Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
আমানত এখন ব্যাংকমুখী [ Online ] 19/04/2024
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
গোলাম মওলা

ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ছে। কোনও কোনও ব্যাংকে ঋণের সুদের হার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও বাড়াতে শুরু করেছে। বিশেষ করে খারাপ অবস্থায় থাকা কিছু ব্যাংক আমানত টানতে গ্রাহকদের ১২ শতাংশ পর্যন্ত চড়া সুদহার দিচ্ছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ার ফলে ব্যাংকগুলো আমানতে বেশি সুদ দিতে পারছে। এতে সঞ্চয়কারীরা ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-সুদহার বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করার ফলেও ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদহার কিছুটা বেড়েছে। কোনও কোনও ব্যাংক সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের চেয়েও বেশি সুদ দিচ্ছে। এসব ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে। তারা অনেকটা বেপরোয়াভাবে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশি সুদ এখন ব্যাংকে। স্থায়ী আমানতে ১৩.৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে কোনও কোনও ব্যাংক। অথচ সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১.৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।

বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক এখন সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো এ ধরনের আমানতে সুদ দিচ্ছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এক বছরের স্থায়ী আমানতে একটি ব্যাংক ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। আরেকটি ব্যাংক ছয় বছরের জন্য টাকা জমা রাখলে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আমানতে একই বা কাছাকাছি সুদ দিচ্ছে আরও বেশ কিছু ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মোট আমানত ১৬.৬১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৪৩ শতাংশ বেশি।


ব্যাংকে আমানত বাড়ার প্রভাব পড়েছে মানুষের হাতে থাকা টাকায়ও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাস শেষে দেশের মানুষের হাতে প্রায় ২ দশমিক ৫৮ লাখ কোটি টাকা ছিল। জানুয়ারি মাসের তুলনায় এর পরিমাণ কিছুটা কম।

ব্যাংকাররা জানান, জনগণের হাতে থাকা নগদ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে এলে সেটি নতুন আমানত ও ঋণ তৈরির গতি বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা কমার অন্য আরেকটি মানে হলো—সেগুলো ব্যাংকে ফিরে এসেছে এবং আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করছে।

এদিকে চলতি এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, সুদহার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন একটি নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এর ফলে ঋণের সুদ এখন প্রতি মাসেই বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ছিল ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে হয় ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগে ঋণের ওপর সর্বোচ্চ সুদের হার নির্ধারিত ছিল ৯ শতাংশ।

এরও আগে ২০২০ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে অর্থনীতিতে সংকট শুরু হলে গত বছরের জুন থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি ‘স্মার্ট’ চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সম্প্রতি আমানতের সুদহার বাড়ানোর কারণে সঞ্চয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে মানুষ ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহী হচ্ছে। এছাড়া রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে  বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আমানতের প্রবৃদ্ধি টানা তিন মাস ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা ২৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে করোনা মহামারির কারণে হওয়া অর্থনৈতিক মন্দার  প্রভাবে আমানত প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে পৌঁছেছিল।

এ প্রসঙ্গে  বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতির জন্য সার্বিকভাবে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়াটা দরকার। সুদের হার বেড়েছে বলেই ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত আরও ছয় মাস সুদের হার বাড়তে দিতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান  বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলোও আমানতের সুদের হার বাড়াচ্ছে। এছাড়া রেমিট্যান্স আয়ে ইতিবাচক ধারা থাকায় আমানতের প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভার পড়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ২ বিলিয়ন (১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন) ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২১ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা (প্রতি এক ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)। এই হিসাবে দৈনিক গড়ে আসছে ৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।

অবশ্য আমানতের প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা ছাপানোর প্রভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তারা বলছেন, যে হারে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেটি আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দিয়েছে।

সার্বিকভাবে ব্যাংকে আমানত বাড়লেও ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংকসহ এমন কিছু ব্যাংক আছে—যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ও স্ট্যাচুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) ঠিকমতো বজায় রাখতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো ফ্যাসিলিটি, ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটিসহ বিভিন্নভাবে এসব ব্যাংককে টাকা দিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে মেয়াদ ও টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যাদের এ খাতে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের মুনাফা কমে যায়।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved