[ পাতা ৩ ] 29/03/2024
 
ইউটিউব দেখে জাল নোট তৈরি, গ্রেফতার ৩
ঈদ সামনে রেখে জাল নোট তৈরি করছিল একটি চক্র। এ চক্রের মূলহোতা আরিফসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- আরিফ ব্যাপারী, মো. জাহিদ ও অনিক। বুধবার রাতে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরমোহনপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জাল নোট তৈরিতে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিসহ বিপুল পরিমাণ জাল নোট জব্দ করা হয়। চক্রের মূলহোতা আরিফ ইউটিউব থেকে জালটাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে রপ্ত করে দুই সহযোগী নিয়ে নিজের ঘরে বসেই তৈরি করত জাল নোট। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে আমরা জানতে পারি। এরই ধারাবাহিকতায় শরীয়তপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট কারবারি আরিফসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল নোট বিক্রির নেটওয়ার্ক তৈরি করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করত। চক্রটি সাধারণত প্রতি ১ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করত।

ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, আরিফ পূর্ব থেকেই কম্পিউটারে পারদর্শী ছিল। সে ইউটিউব থেকে জালটাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং নিজের অর্জিত কম্পিউটার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জাল নোট তৈরিতে পারদর্শিতা অর্জন করে। পরবর্তীতে আরিফ তার অন্য দুই সহযোগী জাহিদ এবং অনিকের সহযোগিতায় কম্পিউটার, প্রিন্টার এবং জাল টাকা তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজের ঘরে বসে জাল টাকা ছাপানোর কাজ শুরু করে। শুধু তাই নয়, চক্রটি বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল টাকা বিক্রির জন্য নেটওয়ার্ক তৈরি করে। তারা এসব পেজ প্রমোট ও বুস্টিং করে অনেক পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সংগ্রহ করে। শরীয়তপুরের অধিকাংশ লোকই ইতালি প্রবাসী এবং দেশে অবস্থানরত বড় একটি অংশ রাজধানীর বাংলাবাজারের বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে কর্মরত। পরিচিতদের সূত্র ধরে আরিফ বিভিন্ন সময় বাংলাবাজারে অবস্থান করে প্রিন্টিং সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করে। সে ধারণা থেকেই জাল টাকা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন- রং, কালি ও কাগজ পুরান ঢাকা  থেকে ক্রয় করত। চক্রটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর এলাকায় জাল নোট সরবরাহ করত বলে স্বীকার করে। বুধবার রাতে ৫ লাখ টাকার জাল নোট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের সময় টাকা, মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ র?্যাবের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে চক্রটি।

র‌্যাব-৩ এর প্রধান বলেন, আরিফ স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করত। দোকান থেকে পাওয়া বেতনের টাকা জমিয়ে জাল নোট ছাপানোর জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে। পরবর্তীতে সে তার ঘরে বসে কম্পিউটারের দোকানে কাজের আড়ালে জাল নোট ছাপানোর কাজ শুরু করে। তার জাল নোট ছাপানোর কাজে অন্যতম সহযোগী হিসেবে জাহিদ এবং অনিক সহযোগিতা করত। তারা জাল নোট বিক্রি করে যে টাকা পেত তার অর্ধেক আরিফ নিত এবং বাকি অর্ধেক জাহিদ ও অনিক ভাগ করে নিত। চক্রটির কাছ থেকে ২০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট, জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত প্রিন্টার, ল্যাপটপ, মাউস, ল্যাপটপ চার্জার, প্রিন্টারের ক্যাবল, মাল্টিপ্লাগ, স্টিলের স্কেল, এন্টিকাটার, স্কিন প্রিন্টের ফ্রেম, টাকা কাটার কাচ এবং দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।