প্রশ্ন : এই মুহূর্তে এক্সিম ব্যাংকের অবস্থা কী?
উত্তর : দেশে রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক শীর্ষস্থানীয় রপ্তানি আয় আহরণকারী ব্যাংকের একটি। সরকার বদলের পর এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠিত হলেও টাকা তুলতে গিয়ে কোনো গ্রাহক সমস্যায় পড়েননি। গত ৯ মাসে ব্যাংকটির গ্রাহকরা প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন। এ ছাড়া খেলাপি ঋণে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায়ও এক্সিম ব্যাংক নেই।
অন্য অনেক ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়লেও এক্সিম ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নেই। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব বিবেচনায় পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে, তার কোনোটিতেই এক্সিম ব্যাংক পড়ে না।
প্রশ্ন : কেন মনে করছেন এক্সিম ব্যাংক আলাদা?
উত্তর : আমাদের আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের যে ব্যবসা আছে, তা অন্য চার ব্যাংকের চেয়ে বেশি। এসব ব্যাংক মিলে একটা সরকারি ব্যাংকে রূপান্তর করা হলে তা কোনোভাবেই ভালো হবে না।
আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত মানতে পারছি না। কোনো ব্যাংকের একা চলার মতো সামর্থ্য থাকলে তাকে যেমন একা চলতে দেওয়া উচিত। আমরা এখন কোনো সাহায্য ছাড়াই চলতে পারছি। কিন্তু হঠাৎ মার্জারের সিদ্ধান্ত।
পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করতে গিয়ে তিনি এক্সিম ব্যাংক কেন এখানে ঢোকাচ্ছেন, এটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য, কয়েক মাসের মধ্যে একীভূত হতে যাচ্ছে এক্সিম, গ্লোবাল, ইউনিয়ন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর বর্তমান কার্যক্রমে, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে প্রবাসী আয় দেশে আনার ক্ষেত্রে অন্য চার ব্যাংকের চেয়ে বেশ এগিয়ে এক্সিম ব্যাংক। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যেখানে ২৮ শতাংশ, সেখানে এর দ্বিগুণের বেশি ৫৮ শতাংশ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের। আর শতভাগ খেলাপি ঋণের দিকে হাঁটা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের রয়েছে ৯৩ শতাংশ, গ্লোবাল ব্যাংকের ৯৪ ও ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ শতাংশ।
কোনোভাবেই একীভূত হতে চায় না এক্সিম ব্যাংক। বাকি চারটি ব্যাংকের মোট ব্যবসা এক্সিম ব্যাংকের থেকে কম। তাই এসব ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংককে কোন মানদণ্ডে একীভূত করা হচ্ছে এটি বোধগম্য নয়।
প্রশ্ন : নিজে চলতে পারার সক্ষমতা কতটুকু ব্যাংকটির?
উত্তর : পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে চার ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের তুলনা চলে না। ওই চারটি ব্যাংকের মালিকানা এস আলম গ্রুপের কাছে ছিল। এসব ব্যাংক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এক্সিমের ক্ষত ততটা নয়। তাই আমরা এখন একা একা চলতেই সক্ষম। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুধু ঘোষণা আসতে হবে যে এক্সিম ব্যাংক অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হবে না।
প্রশ্ন : আপনার সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
উত্তর : এই মুহূর্তে তুলনামূলক দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের ঘোষণায় অনেক গ্রাহক ডিপোজিট সংরক্ষণ বন্ধ রেখেছেন। ক্ষেত্রবিশেষে করপোরেট গ্রাহকও তাদের সঞ্চয় ফেরত চাচ্ছেন। এতে নতুন করে চাপে পড়েছে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংক। মার্জার চাপ সামাল দেওয়াই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন : এখন কি সব গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন?
উত্তর : অবশ্যই। কোনো গ্রাহক খালি হাতে ফেরত যায় না। আমরা পাঁচ লাখ ১০ লাখ টাকাও পেমেন্ট করছি। কিন্তু যেসব করপোরেট গ্রাহক পাঁচ কোটি বা ১০ কোটি টাকা চাচ্ছে তাদের আমরা বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখছি।
প্রশ্ন : এসএমই, কৃষি ও তথ্য-প্রযুক্তিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছিলেন, সেটার কী অবস্থা?
উত্তর : একের পর এক চাপে সোজা হয়ে দাঁড়ানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এখন আমরা শুধু রিকভারির দিকে নজর দিচ্ছি। তবে অবশ্যই এসএমই, কৃষি খাতে আমাদের বিনিয়োগ বাড়বে। একই সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সব কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের সচেতন করা হবে।
প্রশ্ন : এক্সিম ব্যাংকের দীর্ঘ পথচলায় সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কী?
উত্তর : গ্রাহকরা (ক্লায়েন্ট) আমাদের সম্পদ। ভালো ভালো গ্রাহক রয়েছেন আমাদের। গুটিকয় ক্লায়েন্ট রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া এই ব্যাংকের বেশির ভাগ ক্লায়েন্ট এক্সিলেন্ট। ২০২৪ সালে এক্সিম ব্যাংক আমদানি-রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ৫০ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার ব্যবসা করে। আর চলতি বছরে মে মাস পর্যন্ত ব্যবসা করেছে ১৮ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, যা বাকি চার ব্যাংকের চেয়ে বেশি। গত ১০ মাসে এক্সিম ব্যাংকে নতুন আমানত এসেছে ১০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম স্বপন : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।