Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বিনিময় হার নিয়ে বরফ গলতে শুরু করেছে [ অনলাইন ] 13/05/2025
বিনিময় হার নিয়ে বরফ গলতে শুরু করেছে
নির্ধারিত সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির টাকা পায়নি বাংলাদেশ। শর্তের বেড়াজালে আটকে দিয়েছে আইএমএফ। তবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলছে দুই পক্ষের সিরিজ বৈঠক। মূলত ডলারের বিনিময় হার উš§ুক্ত করা তথা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আইএমএফের শর্ত পালনে বাংলাদেশের অনীহায় আটকে আছে দুই কিস্তির অর্থ। কারণ সরকারের আশঙ্কা, বিনিময় হার উš§ুক্ত করলে আমদানি ব্যয় এবং ঋণের বোঝা বাড়বে বাংলাদেশের, যাতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ অর্থনীতিতে নানা ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সরকার চাচ্ছে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি যেন আর না বাড়তে পারে। এ অবস্থায় সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, আইএমএফ এই শর্তের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হতে পারে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, বিনিময় হার উš§ুক্ত করলে ডলারের দাম পাকিস্তানের মতো ২৮০ টাকা কিংবা শ্রীলংকার মতো ৪০০ টাকায় পৌঁছতে পারে। বিনিময় হারের শর্ত মেনে নিলে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটতে পারে, যা ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দেবে। যদি ডলারের হার ১৮০ টাকা বা তার ওপরে চলে যায়, তাহলে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধে আমাদের ব্যয় হবে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। তাই সিরিজ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি বোঝানোয় চেষ্টা করা হচ্ছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ওয়াশিংটন ডিসিতে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বিনিময় হারের নমনীয়তা নিয়ে কোনো সমঝোতা ছাড়াই আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক থেকে ফিরে আসেন বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তবে ঋণের টাকা পেতে গত ৫ মে থেকে সিরিজ বৈঠক চলছে। ৫ মে সোমবার সন্ধ্যায় জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিনিময় হারের নমনীয়তা নিয়ে কোনো সমঝোতা ছাড়াই আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে জুম মিটিং চলছে। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনেও বৈঠক হয়েছে। তবে রবিবার পর্যন্ত উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন। এ বিষয়ে গতকাল সোমবারও জুম মিটিং হয়েছে। গতকালের বৈঠকও সুরাহা ছাড়াই শেষ হয়েছে। সিরিজ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও কবির আহমেদও যুক্ত ছিলেন।

এর আগে আইএমএফের বৈঠক থেকে ফিরে এসে অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, বিনিময় হার উš§ুক্ত করার বিষয়টি যদি দেশের জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে বাংলাদেশ সংস্থাটির চলমান ঋণ কর্মসূচিতে থাকবে কিনা তা নতুন করে বিবেচনা করবে। ভবিষ্যতে যদি ঋণের কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত এই শর্তের ওপর নির্ভর করে, তাহলে বাংলাদেশ আইএমএফ কর্মসূচিতে থাকবে কিনা, সে বিষয়টি আবার ভাববে। আমরা এমন অবস্থায় নেই যে, আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। সরকারও তাদের অর্থায়নের জন্য মরিয়া নয়।

অন্যদিকে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক ঋণ দাতা সংস্থাগুলোর থেকে পাইপলাইনে থাকা প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে। এতে দেশে বড় ধরনের আর্থিক ধাক্কায় পড়বে। যা সাময়িকভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি সামাল দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তা ছাড়া পরে আপৎকালীন বা বাজেট সহায়তায় ফের ঋণের জন্য আইএমএফের শরণাপন্ন হলে আরও কঠিন থেকে কঠিনতর শর্তের জালে আটকা পড়তে হবে বাংলাদেশকে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে গেলে আপাতত তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কারণ বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার আছে। আর আইএমএফের হিসাবে এই মজুদ ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলার। ফলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এই ঋণ কর্মসূচিতে না থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে ভবিষ্যতে আবার ঋণ প্রয়োজন হলে সমস্যা হতে পারে। সেই বিষয়টা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে গেলে অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণ দাতা সংস্থাগুলোর ঋণ কর্মসূচিও আটকে যেতে পারে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫০০ মিলিয়ন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ৪০০ মিলিয়ন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ২৫০ মিলিয়ন এবং যে আইএমএফের সঙ্গে ঝামেলা চলছে তাদের এক বিলিয়নের ওপরে অর্থ পাইপলাইনে রয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের পক্ষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একাধিক ভারতীয় ব্যক্তি রয়েছেন। ওই বসব ব্যক্তিই মূলত শর্ত নিয়ে বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যাতে বাংলাদেশ হয় শর্ত পালন করতে বাধ্য হয় বা এই ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু পর্যালোচনা কমিটির অন্য প্রতিনিধিরা অতটা কঠোরতা দেখাচ্ছেন না। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নজরেও এসেছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ডিসেম্বর মাসে ডলারের নির্দিষ্ট দাম ধরে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামার একটি সীমা বেঁধে দেয়। তখন বলা হয়, ১২৩ টাকা পর্যন্ত ডলার লেনদেন করা যাবে। এখন ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা করছে ব্যাংকগুলো।

জানা গেছে, শুরুতে আইএমএফ বিদেশি মুদ্রার বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার অবস্থানে ছিল। যা বাজারই নির্ধারণ করবে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রার দাম কত হবে। কিন্তু এখন অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করে কিছুটা নমনীয় হয়ে বলছে, ডলারের নির্দিষ্ট দাম ধরে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামার যে সীমা রয়েছে সেই সীমা আরও বাড়িয়ে দিতে। তবে বাংলাদেল পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। ফলে আগামী ২৩ মে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের দুই কিস্তির টাকা ছাড়ের অনুমোদন হতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রা বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া কঠিন। পুরোপুরি বাজারনির্ভর বিনিময়হার ব্যবস্থা চালু হলে যে কোনো সময় অর্থনীতিতে বড় আঘাত আসতে পারে।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সংস্কার করছে তার ভিত্তিতেই ঋণের টাকা ছাড় করা উচিত। আইএমএফ যেসব সংস্কার চাচ্ছে তাতে দেশের ক্ষতি হতে পারে। তাদের সব কথা শুনতে হবে তার কোনো মানে নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রিজার্ভ কমে গিয়েছিল তখন ঋণর প্রয়োজন ছিল। এখন রিজার্ভ ভালো। ফলে দেশের ক্ষতি হয় এমন শর্তে ঋণের প্রয়োজন নেই।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• গভীর রাতে কঠোর গোপনীয়তায় বিলুপ্ত হলো এনবিআর
• ৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা
• রাজস্ব আদায় কম, ছোট হচ্ছে বাজেটের আকার
• ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ভোজ্যতেল কোম্পানি বিক্রি করবে গ্লোব গ্রুপ
• এনবিআর বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ জারি
• এনবিআর ভেঙে হলো দুই বিভাগ
• আমদানি বাড়ানো ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে
• বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান উড়ছেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ কমছে
• পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি ১০ শতাংশ বেড়েছে
• দেশে ডেনিম কাপড়ে বিনিয়োগ বাড়ছে
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved