Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
৩ ব্যাংকের রমরমা ব্যবসা, দৈন্যদশায় ৯ [ অনলাইন ] 03/07/2025
৩ ব্যাংকের রমরমা ব্যবসা, দৈন্যদশায় ৯
২০২৪ সালটি ছিল তিন ব্যাংকের জন্য স্মরণীয়। কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক মুনাফা প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। কিন্তু, অন্য নয় ব্যাংকের জন্য তা ছিল বড় কঠিন বছর, ক্রমবর্ধমান লোকসান থেকে টিকে থাকার মরণপণ লড়াই।

গত বছরের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কার হওয়ার পর ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা বের হয়ে আসার পর এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কারণ গোপন থাকা খেলাপি ঋণের হিসাব প্রকাশ্যে এসেছে। তবে বর্তমানে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে ব্যাংকিং খাতকে রক্ষার পাশাপাশি এ খাতে প্রশাসনিক উন্নতি নিয়ে কাজ হচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টারের বিশ্লেষণে দেখা গেছে—সুশাসন ও গ্রাহক আস্থার ওপর ভিত্তি করে গত বছর তিন ব্যাংক এক হাজার কোটি টাকার মুনাফার মাইলফলক পার করেছে।

দেশের ৫০ ব্যাংকের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এই বিশ্লেষণটি সাজানো হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ আর্থিক প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ না করায় তা পর্যালোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

মুনাফা অর্জনকারীদের ব্যাংকগুলোর তালিকার শীর্ষে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। গত বছর ব্যাংকটি রেকর্ড তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এটি দেশের কোনো একটি ব্যাংকের বার্ষিক সর্বোচ্চ মুনাফা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছিল দুই হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এরপরের বছর মুনাফা হয়েছে ৪১ শতাংশ বেশি।

ব্র্যাক ব্যাংক, এইচএসবিসি বাংলাদেশ ও সিটি ব্যাংকও প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের বছরের হিসাবে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ৭৩ শতাংশ ও সিটি ব্যাংকের বেড়েছে ৬০ শতাংশ।

বিনিয়োগ পেশাজীবীদের প্ল্যাটফর্ম সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি আসিফ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেউ অনেক বড় মুনাফা করেছে আর কেউ বড় ধরনের ধরা খেয়েছে। এখানে মূল পার্থক্য তৈরি করেছে সুশাসনের তারতম্য।'

তিনি আরও বলেন, 'অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণের ভারে চাপা পড়েছে। এটি জনগণের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। আমানতকারীরা আরও সতর্ক হয়ে উঠেছেন। তাদের টাকা ভালো ব্যাংকগুলোয় সরিয়ে নিয়েছেন। সেসব ব্যাংকে তারা কম হারে সুদ পেলেও তা মেনে নিয়েছেন।'

'ফলে ভালো ব্যাংকগুলো তুলনামূলক কম সুদে আমানত আকৃষ্ট করছে। ট্রেজারি বন্ড থেকেও মুনাফা করছে। এতে মোটের ওপর ব্যাংকগুলোর ভালো মুনাফা হয়েছে।'

এরই মধ্যে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কঠোর নিয়মকানুন মেনে তারা দীর্ঘদিন ধরে গোপন রাখা খেলাপি ঋণের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। বিনিয়োগ বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকগুলোর আর্থিক ক্ষতি গুরুতর ছিল।

বিশ্লেষণে দেখা যায়—২০২৪ সালে ৫০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বছরে ১৫৮ শতাংশ বেড়ে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আগের শাসনামলে খেলাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর।

জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৬৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এবি ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এই তিন ব্যাংকের মোট ক্ষতি হয়েছে এক লাখ আট হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

তালিকায় থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক। এই নয় ব্যাংকে আমানত তিন দশমিক তিন শতাংশ বা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এ খাতে সামগ্রিক আমানত ১২ শতাংশ বা এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা বেড়েছে।

আসিফ খান আরও বলেন, 'সেসব ব্যাংক শুধু অদক্ষই ছিল না, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংকগুলো পদ্ধতিগত চুরি ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত হয়েছে।'

এর আগে অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ গোপন করে কৃত্রিমভাবে তাদের হিসাবে স্বাভাবিক চিত্র তুলে ধরেছিল। তার ভাষ্য—এখন ব্যাংকগুলো তাদের বাস্তবতা মেনে নিচ্ছে। তারা সঠিকভাবে প্রভিশন শুরু করায় মুনাফা কমেছে। তবে এই স্বচ্ছতা শেষ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে সঠিক দিকে পরিচালিত করার উদ্যোগ।

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান স্বীকার করেছেন যে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সম্পদের পুনর্শ্রেণিকরণের কারণে তাদের ব্যাংকের লোকসান হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আগে আমাদের অনেক সম্পদ নিয়মিত হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। এতে প্রত্যাশিত আয় শূন্য হয়ে যায়।'

২০২৪ সালে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ১৭১ শতাংশ বেড়ে ৬২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা হয়।

'পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে' বলে মনে করেন মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, 'গত ছয় মাসে আমাদের খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের মোট পুনরুদ্ধারকে ছাড়িয়ে গেছে। আমরা ঋণখেলাপিদের সম্পদ বিক্রি করছি। মাঠ পর্যায়ের ঋণ আদায়ও বেড়েছে। সময় লাগবে, তবে আমরা পুনরুদ্ধারের পথে আছি।'

এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) জেড এম বাবর খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত খেলাপি ঋণের কারণে গত কয়েক বছর ধরে অনেক সমস্যা হচ্ছে।'

২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবি ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের অনুপাত ছিল ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে বিলম্বিত ঋণও আছে। এটি ২০২৪ সালের মধ্যে পুনরুদ্ধারের আশা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

তিনি আরও বলেন, 'গত বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আমাদের অনেক বড় কর্পোরেট ঋণগ্রহীতা তাদের কিস্তি দিতে পারেনি। আমাদের আর্থিক বিবরণীতে একে খেলাপি ঋণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। তাই সুদ থেকে আসা আয় বাদ দিতে হয়েছে।'

তিনি জানান, তারা এখন বিস্তৃত পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা অনুসারে চলছেন। গত ছয় মাসে এবি ব্যাংক মোট ছয় হাজার ৪০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ২০২৪ সালে ১০ ব্যাংকের আমানত কমেছে ২৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা
• প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকা ব্যাংক
• এজেন্ট ব্যাংকিং বন্ধ ও নতুন সিস্টেমে তথ্য সেবায় নিরাপত্তা ঝুঁঁকি
• উদ্দেশ্য ভালো বলেই ঢাকা ব্যাংক সুনামের সঙ্গে টিকে আছে
• রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের সংকটে মে মাসে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭% এর নিচে
• এনআরবিসি ব্যাংকের অডিট কমিটির সভা
• আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্স ক্যাম্পেইনের পুরস্কার প্রদান
• ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন
• এনআরবিসি ব্যাংকের অডিট কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
• আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্স ক্যাম্পেইনের পুরস্কার প্রদান
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved