আগামী ২০০৪-২৫ অর্থবছরের দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার নতুন বার্ষিক উন্নয়ন
কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এই আকার
চলতি বছরের সংশোধিত এডিপির আকারের চেয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে এই
এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি খাত থেকে অর্থায়ন কমিয়ে বৈদেশিক ঋণের
পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা আসবে জিওবি থেকে আর এক লাখ
কোটি টাকা জোগান দেয়া হবে বিদেশী ঋণ থেকে। বরাদ্দ কমালেও ধারাবাহিকভাবে
এবারো পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা
বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, যা মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২৬.৬৭ শতাংশ।
নতুন প্রকল্প এক হাজার ২২৫টি। পরিকল্পনা সচিব ও আইএমইডি সচিব জানান, বৈঠকে
প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নের হার আগের বছরের তুলনায় কম হওয়ায় অসন্তোষ
প্রকাশ করেছেন। তিনি এই বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে বলেছেন।
রাজধানীর
আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন
কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল
অনুষ্ঠিত সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন
নির্দেশনা দেন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে। সভাশেষে এক ব্রিফিংয়ে
পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব:) আবদুস সালাম, প্রতিমন্ত্রী
শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব সত্যজিত কর্মকার এসব তথ্য
জানান।
পরিকল্পনা সচিব বলেন, বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান বৈশ্বিক
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে কৃষি,
কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ খাত, শ্রম-শক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য
হ্রাসকরণ সংক্রান্ত প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আর দুই লাখ ৬৫ হাজার
কোটি টাকার মূল এডিপি ছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ১৩
হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ
উৎস হতে অর্থায়ন ১১ হাজার ৬৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস হতে
অর্থায়ন এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ফলে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা
কর্পোরেশনের প্রকল্পের বরাদ্দসহ এডিপি’র সর্বমোট আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ
৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা এক
হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ১৩৩টি, সমীক্ষা প্রকল্প
২১টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮৭টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা
কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প ৮০টি। তবে ১০টি খাতে বরাদ্দ দেয়া
হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা মোট বরাদ্দের ৯০.২৫ শতাংশ।
আর ১০টি মন্ত্রণালয়কে এক লাখ ৮৬ হাজার ৯৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বা ৭১.৮৮
শতাংশ।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০ মন্ত্রণালয় : চলতি এডিপি তুলনায়
কমলেও স্থানীয় সরকার বিভাগকে সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা
১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে ৩২ হাজার ৪২ কোটি
৪৩ লাখ টাকা বা ১২.৩৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগকে ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি ৭০ লাখ
টাকা বা ১১.২৮ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয়কে ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা
৫.৩১ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে ৪.৪০ শতাংশ বা ১১ হাজার ৩৮৭
কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি ৭০
লাখ টাকা বা ৪.৯৮ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি ৩৩ লাখ
টাকা বা ৫.৩১ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি
৫২ লাখ টাকা বা ৬.২৪ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ৪.০১ শতাংশ বা ১০ হাজার
৩৭৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি ০৯ টাকা বা
৩.৩৬ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
১৫টি খাতে
বরাদ্দ : চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে নতুন এডিপিতে সাধারণ সরকারি
সেবায় বরাদ্দ বেড়ে দুই হাজার ১১৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, প্রতিরক্ষায় কমে ৭১০
কোটি এক লাখ টাকা, জন শৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় কমে তিন হাজার ৩০৮ কোটি ১৩ লাখ
টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় বেড়ে ছয় হাজার ৪৯২ কোটি ১৮ লাখ টাকা, কৃষিতে
বেড়ে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে কমিযে ৪০ হাজার
৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে কমিয়ে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬
লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে কমিয়ে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ
টাকা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদে বাড়িয়ে ১১ হাজার ৮৯ কোটি ৪৩
লাখ টাকা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলিতে কমিয়ে ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি তিন লাখ
টাকা, স্বাস্থ্য খাতে বাড়িয়ে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, ধর্ম,
সংস্কৃতি ও বিনোদনে বাড়িয়ে তিন হাজার ৪৯১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, শিক্ষা খাতে
বাড়িয়ে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে চার হাজার ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা, সামাজিক
সুরক্ষায় কিছুটা কমিয়ে তিন হাজার ৩০৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা
হয়েছে।
বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প : আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত
এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প সংখ্যা মোট এক হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে
২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি হতে নতুন এডিপিতে স্থানান্তরিত হচ্ছে এক
হাজার ২৭৭টি (বিনিয়োগ প্রকল্প ১,১০৩টি, সমীক্ষা প্রকল্প ১৯টি ও কারিগরি
সহায়তা প্রকল্প ৭৯টি এবং নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ৭৬টি)। বিভিন্ন
মন্ত্রণালয়/বিভাগ হতে প্রস্তাবিত নতুন অনুমোদিত ৬০টি (বিনিয়োগ ৪৬টি সমীক্ষা
প্রকল্প চারটি কারিগরি সহায়তা সাতটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন তিনটি)
প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা
সচিব বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশী অর্থায়ন বাড়ানো হয়নি। আগের মতোই একই
শতাংশ। তবে অঙ্কের দিক দিয়ে বেশি। এখানে জিওবিতে কিছু কমিয়ে বিদেশী অর্থায়ন
বাড়িয়ে এক লাখ কোটি টাকা করা হয়েছে।