Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
২১ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে [ অনলাইন ] 13/07/2025
২১ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে
গত বছর অস্থিরতার মধ্যেও দেশের ২১ ব্যাংক খেলাপি ঋণের অনুপাত মোট ঋণের পাঁচ শতাংশের নিচে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিপর্যস্ত এই খাতে খেলাপি ঋণের গড় ১৬ দশমিক আট শতাংশে পৌঁছে ছিল।

ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সুশাসন, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ, আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও ঋণ পুনরুদ্ধারে জোর দেওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। বহুজাতিক ব্যাংকের পাশাপাশি কয়েকটি দেশি ব্যাংক এসব নীতি মেনে চলেছে।

নতুন ব্যাংকগুলো বাদ দিলে সিটি ব্যাংক এনএ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ২০২৪ সালে খেলাপি ঋণের অনুপাত এক শতাংশের নিচে রেখেছে। তবে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম।

এইচএসবিসি বাংলাদেশ ও ব্যাংক আল-ফালাহর খেলাপি ঋণের অনুপাত দুই শতাংশের নিচে।

বিশ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করে শীর্ষে আছে ব্র্যাক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক। প্রতিটি ব্যাংকের খেলাপি তিন শতাংশের নিচে।

ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাসরুর আরেফিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, খেলাপি ঋণ অনুপাত কম রাখার মূল চাবিকাঠি হলো সুশাসন।

তিনি বলেন, 'একটি সু-পরিচালিত ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা দলকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। বোর্ড সদস্যদের ঋণ অনুমোদনের জন্য চাপ দেওয়া উচিত নয়।'

ঋণ বিভাগকেও ঋণ মূল্যায়নে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

'ক্রেডিট রিস্ক টিম যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমবে' বলে মনে করেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।

উরি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকের খেলাপি তাদের মোট ঋণের তিন থেকে পাঁচ শতাংশ।

ট্রাস্ট ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়ার ঋণ খেলাপির অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে। ২০২৪ সালের গড় ছিল ১৬ দশমিক আট শতাংশ।

ইস্টার্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অনুপাত তিন শতাংশের নিচে থাকার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আলী রেজা ইফতেখার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণ উদ্ধারে আমরা সবসময় দক্ষ ও নিবেদিত কর্মীদের নিয়ে কাজ করাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।'

'২০২৪ সালের মতো কঠিন বছরের মুখোমুখি হয়েও আমরা ঋণ গ্রহীতাদের কঠোর পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং যোগ্য কর্মীদের এনে ঋণ পুনরুদ্ধার দলকে শক্তিশালী করেছি।'

তাদের প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সম্প্রসারণ ও খেলাপি কমাতে সমানভাবে মনোযোগ দিচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে অনেক কৌশল খাটানো হয়েছে।'

নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সীমান্ত ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সিটিজেনস ব্যাংকের খেলাপি অনুপাত শূন্য থেকে পাঁচ শতাংশ।

২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা ৫০ ব্যাংকের মধ্যে নয় ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণের অনুপাত ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। অন্য ১১ ব্যাংকের অনুপাত ২০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে।

সিটি ব্যাংক এনএ বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাহী মামুন রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ ঝুঁকির ক্ষেত্রে সতর্কতা, পর্যবেক্ষণ ও ঝুঁকিতে থাকা সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত পদ্ধতি বজায় রেখেছে।'

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকে কাজ করা এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'বিদেশি ব্যাংকগুলো কঠোর আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও অব্যাহত ঋণ পর্যালোচনা মেনে চলে।'

ঋণ বকেয়া হওয়ার আগে ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করতে বিশেষ কমিটি নিয়মিত বৈঠক করে। এগুলোর মাধ্যমে প্রায়ই ঋণ খেলাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলেও জানান তিনি।

গত বছর আট ব্যাংকের অর্ধেকের বেশি ঋণ খেলাপি হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির কারণে এমনটি হয়েছে। বিপরীতে ২১ ব্যাংক শক্তিশালী সুশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ পাঁচ শতাংশের নিচে রেখেছে।

বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি ঋণের অনুপাত নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ২০২৪ সালে এই তালিকায় ছিল সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

ইউনিয়ন ব্যাংক এখনো ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা হয়। এটি এই ব্যাংকের বকেয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অনুপাত সাড়ে ৮৭ শতাংশ।

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানের ঋণ ভুলভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। পারফর্মিং অ্যাসেট হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ব্যাংকের মুনাফাকে বেশি করে দেখানোয় লভ্যাংশ দিতে হয়েছে।'

তিনি জানান, গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত নতুন বোর্ডে এসব অনিয়ম সামনে আসে।

মোহাম্মদ আবদুল মান্নান আরও বলেন, 'নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর খুচরা আমানত আকর্ষণ, সাড়ে ১০ লাখ নতুন হিসাব খোলা ও সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি আমানতের ওপর নজর দিয়েছে ব্যাংকটি।'

এ ছাড়াও ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

'ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত না হওয়া অনেককে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এই ব্যাংকের ভেতরের জালিয়াতি এখন বন্ধ হয়েছে।'

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক সম্পদ নিয়মিত হিসেবে দেখানো হয়েছিল। সেগুলো ২০২৪ সালে শ্রেণিকৃত করা হয়েছে।'

জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০২৪ সালে ১৭১ শতাংশ বেড়ে হয় ৬২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এটি সেই ব্যাংকের মোট ঋণের ৬২ শতাংশ।

তারপরও পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বলে মনে করেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'গত ছয় মাসে ঋণ পুনরুদ্ধার ইতোমধ্যে পুরো ২০২৪ সালের তুলনায় ছাড়িয়ে গেছে। আমরা খেলাপিদের সম্পদ বিক্রি করে ঋণ আদায় বাড়াচ্ছি। সময় লাগবে, তবে পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে।'

বেসিক ব্যাংকের খেলাপি অনুপাত সাড়ে ৬৭ শতাংশ ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৬৪ শতাংশ। বছর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৬১ শতাংশ।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারানোর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি বিদেশি গ্রুপের
• ২১ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে
• এমটিবি ফাউন্ডেশন ও ইউসেপ বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
• শীর্ষ ৮ গ্রুপের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংকের বিশেষ তদন্ত শুরু
• ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দিনব্যাপী সাসটেইনেবিলিটি সামিট
• বিশেষায়িত তিন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা
• Navigating the evolution of Islamic finance credit ratings
• Navigating the evolution of Islamic finance credit ratings
• ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণে বিপর্যস্ত ইউনিয়ন ব্যাংক
• স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বিজনেস রিভিও মিটিং অনুষ্ঠিত
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved