[ পাতা ৪ ] 29/03/2024
 
ব্যাংকের সিএসআর খাতে ব্যয় কমার কারণ চিহ্নিত করুন
ব্যাংকগুলোর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয় কমে ৯২৪ কোটি টাকায় নেমেছে। এ ব্যয়েও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম মানা হয়নি। নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যাংকগুলো ৪৪ শতাংশ ব্যয় করেছে ‘অন্যান্য’ খাতে। আর শিক্ষায় মাত্র ১৭ দশমিক ৬৫ এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন খাতে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। নিয়ম না মানা ব্যাংকগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিদ্যমান নিয়মে যেসব ব্যাংক নিট মুনাফা করবে, শুধু তারা সিএসআর ব্যয় করতে পারে। মুনাফার কত শতাংশ ব্যয় করবে বা আদৌ করবে কি না  তা ওই ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। তবে ব্যয় করলে শিক্ষা খাতে অন্তত ৩০ শতাংশ খরচ করতে হবে। আর স্বাস্থ্য খাতে ৩০ শতাংশ, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। বাকি ২০ শতাংশ আয়-উৎসারী কাজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং অন্যান্য খাতের আওতায় ব্যয় করা যাবে।

সিএসআর খাতে ব্যয় করা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ‘নিজস্ব’ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের নিট মুনাফার ভিত্তিতে গত বছর সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে ব্যাংকগুলো। ওই বছর ৯টি ব্যাংক নিট মুনাফা করতে পারেনি। ফলে সে ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ব্যয়ই করতে পারেনি। আর যে ব্যাংকগুলো মুনাফা করছে, সেগুলোও যথানিয়মে সিএসআর ব্যয় করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ব্যয় কমেছে ২০৫ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ব্যাংক খাতের সিএসআর ব্যয় হয় ১ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। মূলত বেনামি ঋণসহ বিভিন্ন জালিয়াতি করে সংকটে পড়া ইসলামী ব্যাংকের কারণে এমন হয়েছে।

সিএসআর হচ্ছে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সেবাধর্মী কার্যকলাপ; যা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হয়। সিএসআরের এর মূল ধারণা হচ্ছে, শুধু অর্থনৈতিক লাভের জন্য নয়, ব্যবসা হবে সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের জন্যও। যে সমাজে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে, সেই সমাজের প্রতি প্রতিষ্ঠানের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। সব ধরনের দারিদ্র্য ও অসমতা দূর করার লক্ষ্যে জনসংখ্যার সুবিধাবঞ্চিত, দুস্থ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা হতদরিদ্র এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের মৌলিক অধিকার রক্ষা, সংরক্ষণ এবং সমুন্নত রাখা। সমাজে কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করা সিএসআরের মূল লক্ষ্য। এখন নানা কারণ দেখিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এ খাতে ব্যয় না করে কিংবা তহবিল অন্য থাতে খরচ করেও সিএসআর খাতে ব্যয় দেখায়, তা দুঃখজনই নয় শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। আমরা বিশ্বাস করি, কোনো প্রতিষ্ঠান সমাজের বিকাশে এবং পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করে কেবল তখনই তা টেকসই হয়ে উঠতে পারে। ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ব্যয় নিয়ে দায়িত্বশীল হতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও তদারকি ব্যবস্থা জোর দার করতে হবে। তাই এ খাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় কমার কারণ চিহ্নিত করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।