Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
১ লাখ কোটি টাকার ঘাটতি [ অনলাইন ] 01/07/2025
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব
১ লাখ কোটি টাকার ঘাটতি

পুরো অর্থবছরে অর্থনীতির টানাপোড়েন যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ দিনে। বিপুল রাজস্ব ঘাটতির ভার নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পৌঁছেছে এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার মুখে, যা নতুন অর্থবছরের শুরুতে রাখল এক গভীর সংকটের ছায়া। বিদায়ী অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বড় ফাঁক। আর মূল লক্ষ্যমাত্রা ধরে হিসাব করলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা।

এটি নিছক একটি সংখ্যাগত ব্যর্থতা নয়, বরং রাজস্ব ব্যবস্থায় জমে থাকা দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা, প্রশাসনিক স্থবিরতা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অসামঞ্জস্যের প্রতিফলন। রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থার ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় সতর্কসংকেত, যার রেশ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে গভীরভাবে অনুভূত হতে শুরু করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘাটতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কা, বিনিয়োগে স্থবিরতা, মূল্যস্ফীতির চাপে ভোক্তার ব্যয় সংকোচন, আমদানি হ্রাসের ছায়া এবং রাজস্ব প্রশাসনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সংস্কারের জট। এসব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ের গতি যেমন রুদ্ধ হয়েছে, তেমনি কাঠামোগত দুর্বলতার দীর্ঘ ছায়াও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে; যা শুধু সাময়িক রাজস্ব ঘাটতির বিষয় নয়, বরং অর্থনীতির রাজস্ব সক্ষমতার এক গভীর সংকটের নাম।

এনবিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। অথচ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি এবং মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিশাল এক ফাঁক এখানে স্পষ্ট।

এই ঘাটতির বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হবে, এটা নিশ্চিত। তবে আমরা যেভাবে আশা করেছিলাম, সেভাবে হয়নি। আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে বাধা এসেছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, ব্যাংক ও দপ্তর খোলা থাকায় শেষ দিনে রাজস্বের প্রবাহ কিছুটা বাড়বে এবং জুলাইয়ে আরও জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিতে এটি শুধু সময়কালীন হোঁচট নয়, বরং বহু বছরের গড়িমসি ও কাঠামোগত দুর্বলতার ফল। এই বাস্তবতায় রাজস্ব আয় কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়ায় সরকারের অর্থ ব্যবস্থাপনায় গভীর চাপ তৈরি হবে। বর্ধিত বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারকে ঘন ঘন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হতে পারে, যা ভবিষ্যতে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়াবে।

বেসরকারি আর্থিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা খুবই হতাশাজনক। তবে এই ঘাটতির মধ্যে প্রবৃদ্ধির গল্প থাকলেও কর-জিডিপির অনুপাত কমে যাচ্ছে। আয় না বাড়লে জনগণের প্রয়োজন মেটানো অসম্ভব। সরকার যদি এই প্রবণতা না বদলায়, তাহলে বাধ্যতামূলক ঋণের মুখোমুখি হবে দেশ। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যেখানে দেশের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, সেখানে কর সংগ্রহে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। না হলে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের পথেই আমরা দমবন্ধ পরিস্থিতিতে পড়ব।’

এনবিআরের ব্যর্থতা সম্পর্কে সিপিডির এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ বাস্তবভিত্তিক ছিল না। মূল্যস্ফীতি ও আমদানি হ্রাসের বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। করছাড়, সংস্কার বিলম্ব ও কর ফাঁকি রোধে দুর্বলতা এই ঘাটতির মূল উৎস। আর পরামর্শক কমিটির প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে সংস্কারপ্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। করনীতি ও প্রশাসনের অস্থিরতা পুরো ব্যবস্থাকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, এই বড় ব্যবধানের ঘাটতি পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক বার্তা বহন করে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো কর-জিডিপির অনুপাত। এটি শুধু নিম্ন নয়, বরং বৈশ্বিক তুলনায় প্রায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এই অনুপাত না বাড়ালে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নতির জন্য রাজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।’
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• সরকারের ব্যাংক ঋণ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে
• কাজে ফিরেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা,সচল বন্দর
• রপ্তানির ১৪ হাজার কনটেইনারের স্তূপ, এনবিআরের কর্মসূচির প্রভাব
• দ্রব্যমূল্যে হাঁসফাঁস মানুষের
• বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নতুন ডিরেক্টর জ্যঁ পেম
• বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যানের সাথে বিজিএমইএ সভাপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ
• ঘাটতি পূরণে সরকার এক দিনেই ধার নিয়েছে ১১৭৯৪ কোটি টাকা
• চট্রগ্রামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার জন্য জমি বরাদ্দের দাবি
• কাল থেকে সব সনদ অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক করল এনবিআর
• রাজস্ব আদায় ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved