[ পাতা ১ ] 24/04/2024
 
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি থামছে না
আমদানি কমার পরও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি থামছে না। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত সোমবার পর্যন্ত সরকারি আমদানি চাহিদা মেটাতে ১১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। অর্থাৎ ৯ মাস ২২

দিনে এই পরিমাণ ডলার বিক্রি করা হয়। গত অর্থবছরে ৯ মাস ১০ দিনে বিক্রির পরিমাণ ছিল সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ?রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে কমছে আমদানিও। এর পরও দেশে ডলারের সংকট এখনো কাটেনি। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। আবার কারেন্সি সোয়াপের আওতায় জমা রাখা ডলার ব্যাংকগুলো ফেরত নিতে শুরু করেছে। এতে রিজার্ভ কমছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আগের চেয়ে সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও বাজারে এখনো ডলারের ঘাটতি রয়েছে। ডলারের চাহিদা যতটা, সরবরাহ তার তুলনায় কম। তাই প্রতিদিন ডলার বিক্রি করে জোগান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপাতত আর কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৩৩ মাস ২২ দিনে রিজার্ভ থেকে ৩২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন বিক্রি করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। তবে এই তিন বছরে সামান্য কিছু ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ ধরে রাখতে এই ডলার কেনা হয়। পাশাপাশি কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমেও রিজার্ভ বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার পরও রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ডলারে নেমেছে। একই দিনে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার। এর আগে ৮ এপ্রিল বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১০ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত ১০ দিনে বিপিএম-৬ মান অনুযায়ী রিজার্ভ কমেছে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা প্রকাশ করা হয় না।

সূত্র জানায়, আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত অনুযায়ী গত মার্চ মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত রিজার্ভ (নিট রিজার্ভ) থাকার কথা ১ হাজার ৯২৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ওই সময় প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মতো। বর্তমানে প্রকৃত রিজার্ভ ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের আশপাশে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কীভাবে নির্ণয় করতে হবে, তা আইএমএফ ঋণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রকৃত রিজার্ভ কী পরিমাণে থাকতে হবে, তা ঠিক করে দেয়। তাই বাংলাদেশকে আইএমএফের শর্ত মেনে প্রতি তিন মাস পরপর রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হয়।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে ডলার কেনার দর নির্ধারণ করা আছে ব্যাংকগুলো ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম হচ্ছে ১১০ টাকা। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক ডলার বিক্রিতে ১১০ টাকার বেশি দাম নিচ্ছে। কারণ অনেক এখনো প্রবাসী আয় কিনছে ১১৬-১১৭ টাকায়। যদিও মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রেমিট্যান্সের এই ডলারের দাম ১১২.৫ থেকে ১১৩ টাকায় নেমে গিয়েছিল। অবশ্য ফেব্রুয়ারির শেষে রেমিট্যান্সে ডলারের জন্য ১২০-১২২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এর আগে রেমিট্যান্সে ডলারের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১২৩ টাকা। ব্যাংকাররা জানান, এলসি নিষ্পত্তিতে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা ব্যাংকগুলোকে বেশি দাম দিয়ে হলেও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়ার কারণে এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ৩-৪ টাকা বেড়েছে।