Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
ব্যাংকে ফিরছে ঘরের টাকা [ অনলাইন ] 05/07/2025
ব্যাংকে ফিরছে ঘরের টাকা
তারল্য বাড়বে
২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকিং খাতে আস্থা কিছুটা ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা আবার ব্যাংকে ফিরছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক লক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ মার্চ মাসের তুলনায় প্রায় ১৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা কমেছে। এর আগে মার্চে তা হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল। মূলত ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দুর্নীতির কারণে মানুষ আগে টাকা ব্যাংকে না রেখে বাসায় রাখতে শুরু করে। এতে করে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট দেখা দেয়। এ আস্থা ফিরে আসার প্রভাবে টাকার প্রবাহ আবার ব্যাংকমুখী হচ্ছে।

এ ছাড়া ডিজিটাল লেনদেন, মোবাইল ব্যাংকিং এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমে যাওয়ায় নগদ টাকা হাতে রাখার প্রবণতাও কমেছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শুধু মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকাই নয়, বাজারে প্রচলিত টাকা (কারেন্সি ইন সার্কুলেশন) এবং রিজার্ভ মানির পরিমাণও কমেছে যথাক্রমে ১৮ হাজার ৪৭৬ কোটি ও ২২ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতে নগদ টাকা কমে যাওয়ার অর্থ হলো মানুষ আবার ব্যাংকে আমানত রাখতে আগ্রহী হচ্ছে, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য ইতিবাচক। এতে করে ব্যাংকের তারল্য বাড়বে, বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ কমেছে ১৯ হাজার ৬৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর আগে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছিল ২৪ হাজার ৯৩৬ কোটি। একই সঙ্গে এপ্রিলে ছাপানো টাকা (রিজার্ভ মানি) কমেছে ২২ হাজার ৮৮ কোটি এবং বাজারে প্রচলিত টাকা (কারেন্সি ইন সার্কুলেশন) কমেছে ১৮ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬ লাখ।

ব্যাংকাররা বলছেন, এ প্রবণতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ডিজিটাল লেনদেন এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (বিকাশ, রকেট, নগদ) কারণে মানুষ এখন আগের চেয়ে সহজে এবং দ্রুত টাকা লেনদেন করতে পারছে। এর ফলে হাতে নগদ টাকা রাখার প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। জিনিসপত্রের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আসায় তারা আগের মতো বেশি টাকা হাতে রাখতে চাচ্ছে না। এ ছাড়া অতীতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রাখার প্রবণতা দেখা গেলেও সরকার পরিবর্তনের পর মানুষ ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই মানুষের হাতে নগদ বা ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ কমতে থাকে। গত বছরের আগস্টে মানুষের হাতে বা ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ। আর পরের মাস সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ; অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি ৭ লাখ; নভেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি ৭ লাখ; ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি ৫ লাখ; চলতি বছরের জানুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি ৯ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের মার্চে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ এপ্রিলে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা।

ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিক কমেছিল ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ। কিন্তু নভেম্বর থেকে আবার বাড়তে শুরু করে। যেটা গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি। পরের মাস নভেম্বরে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি, জানুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি, মার্চে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি, এপ্রিলে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি, মে মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি, জুনে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি, জুলাইয়ে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৩০ কোটি ও আগস্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১০ মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়েছে ৪৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ বেশি হয়। এজন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখে। তারপর ব্যাংক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে কিছু ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থাও নষ্ট হয়েছিল। মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছিল। এখন আস্থায় ফেরায় মানুষ আবার ব্যাংকে টাকা রাখছে।

এদিকে, মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ কমার পাশাপাশি বাজারে মুদ্রা সরবরাহের পরিমাণও কমেছে। তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার স্থিতি (রিজার্ভ মানি) ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। পরের মাস এপ্রিলে সেটা কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৪৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মুদ্রা সরবরাহ কমেছে ২২ হাজার ৮৮ কোটি ১ লাখ টাকা। তবে আগের মাস মার্চে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছিল ২৮ হাজার ১৩০ কোটি ৭ লাখ টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ কোটি ৯ লাখ টাকা।

তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে বাজারে প্রচলিত টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬০ কোটি ৮ লাখ। আর পরের মাস এপ্রিলে প্রচলিত টাকার পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ২ হাজার ৬৮৪ কোটি ২ লাখ। সেই এক মাসে বাজারে প্রচলিত টাকার পরিমাণ কমেছে ১৮ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬ লাখ।

এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি কালবেলাকে বলেন, নগদ টাকার ব্যাংকমুখী হওয়া দেশের তারল্য ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি আনবে এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে সহায়ক হবে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অটুট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ হ্রাস পাওয়া এবং তা পুনরায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রবাহিত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। এটি শুধু ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরে আসার লক্ষণ নয়, বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতার প্রতিফলন। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর যেভাবে ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে এটি যাতে স্বল্পমেয়াদি ধারা হয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে সচেতন থাকতে হবে। 
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• যমুনা ব্যাংকের ডিএমডি হলেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম
• ইসলামী ব্যাংকের সাথে ড্যাফোডিল কম্পিউটারসের চুক্তি
• নেত্রকোনায় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স
• আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্স ক্যাম্পেইনের পুরস্কার প্রদান
• আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপশাখার উদ্বোধন
• ব্যাংকের বাইরেও করা যাবে ই-মানি ইস্যুকারী কোম্পানী
• প্রেস বিজ্ঞপ্তি
• প্রেস বিজ্ঞপ্তি
• সরকারের ঘাড়ে ঋণের বোঝা
• এক্সিম ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রস্তাব মানতে পারছি না
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved