[ ] 29/04/2024
 
ডলারসংকট ঠেকাতে এবার অফশোরে তোড়জোড়
ডলারসংকট ঠেকাতে এবার অফশোর ব্যাংকিংয়ে জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন।

অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভেতরে পৃথক ব্যাংকিংসেবা। প্রচলিত ব্যাংকিং বা শাখার কার্যক্রমের চেয়ে ভিন্ন অফশোর ব্যাংকিং। কারণ এ জাতীয় কার্যক্রমে আমানত গ্রহণ ও ঋণ দেওয়ার দুই কার্যক্রমই বৈদেশিক উৎস থেকে আসে ও বিদেশি গ্রাহকদের দেওয়া হয়। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান এবং বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবসা হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশি যারা বিদেশে আছে, তারা যেন তাদের বিদেশি মুদ্রা বাংলাদেশে এনে ব্যাংকে যোগ করে। আমরাও ভালো একটা ইন্টারেস্ট রেট দেব। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। গত পাঁচ-সাত বছরে ভারত এটাতে খুব সফলভাবে করেছে। ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশ এটাতে বেশ ভালো করেছে। আমরাও আরম্ভ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের যেটা প্রয়োজন সব ব্যাংক এটা ভালোমতো বুঝে এর প্রোডাক্ট তৈরি, মার্কেটিং এবং বিভিন্নভাবে এটাকে প্রমোশন করা দরকার। সেটা কীভাবে কী হবে সে বিষয়ে আজকে আলোচনা হয়েছে। প্রথমে আমাদের যখন বলা হচ্ছিল বাংলাদেশে এই উদ্যোগটা চালু করব, তখন আমরাই চেয়েছিলাম তিন-চার মাস আগে এটা। তাহলে যে আইনগুলো তৈরি করতে হবে, প্রোডাক্টটা আমরা যেন সুন্দর করে চালু করতে পারি, বিশেষ করে যে অ্যাক্টটা দরকার ছিল, ট্যাক্স ফ্রি হবে, এটা সুন্দর করে গভর্নর আমাদের দিয়ে দিয়েছেন। এটা এখন মার্কেটিং দরকার।’

এরই মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংক কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যাংক প্রমোশন শুরু করে দিয়েছে। আমার মনে হয় এ বছরের শেষের মধ্যে বিদেশে আমাদের যে ডলার সেভিংস, এটা একটা অন্য গ্রাহকদের। রেমিট্যান্স যাদের কাছ থেকে আনি এরা তারা না। এরা হচ্ছে তারা, যারা একটু আপার লেভেলের, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লয়ার যারা প্রফেশনাল তাদের কাছ থেকে আমরা (ডলার আনার চেষ্টা করছি) এবং বাংলাদেশের এখন অনেকেই অন্য দেশের নাগরিক। তাদের কাছ থেকেও আমরা আনব। কারণ আমরা তো ভালো ইন্টারেস্ট রেট দিচ্ছি।’

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের পুরো গ্যারান্টি দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো ট্যাক্স চার্জ করা হবে না। আমরা যদি বেটার ইন্টারেস্ট রেট দিতে পারি, ভালো সার্ভিস দিতে পারি নিশ্চয় আমরাও অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের যে দেড় কোটির বেশি বিদেশে থাকে, তাদের যুক্ত করতে পারব। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক ভালো সাফল্য পেয়েছে। প্রায় ৩০-৪০ মিলিয়ন ডলার এসেছে। এটা সবে শুরু হচ্ছে। ধীরে ধীরে সবাই চালু করবে।’

চলমান একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচটা ব্যাংক মার্জার নিজেরাই মার্জারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা সময়মতো তাদের কাজ করতে থাকবে। আমার মনে হয় এটা নিয়ে এত হইচই করার প্রয়োজন নেই। এটা ধীরস্থিরভাবে হবে। যেসব ব্যাংক করতে চাচ্ছে কী চাচ্ছে না, এটা সেসব ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য। ব্যাংক একীভূত পৃথিবী জুড়ে হয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমাদের দেশেও এগুলো আস্তে-ধীরে হবে। এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই।’

এর আগে ২২ এপ্রিল অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের অর্জিত মুনাফা বা সুদের ওপর কোনো কর দিতে হবে না মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আয়কর আইন-২০২৩-এর ধারা ৭৬-এর উপধারার (১) ক্ষমতাবলে এই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো আইনে কোনোপ্রকার কর অব্যাহতি দেওয়া হলে সেই কর অব্যাহতি ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না এনবিআর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অব্যাহতি-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।