প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ। মূলত
বাজারভিত্তিক ঋণের ওপর নির্ভরতার কারণেই বেড়েছে সুদ পরিশোধের ব্যয়। টাকার
অবমূল্যায়ন এবং সোফর সুদহার বাড়ার ফলে এ ধরনের ঋণ আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব
জানা গেছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী- চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাসে জুলাই-মার্চ সময়ে
বাংলাদেশ শুধুমাত্র সুদ বাবদ উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছে ১০৫ কোটি ৪০
লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ বাবদ পরিশোধ করা
হয়েছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। এ হিসেবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ১১৭ শতাংশ। এর
আগে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ডলার এবং
পুরো অর্থবছরে তা ছিল ৯২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এ ব্যাপরে সংশ্লিষ্টরা জানান- রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলারের
মূল্যবৃদ্ধির কারণে সুদহার বেড়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ
পরিস্থিতিতে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) বেড়েছে। বর্তমানে
সোফর সুদহার ৫ শতাংশের বেশি। যা এ যুদ্ধের আগে ১ শতাংশের কম ছিল। অন্যদিকে,
বাংলাদেশের বাজারভিত্তিক ঋণ ক্রমগত বাড়ছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এখন সুদ
বাবদ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে যে ঋণ পায় তার প্রায় ৭৫ শতাংশ
বাজারভিত্তিক ঋণ। এছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক
(এআইআইবি) থেকে বাজারভিত্তিক সুদে ঋণ নেয়। বিশ্বব্যাংক থেকেও স্বল্প পরিসরে
বাজারভিত্তিক ঋণ নেয় বাংলাদেশ।
এদিকে সুদ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে
অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়ে হয়েছে ২৫৭ কোটি
ডলার হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৭৩ কোটি ডলার। এর মধ্যে বিভিন্ন
ঋণের আসল পরিশোধ করা হয়েছে ১৫১ কোটি ডলার।
ইআরডির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে আসল ও সুদ মিলিয়ে বাংলাদেশের
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়ে ৩৫৬ কোটি ডলার হতে পরে। এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউট ফর
ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা
কে মুজেরি বলেন, আমাদের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। তবে সস্তা ঋণের পরিমাণ
কমছে।
বাজারভিত্তিক ও দ্বিপক্ষীয় ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। এসব ঋণের সুদহার বেশি, আবার
পরিশোধের সময়ও কম থাকে। আবার আমাদের অনেক মেগা প্রকল্পের জন্য নেয়ার ঋণের
গ্রেস প্রিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় আসল পরিশোধের চাপও বেড়েছে এবং আগামীতে এ চাপ
আরো বাড়তে থাকবে। এ অবস্থায় আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ পরিশোধে সতর্ক
থাকতে হবে।
যদিও আমরা এখনো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইনি, এরপরও ভালো প্রকল্প
বাছাই করার পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় বাড়তে হবে বলে জানান তিনি।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ
থেকে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রæতি পেয়েছে, যা গত
অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ঋণ গ্রহণের জন্য যেসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিতে যেতে
হয়, এবার সেই প্রস্তুতি ভালো ছিল। এ কারণ অর্থবছরের শুরু থেকে উন্নয়ন
সহযোগীদের সঙ্গে অনেক প্রকল্পের ঋণ চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। এর আগের
অর্থবছরে প্রস্তুতির অভাবে শুরুর দিকে অনেক প্রকল্পের ঋণ চুক্তি করা সম্ভব
হয়নি বলে জানান তারা। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী
সংস্থার কাছ থেকে ১০ দশমিক ১৯৪ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রæতি আদায়ের লক্ষ্য
রয়েছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রæতি
পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে।
এ সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ২ দশমিক ৬২
বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রæতি। এছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার
এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রæতি পাওয়া
গেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বৈদেশিক অর্থছাড় হয়েছে ৫ দশমিক ৬৩
বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৩৬
বিলিয়ন ডলার।
এ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এডিবি। সংস্থাটি অর্থছাড় করেছে ১ দশমিক
৪০ বিলিয়ন ডলার। জাপান ছাড় করেছে ১ দশমিক ৩৫৮ বিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক
করেছে ৯৬৭ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ৮০৭ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং চীন ৩৬১ দশমিক
৭১ মিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে।