[ অনলাইন ] 09/07/2025 |
|
|
|
খেলাপি সংস্কৃতি রোধে বিশেষ আদালত গঠন জরুরি |
 |
|
অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মতো অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত ১৫ বছরে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকটির ঋণ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০ সালে যেখানে মোট ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ ছিল খেলাপি, ১৫ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশে। প্রকৃত চিত্র আসলে তা হয়ত হতে পারে মোট ঋণের ৫০ শতাংশ। এই কঠিন বাস্তবতায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাংকটির নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ, গ্রাহকসেবার মানোন্নয়ন এবং ব্যাংককে একটি সুদৃঢ় ও গ্রাহকবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি, বড় চ্যালেঞ্জ, খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল এবং ডিজিটাল ও ক্ষুদ্র ঋণ খাতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক খোলা কাগজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আলতাফ হোসেন।
খোলা কাগজ : বর্তমানে ব্যাংক খাতে এক ধরনের সংকট চলছে। সেখানে আপনার ব্যাংকের অবস্থান কী? বখতিয়ার আহমেদ : ব্যাংকিং খাতের চলমান অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব এই অস্থিরতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে। গত ১৬ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসন হয়েছে, যার ফলে পুরো খাতটিই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই সময়কালে ব্যাপক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করে প্রকৃত অবস্থা আড়াল করা হয়েছে। ফলে সেসময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানো হতো। তবে বর্তমানে আমরা যখন এসব ঋণ যাচাই-বাছাই করছি, তখন সেগুলোর আসল চেহারা বেরিয়ে আসছে, যার ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- গত ১০ মাসে নতুন করে কোনো খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়নি, যা একটি ইতিবাচক দিক।
খোলা কাগজ : ব্যাংকের সামগ্রিক অবস্থান ও বড় চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবিলা করছেন? বখতিয়ার আহমেদ : বর্তমানে আমাদের আমানত ও ঋণের অবস্থান মোটামুটি স্থিতিশীল। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- আমদানি ও রফতানিতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম অবস্থানে রয়েছে। রেমিট্যান্স খাতেও আমরা নিয়মিতভাবে শক্ত অবস্থানে আছি- সব সময়ই ইসলামী ব্যাংকের পর দ্বিতীয় স্থানে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও আমাদের এই পারফরম্যান্স দেখে বিস্মিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক হিসেবে ডলারের রেট বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সীমার বাইরে আমরা দিতে পারি না, যেটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যার ফলে মূলধনে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তবে আমরা ইতোমধ্যেই খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
খোলা কাগজ : ডিজিটাল ব্যাংকিং ও ক্ষুদ্র ঋণ খাতে অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? বখতিয়ার আহমেদ : ডিজিটাল সার্ভিসের ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যাংক পিছিয়ে নেই- ৯৭৯টি শাখায় অনলাইন সার্ভিস চালু রয়েছে। গর্বের বিষয়, অগ্রণী ব্যাংকে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ কিংবা অ্যাননটেক্সের মতো বড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটেনি। এই ধারাবাহিকতা আমরা ভবিষ্যতেও বজায় রাখতে চাই। আমরা কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণ দিয়ে থাকি এবং ভবিষ্যতে এই খাতে আরো ঋণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ, এই খাতে খেলাপির সম্ভাবনা খুবই কম এবং দেশের উন্নয়নে প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান রাখছে এই খাত। অথচ এখাতে অনেকেই ঋণ পায় না। আমরা সেই গ্যাপ পূরণ করতে চাই। বর্তমানে নতুন করে করপোরেট খাতে কোনো ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। তবে চলমান ঋণগুলো ব্যবসার পরিধি অনুযায়ী পর্যালোচনা করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো সচল থাকতে পারে।
খোলা কাগজ : খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো নতুন পরিকল্পনা নিয়েছেন কি? বখতিয়ার আহমেদ : পরিকল্পনা তো অবশ্যই রয়েছে। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে- চাইলেই মুহূর্তে খেলাপি ঋণ আদায় করা যায় না। এর জন্য একটি নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, আর সেই প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে গেলেও কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতা। সেই জটিলতা শেষ করতে করতেই সময় চলে যায়। তাই আমি মনে করি, সরকারের উচিত খেলাপিদের জন্য একটি বিশেষ আদালত গঠন করা, যেখানে দ্রুততার সঙ্গে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। এতে করে কেউ আর সহজে খেলাপি হতে চাইবে না।
এখন এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে, যেখানে বছরের পর বছর ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিয়েও খেলাপিরা দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। এটা বন্ধ করতে হলে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। যাতে অল্প সময়ের মধ্যে খেলাপিদের সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ আদায় করা যায়। তবে সম্পদ বিক্রিতেও রয়েছে আরেক সমস্যা- বাজারমূল্যে সম্পদ বিক্রি করতে গেলেই সেখানে সিন্ডিকেট জড়িত হয়ে পড়ে। এই সিন্ডিকেট আগে থেকেই পরিকল্পনা করে, কিভাবে কম দামে সম্পদ কিনে নেওয়া যায়, এমনকি আদালত থেকেও নিজেদের পক্ষে রায় নিয়ে আসে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে সময় লাগবে, কিন্তু এটা করতেই হবে। সিন্ডিকেট না ভাঙলে খেলাপি সংস্কৃতি কখনোই বন্ধ হবে না। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
 |
|