্যাগ করেন ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই পাঁচ মাস তিনি অবৈধভাবে বেতন নিয়েছেন। আবার তিনি ১৯৯২ সালের নিয়োগপত্র দিয়ে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে কলেজ শাখায় এমপিওভুক্ত হন (ইনডেক্স নম্বর ৬১৮৯৭৫)। কলেজ শাখায় তাঁর বেতন শুরু হয় জানুয়ারিতে। মে মাসে একসঙ্গে পাঁচ মাসের বেতন উত্তোলন করেন তিনি। ফলে পাঁচ মাস উভয় পদের বেতন অবৈধভাবে ভোগ করেন আমজাদ হোসেন। হিসাববিজ্ঞানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক হলেও তিনি কলেজ শাখায় কোনো ক্লাসই নেন না। ক্লাসগুলো নেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। তিনি ২০১৮ সালের নভেম্বরে অষ্টম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে সপ্তম গ্রেডে আসেন। তিন মাসের ব্যবধানে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। এত অল্প সময়ে আমজাদ দুটি পদোন্নতি পেলেও প্রতিষ্ঠানটির অন্য শিক্ষকদের তেমন মূল্যায়ন হয়নি। আবু জাফরের সনদে বয়স জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, কাগজপত্রসহ অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই প্রতিবেদককে নথিগুলো হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর অনুরোধ করেন তিনি।
আমজাদ হোসেনের অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, কেউ একই সময়ে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক হিসেবে চাকরি এবং একই সঙ্গে দুই পদের বেতন নিয়ে থাকলে তিনি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন। পদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে সেটিও বিধিবহির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, নথিপত্রসহ অভিযোগ জমা হলে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার। তাঁর দুটি চাকরিও চলে যেতে পারে। আর তিন মাসের ব্যবধানে দুটি পদোন্নতি নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক বিষয়। প্রমাণাদি হাতে পেলে ব্যবস্থা নেব।
অভিযোগের বিষয়ে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘না দেখে বলতে পারছি না, কাগজপত্র হাতে পেলে বলতে পারব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।’ |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|