[ অনলাইন ] 05/07/2025 |
|
|
|
গ্রাহকের ভরসা ও আস্থাই ঢাকা ব্যাংকের বড় অর্জন |
 |
ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ |
আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য হলো, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিওর ৫০ শতাংশ করপোরেট এবং বাকি ৫০ শতাংশ অন্যান্য খাতে, বিশেষ করে এসএমই ও রিটেইলে ভাগ করে দেয়া।
শেখ মোহাম্মদ মারুফ, ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির তিন দশকের পথচলায় অর্জন, সংকট, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহি
প্রতিষ্ঠার তিন দশক পূর্ণ করেছে ঢাকা ব্যাংক পিএলসি। দীর্ঘ এ পথচলায় ব্যাংকটির অর্জন কী?
ঢাকা ব্যাংক ৩০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। দীর্ঘ এ সময়ে ব্যাংকটির অর্জন অনেক। মাত্র ১০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা। দেশের ১৫০টি আউটলেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ঋণ বিতরণ ও আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায়ও ব্যাংকের অবস্থান সন্তোষজনক। পাশাপাশি প্রযুক্তির দিক থেকেও আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। বিশেষ করে গত দেড় দশকে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়েও ব্যাংকটি তার অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে।
অর্জনগুলোর মধ্যে কোনটিকে আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?
আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো গ্রাহকের আস্থা। এটাই আমাদের মূল শক্তি। তারল্য সংকটের সময়েও আমাদের আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। যেখানে অনেক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নিয়েছে, ঢাকা ব্যাংকের তেমন কোনো সহায়তা প্রয়োজন হয়নি। গ্রাহকদের ভরসা ও আস্থাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এছাড়া ঢাকা ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাতে উজ্জ্বলতম ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে পেরেছে।
আপনি গত বছর ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে যোগ দিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন?
পরিবর্তনের অনেক সুযোগ রয়েছে। ঢাকা ব্যাংক একটি ভালো ব্যাংক, তবে ভালো আর খুব ভালোর মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। ব্যাংকটি ৩০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। তবে বর্তমান ব্যাংকিং বাস্তবতায় যেভাবে এগিয়ে যেতে হয়, তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষ করে এসএমই ও রিটেইল খাতে আরো সক্রিয়ভাবে প্রবেশ করতে হবে। এ খাতগুলো নির্দিষ্ট কাঠামো ও মডেল অনুসরণ করে চলে, যা আমাদের ব্যাংকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও সংগঠন কাঠামো—সবকিছু ঠিকঠাক না হলে সাফল্য সম্ভব নয়।
একই সঙ্গে আমাদের ভাবতে হবে, আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল ব্যাংক চালু হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদেরও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ডিজিটাল ব্যাংক যেভাবে গ্রাহক তৈরি ও সেবা দেয়, সেভাবেই আমাদেরও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এ দুই খাতেই কাজ করার বিপুল সুযোগ রয়েছে।
একটি ব্যাংকের সাফল্য নির্ভর করে মানবসম্পদের ওপর। মানুষের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আগের যুগের মডেলে এখন আর ব্যাংক চলতে পারে না। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন অনিবার্য। এসব জায়গায় আমাদের কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে এবং সেদিকেই আমরা জোর দিচ্ছি।
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই মধ্যে নেয়া উদ্যোগগুলো যথেষ্ট মনে করেন কি?
উন্নতির পথ আমরা সবাই জানি, কিন্তু সবাই সে পথে হাঁটে না। বাংলাদেশে বহু সংস্কার প্রতিবেদন হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এখন দরকার সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা। সংস্কার কমিটিতে যারা আছেন, তারা সবাই অভিজ্ঞ ও দক্ষ। ভালো সংস্কার কর্মসূচি আসবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। তাদের সদিচ্ছা থাকাটা মুখ্য। দীর্ঘদিন ধরে যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, সেগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশের মধ্যে মিল রয়েছে। এখনই তা বাস্তবায়নের সময়। নইলে ভবিষ্যতে একই বিষয় নিয়ে হয়তো ভিন্ন আঙ্গিকে আবার আলোচনা করতে হবে।
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের অবস্থান কী?
ব্যাংক তো দেশের অর্থনীতিরই অংশ। তাই সামগ্রিক প্রবণতা থেকে একেবারে আলাদা থাকা সম্ভব নয়। তবে আমরা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছি। যদিও ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে আমাদের খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো গত ৫ আগস্টের পর অনেক প্রতিষ্ঠান লোকজনের হিংসার শিকার হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ভালো উদ্যোক্তাও দেউলিয়া হয়েছেন। রাজনীতি আর ব্যবসা এক করা ঠিক না। ফলে আমাদের কিছু ভালো গ্রাহক সমস্যায় পড়েছেন এবং খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
সরকার পরিবর্তন হয়েছে, সেটা যথার্থই। কিন্তু কভিডের সময় সরকার কর রেয়াত দিল, সে রেয়াতের চার বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনো আমাদের ব্যবসা আগের অবস্থানেই আছে। সে কারণেও অনেক খেলাপি ঋণ বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ব্যবসায় স্থবিরতা এসেছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও হয়তো গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ফলে খাতটির সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নেই। দেশে ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ এখন খেলাপি। আমরাও তো একই বাজারে আছি। তবে আমরা ঋণ বিতরণে সতর্কতা অবলম্বন করি, এজন্য মন্দ ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পেরেছি।
শুরু থেকে ঢাকা ব্যাংক করপোরেট ফোকাস ব্যাংক হিসেবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এখনো কি তাই?
২০১০ সাল পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংকই করপোরেট খাতে মনোযোগী ছিল। রিটেইল ও এসএমই ব্যাংকিংয়ের জন্য তখনো কোনো স্পষ্ট কাঠামো দাঁড়ায়নি। এমনকি এইচএসবিসির মতো আন্তর্জাতিক ব্যাংকও এক সময় রিটেইল বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে সময় বদলেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এখনই রিটেইল ব্যাংকিংয়ের জন্য উপযুক্ত সময়। জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য এসএমই খাত অপরিহার্য। আমরা এখন এসএমই ও রিটেইলে গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে এর মানে এই নয় যে করপোরেট খাতকে ছেড়ে দিচ্ছি। বরং আমরা সব খাতে সমানভাবে এগোতে চাই।
এক্ষেত্রে ব্যাংকের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা আছে কি?
আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য হলো, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিওর ৫০ শতাংশ করপোরেট এবং বাকি ৫০ শতাংশ অন্যান্য খাতে, বিশেষ করে এসএমই ও রিটেইলে ভাগ করে দেয়া।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ঢাকা ব্যাংকের ভূমিকা কেমন?
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এখন ব্যাংক খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত বছর আমরা প্রায় আট লাখ নতুন হিসাব খুলেছি। বিকাশের মাধ্যমে ‘ন্যানো ডিপিএস’র মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়েছি। কুড়িগ্রাম বা নেত্রকোনার প্রান্তিক জনগণ এখন ৫০০ টাকার সঞ্চয় দিয়েও ডিপিএস শুরু করতে পারছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা ব্যাংকের অ্যাপের মাধ্যমে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই হিসাব খোলা যাচ্ছে। আমরা স্কুল ব্যাংকিং করছি, শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ আছে। আমরা শুধু গ্রাহকদের ঋণ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করি না, তাদের আর্থিক সাক্ষরতা ও ব্যবসা পরিচালনায়ও সহায়তা করি। ভবিষ্যতের বিনিয়োগ পরিকল্পনাও আমরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে সাজাচ্ছি।
ঢাকা ব্যাংক নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই।
আমার লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা ব্যাংককে দেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে নিয়ে যাওয়া। এটি হবে গ্রাহকসেবার গুণমান, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও সময়োপযোগী প্রডাক্টের মাধ্যমে। যদি এসব ঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকের সম্পদ ও আমানতের আকার বাড়বে। দিনশেষে আমি চাই গ্রাহকরা সেরা সেবা পাক এবং অংশীদাররা বাজারের সর্বোচ্চ রিটার্ন লাভ করুক।
তিন দশক পূর্ণ করা উপলক্ষে ব্যাংকের গ্রাহকদের উদ্দেশে আপনার বার্তা কী?
আমাদের সঙ্গে তিন দশক থাকার জন্য প্রথমেই গ্রাহকদের ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতের সব কার্যক্রমই গ্রাহককেন্দ্রিক হবে। তাদের জন্য আরো সহজ, দ্রুত ও প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজড সেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
 |
|