[ অনলাইন ] 20/07/2022
 
ব্যাংক নিজেই ঋণের ভাল-মন্দের দায় নেবে
বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে ঋণের স্বাধীনতা দিয়েছে। এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নীতিগত সহায়তা দিবে ও ইন্সপেকশন করবে এবং অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নিবে। আর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ, পর্যবেক্ষণ ও পুন:তফসিলসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ পরিচালনা ভালো হলে পর্ষদের অর্জন ও খারাপ হলে তা পর্ষদের ব্যর্থতা।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজিত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে ঋণ পুন:তফসিল সংক্রান্ত জারি করা প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এবং প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ এবং পরিচালক সাঈদা খানমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণ নিয়মিত করার ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে দেওয়ায় প্রভাবশালীরা নিয়মিত ঋণ ফেরত দিবেন। এতে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এমন ইঙ্গিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই জানিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকে সম্পর্কে অনেক তথ্য রাখে এবং তাদের সম্পর্কে ভাল জানে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকের সার্বিক দিক বিবেচনা করে ঋণ পুন:তফসিলের বিষয় ঠিক করবে।’

ঋণ পুনতফসিলের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও প্রবিধি বিভাগের সোমবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ‘ওই প্রজ্ঞাপনে ঢালাওভাবে খেলাপিকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। একটা পেক্ষাপটের কারনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে প্রয়োজন দেখা দিলে পরে পুনরায় প্রজ্ঞাপন হতে পারে।

বুঝতে হবে যে, প্রজ্ঞপনটির মূল লক্ষ্য ব্যাংকগুলো সকল পরিচালনা কাজ ব্যাংকগুলো দায়িত্ব হিসাবে ছেড়ে দেওয়া। এতে জবানদিহিতা বাড়বে ও খেলাপি ঋণ কমবে। নতুন স্বাধীনতা দেওয়ার ফলে এখন থেকে ব্যক্তি ও পরিচালনা পর্ষদের দায়ভার বেড়ে গেছে।’
 
প্রজ্ঞাপনটি কোন বিশেষ গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান গবর্নর খাটি মানুষ। তিনি ব্যাংকে দায়ত্বশীলতার জায়গা থেকে দেখেন। সুতরাং নিজ উদ্যোগে তিনি প্রজ্ঞাপনের অনুমতি দিয়েছেন। কারো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তর বাস্তবায়ন করা হয়নি।’

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নতুন নির্দেশনা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিত না যদি ব্যাংকগুলোর পর্ষদে সুশাসন থাকত।  তবে সেসব ব্যাংকে সুশাসন রয়েছে সেক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু একই ঋণ বার বার পুনতফসিলের সুযোগ পেলে তা ফিরে আনা কঠিন। কুড়ি বছরের বেশি সময় পার হলে ঋণ ফিরবে কী করে। এধরণের ঋণ অবলোপন করে আদালতের মামলার রায়ের অপেক্ষায় থাকা উচিত। কারণ কাগজে-কলমে ঋণ দেখিয়ে বাস্তবে না থাকলে তা মানায় না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁদিয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ। সেই হিসাবে ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।