[ অনলাইন ] 20/07/2022
 
তেজগাঁও জোনে চাঁদাবাজ ভূমিদস্যু মাদকের রমরমা
ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানা রয়েছে- যা ক্রাইম ডিভিশন হিসেবে ৮ ভাগে বিভক্ত। রাজধানীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অপরাধের ধরন অভিন্ন হলেও এলাকাভিত্তিক অপরাধে আছে ভিন্নতা। জমি দখল ও মাদক সমস্যা সর্বত্রই, আছে চাঁদাবাজিও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত ও বিশেষ অভিযানে কিছু অপরাধী ও ছিঁচকে সন্ত্রাসী ধরা পড়লেও কমছে না অপরাধের মাত্রা। জামিনে মুক্ত হয়ে অনেকে ফের অপরাধে জড়াচ্ছে। বিদেশে পলাতক এবং কারাবন্দি অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী এখনো অপরাধ জগতের কলকাঠি নাড়ছে। রাজধানীর ৮ বিভাগের অপরাধের রকমফের নিয়ে আমাদের ৮ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। লিখেছেন কামরুজ্জামান খান, আজিজুর রহমান জিদনী ও ইমরান রহমান।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও শেরেবাংলা নগর থানা নিয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ গঠিত। এই বিভাগের এক এক এলাকায় অপরাধের ধরন এক এক রকম। কিশোর গ্যাং ও মাদক চক্রের দৌরাত্ম্য সর্বত্র। রয়েছে ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজদের দাপট। রাজধানীর অন্যতম ছিনতাই স্পটগুলোও এই বিভাগের মধ্যে পড়েছে। যে স্পটগুলোতে বছরের পর বছর ধরে ছিনতাই হলেও স্থায়ী প্রতিকার নিশ্চিত করতে পারছে না পুলিশ। রয়েছে ভেজাল পণ্য তৈরির অভিযোগও। এছাড়া চুরি, ডেভেলপার কোম্পানির প্রতারণা, ফুটপাত ও পরিবহনে চাঁদাবাজি, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদাবাজি ঘটছে হরহামেশাই। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটছে খুনোখুনিও।

ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই বিভাগের ভূমিদস্যু, রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারীসহ সব ধরনের অপরাধের তথ্য। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। যদিও পুলিশ বলছে, মাদক বৈশ্বিক সমস্যা। এটি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে পুলিশ।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানায় বেশ কয়েকজন ভূমিদস্যু সক্রিয় রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা উদ্যানের মনিরুজ্জামান ওরফে মনির, পিসি কালচার হাউজিংয়ের হাজী মোজাম্মেল হক ওরফে মোজা হাজী, আদাবর রিং রোডের এ কে এম মাহবুব মান্নান পল্লব, চাঁদ উদ্যান হাউজিংয়ের মান্নান ও আদাবর ৬নং বাজার রোড এলাকার সুমন অন্যতম। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উদ্যানের মনির একসময় বিএনপির নেতা হলেও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০২০ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে অর্ধশতাধিক মামলার এই আসামি কারাগারে গেলেও ঢাকা উদ্যানের ১০-১২টি প্লট দখলে রয়েছে তার।

পিসি কালচার হাউজিংয়ের মোজা হাজী ৩০নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাসুর অনুসারী। আদাবর, সিলিকন হাউজিং ও ঢাকা উদ্যানের প্রায় ১০০টি বাড়ি ও প্লট অবৈধভাবে দখল করে আছেন। মোজা হাজীর অনুসারী এ কে এম মাহবুব মান্নান পল্লব আদাবর থানা এলাকায় ৪টি বাড়ি অবৈধভাবে দখল করে আছেন। মোহাম্মদপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মান্নান দখল করে আছেন চাঁদ উদ্যান ও চাঁন মিয়া হাউজিংয়ের ৩টি বাড়ি। ৩০নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাসুর আরেক অনুসারী সুমন আদাবর, শেখেরটেক ও মনসুরাবাদ এলাকায় অবৈধভাবে দখল করে আছেন ৫টি বাড়ি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার গোপন প্রতিবেদনেও উল্লেখিত অপকর্মে জড়িতদের নাম রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তেজগাঁও বিভাগের সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাংয়ের প্রভাব মোহাম্মদপুর থানা এলাকায়। ক্ষমতাসীন দলের কমপক্ষে ২২টি কিশোর গ্যাংকে মোহাম্মদপুরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্রুপগুলো হলো- তিন রাস্তার মোড়ের ‘টক্কর ল গ্রুপ’। এই গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে- চকলেট ইমন, আশিক ইকরি, হানিফ ও ইউনুস। বোটঘাট এলাকার ফালানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ‘পাটোয়ারী গ্রুপ’। এর সদস্যরা হলো- সজিব, জুয়েল, শাশীম, নাঈম, হাচান, ফরহাদ ও শাহিন। কাটাসূর এলাকার মুখে ল গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে শাকিল, আসলাম, রমজান, ভান্ডারী ইমন, পাপ্পু, মাখিখ। ভাঙ্গা মসজিদ এলাকার ‘পাঁয়তারা কিংস’ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ করছে আকাশ, শারুখ, শাকিল, হান্নান ও রবিন। ‘দে ধাকা’ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে দুধ বাবু, রুহুল আমিন, জাউরা আকাশ, ভাইস্তা রনি, মোল্লা শফিকুল ও ফয়সাল। বাঁশবাড়ী এলাকার ‘লারা দে’ গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে আলী, মীম, নাঈম, রাশেদ, আশিক ও ওসামা। ‘লেভেল হাই’ গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে কাদের, ম্যাক্স তারেক, নাক রাসেল, পোলা সাকিব। নবোদয় হাউজিংয়ের ‘গুতা দে’ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ আহাম্মেদ, সোহানা, মামুন ও সিয়ামের হাতে। ‘মার ভান্ডার’ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে দিপু, অভি, রয়েল, বাবু, আরিফ। লাল গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে মেহেদী, রাফি, লাল ও বাবু। টক্কর ল (জুনিয়র)’ গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে ইসমাইল ওরফে বাঘা, সোহেল, মুন্না, মানিক, আনিস, ছোট আশিক। চাঁদ উদ্যান এলাকার ল ঠেলা গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে দুদা সাজ্জাত, মাউরা ইমরান ও আশিক। ল ঠেলা জুনিয়র গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে সাগর, মোহনা, আলামিন ও আশিক। চাঁন মিয়া হাউজিংয়ের আতঙ্ক গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে সাগর, সাইফুল, রিয়াজ ও মানিক। ভাঙ্গা মসজিদ এলাকার ডায়মন্ড গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে মিলন, জুয়েল, ডায়মন্ড সোহান, ডায়মন্ড মোহানা, জাদু আকাশ। চাঁদ উদ্যানের কাউসার গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে কাউসার ভাই, সালাউদ্দিন ওরফে হৃদয়, নাঈম, লম্বু পলাশ, সাইফুল ও ইমন। ভাঙ্গা মসজিদ এলাকায় কাউসার গ্রুপ-২ নিয়ন্ত্রণ করছে- সুজন, পন্টা জুয়েল, লেজকাটা মিরাজ ও সোহানা। কাটাসূর এলাকার কোম্পানি বাড়ী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণকারী কালু মিলন, শামিম, শাকিল, দিপু ও টিপু।

ওয়ারেশের গলির কালা আয়সা কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণকারী মাদক ব্যবসায়ী নঈম, শুভ, মাওলা, সজিব, কালা ও ফালান। ক্যাস্তা ফিরোজ ৪০ ফিট কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রকরা হলো- অনিক, জীবন, ক্যাস্তা ফিরোজ, দিদার ও শরীফ। বুদ্ধিজীবী বালুর মাঠ এলাকার ভাইগ্যা যা গ্রুপের নিয়ন্ত্রণকারী সাব্বির, প্যাটকা তুহিন, রফিক কামাল, ডিফজল, শাহরুখ, ভাইস্তা শাকিব। গøাস ফ্যাক্টরি মোড় এলাকার কিশোর গ্যাং গ্রুপের নিয়ন্ত্রণকারী লাট কামাল, বেকারী সোহেল, মোস্তফা, রুবেল, জুলহাস, ঝন্টু, শাহিন ও ছোট আলমগীর।

চাঁদাবাজিতেও এগিয়ে রয়েছে মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা এলাকার বাস, টেম্পু ও ট্রাক স্ট্যান্ডগুলো। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির চাঁদা তোলে দিপু, শ্যামলী ও শিয়া মসজিদ লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলে শীর্ষ সন্ত্রাসী নবীর আপন ভাই সুমন, কাটাসুর, ময়ুরী ভিলার বিপরীতের বাস কাউন্টার থেকে চাঁদা তোলে পিচ্চি হেলালের অনুসারী লিটন, বসিলা মোড় রহমানিয়া মাদ্রাসার সামনে বাস থেকে চাঁদা তোলে বিল্লাল, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, তিন রাস্তার মোড়ে টেম্পু ও বাস থেকে চাঁদা তোলে ঘাট বাবু, কনফিডেন্স টাওয়ারের সামনে সিটি বাস থেকে চাঁদা তোলে শাহীন, বসিলা ৩ রাস্তার মোড়ে বাস থেকে চাঁদা তোলে যুবলীগের সিএনজি কামালের অনুসারী জসিম, চাঁদ উদ্যান ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলে ট্রাক পরিবহন শ্রমিক লীগ নেতা নসু, আল্লাহ করিম মসজিদ থেকে আটিবাজারগামী লেগুনা থেকে চাঁদা তোলে মনির চৌধুরী।

মোহাম্মদপুর এলাকাজুড়ে চাঁদাবাজি করছে নবী ও আর্মি আলমগীরের শীর্ষ্যরা। দেশের বাইরে থাকায় তাদের কার্যক্রম থামাতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে যখনই তাদের নামে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে, অভিযোগ পেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সম্প্রতি তাদের অন্যতম ৩ সহযোগীকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে নবী ও আর্মি আলমগীরের কার্যক্রম থেমে নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তেজগাঁও বিভাগজুড়ে রয়েছে মাদকের খুচরা ও পাইকার বিক্রেতাদের বিশাল বড় সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, শেরেবাংলা নগর থানাধীন সাবেক বিএনপি বস্তি এলাকা মাদক ব্যবসা করছেন বাচ্চু মিয়া, শহীদ ওরফে কালু, কুলসুম ওরফে কুলসি ও ফাতেমা। আগারগাঁও পাকা মার্কেট ফুল বাজারের পাশের গলিতে মাদক ব্যবসা করছেন ওসমান গণি ওরফে সোহেল ওরফে কালু সোহেল, সোহাগ, রতন, আল আমিন, তালতলা রতন মিয়ার বস্তিতে মাদক বিক্রি করেন জোসনা বেগম, রাসেল, সাবিনা, শ্যামলী কাজী অফিস এলাকার মুনসুর মিয়ার বস্তিতে মাদক বিক্রি করেন জামাল উদ্দিন, সুমন ওরফে জুম্মন ও কবির হাওলাদার।

হাতিরঝিল থানাধীন আম বাগান এলাকার চল্লিশ ঘর, চা পট্টি ও মকবুল টাওয়ারের সামনে সহযোগী মো. জুয়েলকে দিয়ে বিভিন্ন মাদক পাইকারি বিক্রি করেন হাবিবুর রহমান রাজু, মোড়লবাড়ীর গলি ও নয়াটোলা চেয়ারম্যান গলিতে মাদকের পাইকারি বিক্রেতা লেটকা বাবু, খুচরা বিক্রেতা আবুল ও বাপ্পী। মক্কি মসজিদ গলির খুচরা বিক্রেতা মুন্না, শেখ ওমর ওরফে পলক, রামপুরা ইউলুপের সামনে মোল্লা টাওয়ার থেকে মক্কি মসজিদের গলির মুখ পর্যন্ত হামিদ, ডিআইটি রোডের স্বপ্ন গলিতে নারগিস আক্তার খুচরা বিক্রি করেন। ওয়াবদা রোডে মিলন, ঝিলকানন এলাকায় সোহেল রানা ও টিএন্ডটি কলোনি এলাকায় হাসিব পাইকারি বিক্রি করেন। রামপুরা উলন রোডে সিরাজ, জমিদার গলিতে সালাউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি করে আসছেন।

আদাবর থানাধীন শেখেরটেক ৫ নম্বর রোডে হাসু ও চন্দ্রিমা উদ্যানের ১ নম্বর রোডে আজাদ পাইকারি বিক্রি করেন। আদাবরের বস্তিবাজারে ইয়ামিন, শেখেরটেকের ৬ নম্বর রোডের রিকশা গ্যারেজে সাগর ও সেলিম, শেখেরটেকে শফিক মাদক বিক্রি করে আসছেন।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন ঢাকা পলিটেকনিক এলাকায় ২৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি রবিউল ইসলাম, শাকিল আহম্মেদ ও মো. মাহতাব, বাউলবাগ বস্তি সংলগ্ন রেললাইনে মীনা বেগম, কুনিপাড়া নূর ফার্মেসির গলিতে রাজা, প্রগতির মোড় সড়ক ও জনপথ গলিতে রাজন, সাব রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন এলাকা ও প্রেম বাগান এলাকায় সোহাগ, বলাকা মোড় সংলগ্ন বস্তিতে জাহানারা বেগম ওরফে ফকিন্নি, তাঁরকাটা ফ্যাক্টরি এলাকায় জয়নাল ওরফে চাঁদ, পূর্ব নাখালপাড়ায় শাওন ও রেজওয়ান মাদক বিক্রি করেন।

তেজগাঁও থানাধীন কারওয়ানবাজার রেললাইন এলাকার টমাল লিটন, তেজকুনি পাড়ায় রেশমা, বাউলবাগ কপিক্ষেত বস্তি ও রেললাইনের আশপাশে জাফর মাদকের ডিলার হিসেবে সক্রিয় রয়েছে। বাউলবাগ কপিক্ষেত বস্তি ও রেললাইন এলাকায় আলী, টুম্পা, জাহানারা, স্বপ্না খাতুন, হেলেনা, সাথী আক্তার ও পারুল খুচরা মাদক বিক্রি করেন। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প রাজধানীর অন্যতম মাদকস্পট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে অনাগ্রহ দেখান। এই ক্যাম্পের অন্যতম ডিলার আলমগীর, ডিলার হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন জয়নাল আবেদীন ওরফে পাচু ও পাপিয়া ওরফে ইয়াবা পাপিয়া। খুচরা বিক্রেতা জয়া, বদনী, পাকিস্তানি রাজু, এরশাদ ওরফে মোল্লা আরশাদ, রানী, চাঁদনী বেগম, বিল্লাল ওরফে বালাম, মুন্না, ফয়সাল ওরফে হৃদয়, জাহিদ, সেলিম ওরফে চুয়া সেলিম, কোরবান, ফেকু, ইমরান হোসেন, ইশতিয়াক, কানা রেজা, সাকিলা বেগম ও শাহজাদা আশরাফী। বাঁশবাড়ি বস্তি এলাকায় খুচরা বিক্রি করে আসছে হাসান ওরফে বড় হাসান, মোহন মাঝি, লুৎফা বেগম, নূরুন্নাহার ওরফে কুটির মা, সেলিনা বেগম, রানা ওরফে কুটি রানা ও মনি আক্তার ওরফে কুলসুম আক্তার। রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকার অন্যতম ডিলার আরিফ হোসেন। এলাকাটির খুচরা মাদক ব্যবসায়ী হলেন- মহসিন, হনুফা আক্তার, ইউসুব আলী ও মাসুম। তুরাগ হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডের ডিলার ঝর্ণা, খুচরা ব্যবসায়ী হেনা আক্তার ও আসমা আক্তার।

তেজগাঁও বিভাগে অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে ছিনতাইকারীদের সক্রিয়তাও ব্যাপক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে ছিনতাইকারী ও টানাপার্টির যেসব সদস্য গ্রেপ্তার হন, তাদের অন্যতম হটস্পট তেজগাঁও এলাকা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কারওয়ানাবাজার এলাকায় ছিনতাইয়ে বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে জসিম ওরফে কানা জসিম, রনি, নাজমুল, নাজির, মো. জাহাঙ্গীর ও সোহেল ওরফে ঘাড়তেড়া সোহেল। এরা ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা এবং সন্ধ্যার পরে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে থাকে। এই গ্রুপের অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে। কারওয়ানবাজার ও ফার্মগেট এলাকায় যাত্রীরা বাসে ওঠার সময় মোবাইল ও গলার চেইন ছিনতাই করে আলমগীর হোসেন ও সোহেল ওরফে শামীম।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন সাব রেজিস্ট্রি অফিস মোড় থেকে বলাকা মোড় ও শমরিতা হাসপাতাল রোড পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ছিনতাই করে তরিকুল ইসলাম ও মো. তানিম। তারা মোটরসাইকেলযোগে এসে রিকশাযাত্রী ও পথচারীদের টার্গেট করে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তারা কারাগারে গেলেও সম্প্রতি জামিনে বেড়িয়ে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শিল্পাঞ্চলের ফ্লাইওভারের নিচে, আলকাতরা ফ্যাশন মোড় ও বাউল বাগবস্তি সংলগ্ন রেল লাইন এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ছিনতাই করে পনির, ফর্মা আকরাম, ইয়াছিন, নিরব, সোহেল ওরফে ড্যান্ডি সোহেল, মগবাজারের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এলাকায় ছিনতাই করে সুজন হাওলাদার ও রায়হান উদ্দিন। আগারগাঁও আইডিবি ভবনের সামনে ও লাইট ক্রসিং মোড় এলাকায় ছিনতাইয়ে সক্রিয় রয়েছে মো. কাজী আরিফ ওরফে গলাকাটা আরিফের গ্রুপ। তার সহযোগীদের মধ্যে রয়েছে মো. বিপ্লব শেখ। ৬০ ফিট পশ্চিম আগারগাঁও এলাকায় সক্রিয় রয়েছে শ্রাবন ওরফে শুভ ওরফে সজলের গ্রুপ। তার সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মো. রবিন। শিশু মেলা ক্রসিংয়ে সক্রিয় রয়েছে মো. নওশাদের নেতৃত্বে ছিনতাইকারী গ্রুপ। তার সহযোগী মো. ইমরান। শ্যামলী ওভারব্রিজ এলাকায় সক্রিয় রয়েছে মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তার সহযোগী ঝনু সোহেল। শ্যামলী সিনেমা হল থেকে কলেজ গেট পর্যন্ত ছিনতাইয়ে সক্রিয় রয়েছে রাসেল ওরফে মাওরা রাসেল এবং তার সহযোগী বক্সার রুবেল ও মো. কামরান। মাওরা রাসেলের আরেক সহযোগী মো. আকাশ বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড় ও বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় সক্রিয় রয়েছে মো. মাসুম ওরফে ঘাড়তেড়া মাসুম এবং তার সহযোগী রুবেল ও সোহাগ।

ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদ্য সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, মাদক বৈশ্বিক সমস্যা। এটি নির্মূলে সামাজিক আন্দোলন গড়ার বিকল্প নেই। তবে মাদক বিক্রি হওয়ার খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করি। এছাড়া কিশোর গ্যাং নির্মূলেও পুলিশ তৎপর রয়েছে। যে অপরাধ করবে, সে কোন দলের বা কার স্বজন সেগুলো আমরা দেখি না। অপরাধ করলে আইনের আওতায় আসতেই হবে।

ডিসি আরো বলেন, আমি তেজগাঁওয়ে যোগদানের পর ছিনতাই কমে গেছে। ভূমিদস্যুতারও কোনো অভিযোগ পাইনি। আগে যে দখলগুলো হয়েছে সেগুলো আদালতের বিষয়। বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজির বিষয়ে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেই। তেমন কোনো চাঁদাবাজ তেজগাঁও বিভাগে আছে বলে জানা নেই। তবে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।