[ Online ] 29/03/2024
 
ডিজিটাল হুন্ডিতে পাচার ৪০০ কোটি টাকা

অবৈধ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচারের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা অ্যাপস নিয়ন্ত্রিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) এজেন্ট সিমের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।

সিআইডি বলছে, চক্রটি ‘জেট রোবটিক অ্যাপ’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ থেকে সংগ্রহ করা এজেন্ট সিম এই অ্যাপে ডিভাইসের মাধ্যমে যুক্ত করে তারা। এতে এজেন্ট সিমের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অ্যাপ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিদের হাতে। এভাবে অ্যাপের সুবিধা নিয়ে খুব সহজেই হুন্ডির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তারা।

সিআইডি জানিয়েছে, দুবাই অফিস স্থাপন করে এই ডিজিটাল হুন্ডির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে চক্রটি। দেশে অবস্থান করা চক্রের অন্য পাঁচ সদস্যকে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের একটি দল। তারা হলেন নাসিম আহমেদ, ফজলে রাব্বি সুমন, কামরুজ্জামান, জহির উদ্দিন ও খায়রুল ইসলাম পিয়াস। তাদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল, ১৮টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, ৬টি মডেম ও ২৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় তদন্ত সংস্থাটির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, চক্রটির সদস্যরা অ্যাপ ব্যবহার করে অভিনব কৌশলে ৪০০ কোটি টাকা পাচার করেছে। এমন ঘটনা এই প্রথম পেয়েছেন তারা। চক্রের সদস্যরা চট্টগ্রামের তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েট নামের একটি বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের কাছ থেকে এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে। সিমগুলো মডেমের মাধ্যমে ল্যাপটপে ও কম্পিউটারে সংযুক্ত করে। জেট রোবটিক অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্ত সিমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই অফিস থেকে ডিজিটাল হুন্ডির এ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে।

সিআইডি জানায়, এই ডিজিটাল হুন্ডি চক্রটির হোতা শহিদুল ইসলাম মামুন। তিনি ২০২০ সাল থেকে দুবাই অবস্থান করছেন। সেখানে মামুনসহ পাঁচজন জেট রোবটিক অ্যাপের নিয়ন্ত্রক। তারা মালয়েশিয়ান একজন সফটওয়্যার ডেভেলপারের মাধ্যমে তৈরি করা এ অ্যাপটিকে কাস্টমাইজ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এজেন্ট সিমগুলো বাংলাদেশে থাকলেও মূলত সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে দুবাই থেকে। দুবাই থেকে তারা বাংলাদেশের নগদ বিকাশসহ বিভিন্ন এমএফএস সার্ভিসে ক্যাশ-ইনের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারে।

সিআইডি প্রধান বলেছেন, এই হুন্ডির কাজে তারা বিশ্বস্ত এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে। সংগ্রহকৃত অর্থ কোন নম্বরে বা কোন ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে হবে সেটা নিশ্চিত হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করা এজেন্ট সিম থেকে অ্যাপ ব্যবহার করে প্রবাসীদের আত্মীয়দের নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা চট্টগ্রামের চান্দগাঁও অবস্থিত তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটস থেকে ১৫০টি এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে ব্যবহার করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিন মাসে চক্রটি এই বিপুল পরিমাণ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছে।