Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের সংকটে মে মাসে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭% এর নিচে [ অনলাইন ] 03/07/2025
রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের সংকটে মে মাসে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭% এর নিচে

রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এবং ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাসের অভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যমতে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬.৯৫ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ৯.৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।

এর আগের মাস এপ্রিলে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৫০ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬.৮২ শতাংশ, যা গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতন এবং এরপর থেকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে  বলে মনে করছেন ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বেসরকারি খাতে ঋণ তখনই বাড়বে, যখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। কোনো ব্যবসায়ী অনিশ্চিত পরিবেশে বিনিয়োগে যান না।"

তিনি বলেন, "বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে একদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও খুব একটা উন্নতি হয়নি। ফলে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না।"

"একদিকে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাসের অভাব, অন্যদিকে ব্যাংকখাতও তারল্য সংকটে রয়েছে। দেশের মোট ঋণের প্রায় ২৫ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি। কিছু ক্ষেত্রে ঋণের চাহিদা থাকলেও বিনিয়োগ হচ্ছে না।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকখাত কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মুখে—যেমন খেলাপি ঋণ বাড়ছে, ঋণ বিতরণ কমে যাচ্ছে এবং পুঁজির ঘাটতি রয়েছে—যা নতুন ঋণ প্রদানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ২৫ শতাংশ। এতে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে গুরুতর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এর আগে গত কয়েক মাস ধরেই বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি লক্ষ্য করা গেছে—জানুয়ারিতে ৭.১৫ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৭.২৮ শতাংশ, নভেম্বরে ৭.৬৬ শতাংশ, অক্টোবরে ৮.৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৯.২ শতাংশ, আগস্টে ৯.৮৬ শতাংশ, জুলাইয়ে ১০.১৩ শতাংশ এবং জুনে ২০২৪-এ ৯.৮৪ শতাংশ ছিল প্রবৃদ্ধির হার।

সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে এই মন্দাভাব আরও গভীর হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "এখন ব্যক্তি খাতে ঋণের চাহিদা কম। ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে আছে। পাশাপাশি সরকারও ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিচ্ছে, যা ব্যাংকগুলোর জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হওয়ায় তারা সেখানে বেশি বিনিয়োগ করছে।"

"আমাদের যদি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হয়, তাহলে আমদানি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি বাড়াতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে যেতে পারেন। এতে বাজারে তারল্য বাড়বে এবং ব্যাংকগুলোর ডিপোজিটও বাড়বে," যোগ করেন তিনি।

বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নতুন বাজেট পেশ হয়েছে, আইনশৃঙ্খলার কিছুটা উন্নতিও হয়েছে এবং আমদানি-রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ফলে আগামী মাসগুলোতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে বলে আশা করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ ২.৯৮ শতাংশ এবং নিষ্পত্তির পরিমাণ ৬.০৮ শতাংশ বেড়েছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়।

এই সময়ে আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ৫৮.৯৪ বিলিয়ন ডলারের এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৮.৮২ বিলিয়ন ডলারের।

তবে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ খাতে এলসি খোলায় ও নিষ্পত্তিতে এই সময়ের মধ্যে যথাক্রমে ২৭.৪৬ শতাংশ এবং ২৫.৫৬ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে।

সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, "মূল্যস্ফীতির চাপে আয় না বাড়ায় মানুষের সঞ্চয় কমছে। এর সঙ্গে খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট আরও বাড়বে এবং ব্যবসার জন্য ঋণ পাওয়াও কঠিন হয়ে উঠবে।"

তিনি বলেন, "রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেক শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বেশিরভাগ কারখানা সক্ষমতার তুলনায় কম চলছে এবং ভোক্তা চাহিদা দুর্বল থাকায় ঋণ খেলাপির ঝুঁকিও বাড়ছে।"

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন টিবিএস-কে বলেন, "খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে, ফলে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।"

"এতে করে ব্যাংকগুলোর পক্ষে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে, পাশাপাশি ব্যবসায় সম্প্রসারণেও ঋণ দেওয়া যাচ্ছে না।"

তিনি বলেন, "যেহেতু বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই ঋণ সংকটে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।"
ফাহমিদা আরও বলেন, "ব্যবসায়ীরা এখন উচ্চ খরচের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন, যার ফলে ঋণের চাহিদাও কম।"
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ২০২৪ সালে ১০ ব্যাংকের আমানত কমেছে ২৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা
• প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকা ব্যাংক
• এজেন্ট ব্যাংকিং বন্ধ ও নতুন সিস্টেমে তথ্য সেবায় নিরাপত্তা ঝুঁঁকি
• উদ্দেশ্য ভালো বলেই ঢাকা ব্যাংক সুনামের সঙ্গে টিকে আছে
• ৩ ব্যাংকের রমরমা ব্যবসা, দৈন্যদশায় ৯
• এনআরবিসি ব্যাংকের অডিট কমিটির সভা
• আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্স ক্যাম্পেইনের পুরস্কার প্রদান
• ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন
• এনআরবিসি ব্যাংকের অডিট কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
• আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্স ক্যাম্পেইনের পুরস্কার প্রদান
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved