Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
ব্যাংক একীভূতকরণ ও ব্যাংকশিল্পের পুনর্গঠন কি বার্তা দেয় [ অনলাইন ] 20/04/2024
ব্যাংক একীভূতকরণ ও ব্যাংকশিল্পের পুনর্গঠন কি বার্তা দেয়
অন্‌জন কুমার রায়

করোনা–পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর ফলে বাংলাদেশে একসময়ের লাভজনক, দ্রুতবর্ধনশীল, গতিশীল এবং অত্যন্ত উদ্ভাবনী ব্যাংক খাত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ব্যাংক খাতে নন–পারফর্মিং অ্যাসেট (এনপিএ) বৃদ্ধি পায়, তারল্য–সংকট দেখা দেয়। সে জন্য ব্যাংক খাতকে সংস্কারের উদ্দেশ্যে দেশের সব দুর্বল বা খারাপ ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জ) করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে মূলধনের পর্যাপ্ততা, শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্রা, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও ভেঙে পড়া করপোরেট সুশাসন ফেরানোর তাগিদ। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোর উন্নতি না হলে সেগুলো অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বার্তা রয়েছে। যার প্রথম উদ্যোগ হিসেবে এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক একীভূত হতে চুক্তি করেছে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক এবং ইউসিবি ও ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হবে।

বিভিন্ন কারণে ব্যাংকগুলো সংকটের সম্মুখীন হতে পারে। হতে পারে ব্যাংক রান কিংবা নন–পারফর্মিং অ্যাসেট বৃদ্ধির মতো ঘটনা। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংক রানের মতো ঘটনা না ঘটলেও কিছু ব্যাংকে নন পারফর্মিং অ্যাসেট তীব্র আকার ধারণ করেছে। মন্দ ঋণগুলো থেকে টাকা আদায় দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, আবার কেউ কেউ কৌশলগত ঋণখেলাপি হচ্ছে। স্বভাবত এসব নন–পারফর্মিং অ্যাসেট আর্থিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

তবে ব্যাংক একত্রীকরণ নীতিগুলো স্বতন্ত্র নীতি নয়, বরং মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির অন্য দিকগুলোর সঙ্গে একত্রে প্রণয়ন করা হয়। তাই ব্যাংক একত্রীকরণের কারণে খেলাপি ঋণের সংখ্যা হ্রাস পায় (উন্নত ঋণ স্ক্রিনিং এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা) এবং অর্থনীতির আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ, ভালো ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি যদি আর্থিকভাবেও ভালো হয়, তাহলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংককে বাঁচাতে পারে। ২০২২ সালে একটি গবেষণায় একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলো থেকে দুর্বল ব্যাংকের নন–পারফর্মিং অ্যাসেট নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দুর্বল একত্র হওয়া ব্যাংকগুলোর এনপিএ আগের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পায়। এ ছাড়া একীভূত হওয়ার কারণে বৃহত্তর ব্যাংকগুলোর ব্যর্থতার কম আশঙ্কা থাকে এবং ঋণগ্রহীতাদের ভবিষ্যতে ঋণপ্রবাহ অব্যাহত থাকে। তাই লোন পারফরম্যান্সের উন্নতি দুর্বল একীভূত ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে, যেখানে কৌশলগত ডিফল্ট হওয়ার আশঙ্কা কমে আসে।

২০০৭ সালে ফিলিপ বন্ড এবং অশোক রাইয়ের একটি গবেষণায় ‘Borrower Run’-কে ব্যাংকের স্বাস্থ্যের অবনতির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ঋণগ্রহীতা যে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে, প্রাথমিকভাবে অনুমান করে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু যদি মনে করে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটি ভেঙে পড়বে, তাহলে ভবিষ্যতে ব্যাংকটি থেকে ঋণ পাওয়ার আশা কমে যাবে।

সে পরিস্থিতিতে অনেক ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও ঋণ পরিশোধ করতে চায় না কিংবা বিলম্বে ঋণ পরিশোধ করে যাকে ‘Borrower Run’ বলে। ‘Borrower Run’–কে কৌশলগত খেলাপিও বলা হয়। ফলে কিছু ঋণগ্রহীতার খেলাপি হওয়ার প্রত্যাশা বৃহত্তর স্কেলে খেলাপি ঋণকে আরও বাড়িয়ে তুলে। ঋণগ্রহীতার আস্থার সংকটের জন্যই এমন হয়। ১৯৯৪ সালে ম্যাক্সিকান ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল কৌশলগত খেলাপি এবং ঋণগ্রহীতাদের সমন্বয় ব্যর্থতা। সে জন্য শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের শৃঙ্খলা উন্নত হতে পারে এবং ঋণগ্রহীতার আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা–পরবর্তী সময়ে মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকের চাহিদার জন্য অর্থের প্রয়োজন পড়ে। নগদ টাকার সংকট মেটাতে গ্রাহকেরা সিভি ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা আমানত ভাঙতে শুরু করে। ব্যাংকটি নগদ তহবিল জোগান দিতে সমস্যায় পড়ে। খবর ছড়িয়ে পড়ে, ব্যাংকটির যতটা অর্থ প্রয়োজন, ততটা জোগাড় করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকে তারল্য সমস্যার সৃষ্টি হয়ে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। মূলত ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থার সংকটের জন্য এমন হয়। তাই পরবর্তী সময়ে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ফার্স্ট সিটিজেন ব্যাংকের সঙ্গে, সিগনেচার ব্যাংক ফ্ল্যাগস্টার ব্যাংকের সঙ্গে এবং ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক চেজের সঙ্গে একীভূত করা হয়। ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পতন রোধ করতে ব্যাংকগুলোকে প্রায়ই বড় এবং আরও স্থিতিশীল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করা হয়। কারণ, একত্রীকরণ সত্তা দুটি পূর্বের পৃথক প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ কর্মক্ষমতার দিকে পরিচালিত করে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য একীভূত করা প্রয়োজন। মূলত একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আর্থিক বাজারের গতিশীলতাকেও প্রভাবিত করে। সে লক্ষ্যে ভারত ও চীনের অর্থনীতিতে ব্যাংকের একত্রীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতে পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলোকে একত্র করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য ছিল ভালো, দক্ষ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য বড় আকারের ব্যাংক তৈরি করা। জাপানে ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে আর্থিক সংকটের পর সরকার ব্যাংক একত্রীকরণে পদক্ষেপ নেয়। স্কেল অর্থনীতির মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন এবং ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এটি করা হয়েছিল। মূলত একত্রীকরণ ব্যাংকিং খাতের কাঠামোকে পরিবর্তন করে, যা ব্যাংকের ঋণ প্রদানের আচরণ, বাজারের প্রতিযোগিতা এবং মুদ্রানীতি ট্রান্সমিশন মেকানিজমকে প্রভাবিত করে। যদিও ব্যাংক একীভূতকরণে সাধারণ গ্রাহকদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। তাদের রক্ষিত আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে। যেসব গ্রাহক আর্থিক পরিষেবার ওপর নির্ভর করত, তাদের অনেকেই ভাবতে পারে সেগুলো না–ও থাকতে পারে। তবে সে উদ্বেগগুলো কম বাস্তবতা।

ব্যাংক একীভূতকরণ শুধু ব্যাংকশিল্পজগতে ব্যাংকের সংখ্যা হ্রাস করার একটি পন্থা নয়, বরং অন্তর্নিহিত সমন্বয়, দক্ষতা বৃদ্ধিসহ অর্থ সরবরাহ, সুদের হার এবং মূল্যস্ফীতির মতো কারণগুলোকে প্রভাবিত করে। যার ফলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। একীভূতকরণের মূল চালিকা শক্তি ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, বর্ধিত অর্থনীতি, বাজারের অংশীদারত্ব, যা একটি ব্যাংকের সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করে এবং নতুন শাখা স্থাপনের বিকল্প হতে পারে। একই শিল্পের মধ্যে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা হ্রাস পাবে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নত হবে। সৃষ্ট নতুন ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে আরও পণ্য এবং পরিষেবা অফার করতে পারে।

যদিও মূল লক্ষ্য খারাপ ঋণের ফলে উদ্ভূত আর্থিক সংকট কমানো এবং তা থেকে বেরিয়ে আসা। একীভূতকরণের সঙ্গে ব্যাংকশিল্পের পুনর্গঠন লাভজনকতার পাশাপাশি গ্রাহক পরিষেবা আরও বিস্তৃত হবে। তবে ব্যাংকগুলো সব গ্রাহকের শক্তিশালী স্মার্ট ব্যাংকিং প্রতিশ্রুতি দিয়ে একীভূতকরণের চেষ্টা করে। সঠিকভাবে তা না হলে একীভূতকরণের উদ্দেশ্য ম্লান হয়ে যেতে পারে। কারণ, ব্যাংক একীভূতকরণ একটি আঁটসাঁট সময়সীমার মধ্যে গ্রাহকদের পরিবর্তন ঘটায়।

লেখক: অন্‌জন কুমার রায়, ব্যাংক কর্মকর্তা। [email protected]
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ‘ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার ক্লাব’ এর পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ বিবিধ
• শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার ক্লাবের পানি ও স্যালাইন বিতরণ
• সাউথইস্ট ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা
• ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে রিফ্রেশার্স ট্রেইনিং কোর্স
• ন্যাশনাল ব্যাংকের ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ কর্মশালা
• চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে অগ্রণী ব্যাংক, বয়স ৬০ হলেও আবেদন
• এবি ব্যাংকের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ
• এবি ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ঘোষণা
• নাওয়ার প্রোপার্টিজের গ্রাহকদের হোম লোন সুবিধা দিবে সাউথইস্ট ব্যাংক
• মাস্টারকার্ড ও ব্যাংক এশিয়া নিয়ে এল ‘ওয়ার্ল্ড এলিট মাস্টারকার্ড’
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved