Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
 অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের ফর্মুলা [ পাতা ১৬ ] 28/03/2024
অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের ফর্মুলা
কর জিডিপির অনুপাত ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো গেলে বর্তমান যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে এর তুলনায় অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। বিদ্যমান কর হার না বাড়িয়েও এ পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করা যাবে। এটি হলে কর জিডিপির অনুপাত ১০ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হবে। ফলে আইএমএফের শর্তও পূরণ করা যাবে। এক্ষেত্রে বর্তমান রাজস্ব প্রশাসন বা কর ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্ভব হবে না। এছাড়া বাড়তি কর আদায় করতে হলে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের বিকল্প নেই। পাশাপাশি কর ব্যবস্থার অটোমেশন, কর আদায় খরচ কমানো এবং দুর্নীতি প্রতিরোধসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলে কর আদায় বাড়বে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বৈষম্য আরও গভীর হতে পারে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মবিলাইজেশন (সিডিআরএম) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় বাড়ানোর ফর্মুলা দেওয়া হয়। বুধবার রাজধানীর বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এবং একই সংস্থার গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পিআরআই পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দকার।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, রাজস্ব আয় বাড়াতে ব্যক্তিগত করের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। ১৯৯১ সালে এক্সসাইজ কর বাতিল না করে ভ্যাট পদ্ধতি আনা হয়। এক্ষেত্রে যেটি হয় সেটি হলো ভ্যাট আসে ভোগ থেকে, আর এক্সসাইজ আসে উৎপাদন থেকে। তাই এক্সসাইজ থেকে সরে আসা দরকার। এর পরিবর্তে ভ্যাটের ওপর আমাদের যে নির্ভরতা আছে সেটি বাড়াতে হবে। আমেরিকা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ সরাসরি ট্যাক্সের ওপর নির্ভরশীল। ভ্যাট হচ্ছে এমন একটা বিষয় যারাই ভোগ করবে তাদেরকেই দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো বয়সের মানুষ এই করের আওতায় পড়ে। তবে ভ্যাটের বর্তমান কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে। আমাদের দেশে আয়কর আদায় খুবই দুর্বল। এক্ষেত্রে ৩ জায়গায় নজর দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রাজস্ব খাতে লিকেজ কমাতে হবে। ভ্যাট ১৫ শতাংশের বেশি বাড়ানোর দরকার নেই। এটিই অনেক বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে আদায়ের দক্ষতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ২০১২ সালের কর আইন কার্যকর করতে হবে।

ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবের কারণে ভ্যাট রাজস্ব বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবারের আয় ও ভোগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভ্যাট সংস্কার এখনও প্রয়োজন। কিন্তু কর বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তিগত আয়করের ওপর আরও বেশি জোর দিতে হবে। এই বিশ্লেষণটি পিআরআই পরিচালিত মূল অর্থনৈতিক মডেলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে বৃহত্তর অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের করের রাজস্ব বৃদ্ধির প্রভাব অনুকরণ করা হয়। আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপির শতাংশের হিসাবে বিশ্বের সর্বনিম্ন স্তরের কর রাজস্ব রয়েছে। এটি স্বল্প মেয়াদে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং বাংলাদেশের হিসাবে মধ্য মেয়াদে উন্নয়নের দিকে ইতিবাচক ট্র্যাক বজায় রাখার উভয় ক্ষেত্রেই দেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে চায়। তবে জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের কর রাজস্ব বর্তমানে ভিয়েতনামের মতো একই মানের দেশের তুলনায় অর্ধেক। এজন্য ব্যক্তিগত আয়কর থেকে রাজস্ব বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে।

আরও বলা হয়েছে, কর বাড়াতে নীতিনির্ধারকদের বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিগত আয়কর থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উচ্চ রাজস্ব আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশব্যাপী টিআইএন রেজিস্ট্রেশন বাড়াতে হবে। বিশেষ করে শহরের কেন্দ্রগুলোর বাইরে কর নেট সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এছাড়া বাধ্যতামূলক ট্যাক্স রিটার্ন জমা এবং একটি সমন্বিত কেন্দ্রীয় স্বয়ংক্রিয় করা প্রশাসন ডাটাবেজ স্থাপন করতে হবে। করপোরেট আয়করের অদক্ষতা কমাতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান সেক্টরে উচ্চহারে করছাড় এবং কর অবকাশ কমিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সব নিবন্ধিত কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের উদ্যোগ থাকতে হবে। ভ্যাট নীতি সহজ করতে হবে। এক্ষেত্রে ২০১২ সালের ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

ব্রিফিংয়ে ড. জাইদী সাত্তার বলেন, এ দেশের বাজেট ঘাটতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সমান। উন্নয়নশীল দেশে বাজেট ঘাটতি থাকাটা খারাপ নয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ঋণ করে কোন খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আয়বৈষম্য বেড়ে গেছে। সেটি কমাতে হলেও কর ব্যবস্থার আমূল সংস্কার দরকার। কোনো সংস্কার ছাড়া জিডিপির অনুপাতে ২ শতাংশ কর বাড়াতে বলা হচ্ছে না। এটি করলে আরও খারাপ হতে পারে। এছাড়া ট্রেড ট্যাক্স ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ থাকাটা ঠিক নয়। রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হলে অবশ্যই শুল্ক ছাড়ের মাধ্যমে বা অতি শুল্ক আরোপ করে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা উদ্যোক্তারা যখন দেখবেন তাদের পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করলে যে লাভ হচ্ছে রপ্তানি করলে তার চেয়ে কম হয়; তাহলে তারা রপ্তানিতে অনুৎসাহিত হবেন।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্রিটিশ আমলের কর প্রশাসন দিয়ে রাজস্ব খাত চলবে না। তাহলে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন হবে না। রাজস্ব আয় বাড়াতে কর প্রশাসনের কার্যকর সংস্কারের বিকল্প নেই। নতুন সরকারের জন্য এটাই ব্যবস্থা নেওয়ার উপযুক্ত সময়। কেননা দুই বছর গেলে তখন রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি সংক্রান্ত অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়। তিনি আরও বলেন, প্রবাসী আয়ের ওপর কর বসানো ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে করারোপ বা প্রণোদনা কোনোটির পক্ষেই আমরা নই।

ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষের হাতে ৩০ শতাংশ জাতীয় আয়। তাদের কাছে ১৫ শতাংশ হারে কর আদায় করা হলে ২ দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় বাড়ানো যায়। ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসির বাস্তবায়ন করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ সামষ্টিক সরকারি ব্যয় বাড়াতে হলে কর বাড়াতে হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বৈষম্য আরও গভীর হতে পারে। সরকারের আমদানি সংকোচন নীতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসা উচিত। বর্তমানে ঋণ করে বাজেট ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। এতে বড় অঙ্কের সুদ পরিশোধ করতে হয়। ফলে ১২-১৩ শতাংশ হারে সুদ দিতে বাজেটের একাটি বড় অংশ চলে যায়। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার বাড়াতে হবে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved