[ অনলাইন ] 30/07/2022
 
পাচারের চেষ্টা, রাজশাহীর চার কিশোরীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার
রাজশাহী থেকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চার কিশোরীকে চার দিন আগে ঢাকায় নিয়ে যান এক নারী। সেখানে গিয়ে বিভিন্নভাবে তাদের দালালদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। এরই মধ্যে এক কিশোরীর বাবা রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করেন। সেই সূত্র ধরে পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকার সভার এলাকার একটি বাসা থেকে ওই চার কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই নারীকে।

গ্রেপ্তার হওয়া নারীর নাম মোসা. চাঁদনী (৩০)। তিনি নগরের রাজপাড়া থানার কোর্ট বুলনপুরের মো. সুরুজ আলীর স্ত্রী। তিনি নগরের মহিষবাথান এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ওই চার কিশোরীর মধ্যে একজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আর বাকি তিনজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। আজ শুক্রবার সকালে রাজপাড়া থানায় বসে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের দুজনের বাবা রিকশাচালক, একজনের বাবা রাজমিস্ত্রি, আরেকজনের বাবা ছাগলের ব্যাপারী।

কীভাবে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল জানতে চাইলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জানায়, চাঁদনী তাদের ঢাকায় ভালো চাকরির কথা বলেছিলেন। ভালো টাকা–পয়সা পাওয়া যাবে। নিজের মতো খরচ করা যাবে। এই প্রস্তাবে তারা চাঁদনির সঙ্গে যেতে রাজি হয়েছিল। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে প্রথমে তিনজন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। পরে তাদের সঙ্গে আরেকজন যোগ দেয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাদের নগরের লক্ষ্মীপুর ঝাঁউতলার একটি ডেকোরেটরের দোকানের একটি গুদাম ঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাসে ঢাকায় রওনা দেওয়া হয়।

মা–বাবাকে না জানিয়ে কেন গিয়েছ—এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি জানায়, জানতে পারলে মা–বাবা যেতে দেবে না। তাই বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বের হয়েছিল। ঢাকায় যাওয়ার পরে তাদের একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তোলা হয়। ওই রিকশাচালকের কথা শুনে তাদের ভালো মনে হয়নি। তারা খাওয়ার কথা বলে একটি হোটেলে নামে। সেখানেই তাদের সঙ্গে চার-পাঁচ যুবক পিছু নেন। তারা হোটেলের একজন কর্মচারীকে বিষয়টি জানায়। খাওয়া–দাওয়ার পরে তারা ওই কর্মচারীর আত্মীয়ের বাসায় যেতে চায়। কিন্তু ওই যুবকেরা তাদের পিছু ছাড়ে না। অন্য কেউ কথা বলতে চাইলে চাঁদনী তাদের কথা বলতে দেন না। তিনি বলেন তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। কোনোভাবে তারা ওই হোটেল কর্মচারীর আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে ওঠে। সেখানে চাঁদনীও যান। এরই মধ্যে ফোনে সে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে থাকে।

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চাঁদনী এই চার কিশোরীকে যৌন কার্যকলাপে নিয়োগের জন্য ফুঁসলিয়ে চাকরির প্রলোভন দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যান। তারা স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিকেলে ফিরে না এলে অভিভাবকেরা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন তাঁদের জানান, চাঁদনী নামের এক নারীসহ ওই চার কিশোরীকে নগরের মহিষবাথান কলোনীর উত্তর পার্শ্বে গেট দিয়ে যেতে দেখেছেন। এ খবর পেয়ে তাঁরা চাঁদনীর স্বামীর কাছে যান। চাঁদনীর স্বামীর কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, চাঁদনী কাউকে না জানিয়ে প্রায়ই ঢাকায় যান এবং ১০-১২ দিন পর আবার ফিরে আসেন।

পুলিশ জানায়, চাঁদনীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কিশোরীদের অভিভাবকদের ধারণা করেন যে চাঁদনীসহ তাঁর সহযোগীরা তাদের পাচার এবং যৌন কার্যকলাপের জন্য নিয়ে গেছে। এক কিশোরীর বাবা এই অভিযোগে থানায় মামলা করেন। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে গতকাল দিবাগত রাতে ঢাকার সাভার মডেল থানার পূর্ব রাজাসন এলাকার একটি বাসা থেকে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় আসামি চাঁদনীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর হেফাজত থেকে ওই চার কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। এখন তাদের আদালতের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এই কিশোরীরা সব কথা চাঁদনীর পাশে বসেই বলছিল। জানতে চাইলে চাঁদনী তাদের নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন।