[ পাতা ১ ] 23/04/2024 |
|
|
|
বাংলাদেশ চায় শুল্কমুক্ত সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত শ্রম অধিকার |
|
|
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধিদলের সফর এটি। দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ এ সফরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ সফরে ওয়াশিংটন-ঢাকা বাণিজ্য সম্প্রসারণ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) বাস্তবায়ন নিয়ে বরাবরের মতো এ সফরেও আলোচনা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে শ্রম আইনের সংস্কার নিয়েও ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিরা কথা বলছেন।
গতকাল সোমবার প্রতিনিধিদলটি সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শ্রমিক আইন সংস্কার ও শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর আগে সফরের প্রথম দিন গত রবিবার প্রতিনিধিদলটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করে শ্রম অধিকারের উন্নয়নের বিষয়টি তুলেছে। এরপর গতকাল আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেও একই বিষয়ের অবতারণা করেন।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে শ্রমিকদের অধিকার দিন দিন বাড়বে, কমবে না।
আনিসুল হক বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছিল থ্রেসহোল্ড (ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের সম্মতির হার) কমানো নিয়ে। তাদের বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের দিকে থ্রেসহোল্ড ছিল ৩০ শতাংশ। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে বৈঠকের পর এই থ্রেসহোল্ড ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তখন আমরা বলেছিলাম, এটা আরও কমানো হবে, তবে ধীরে ধীরে। এবার বাংলাদেশ শ্রম আইনে যে সংশোধনী আনা হচ্ছে, তাতে প্রথমে প্রস্তাব ছিল থ্রেসহোল্ড ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু সেখানে শর্ত ছিল, এটা শুধু যেসব কারখানায় তিন হাজার বা তার চেয়ে বেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। কিন্তু এখন সেই সীমাও উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সংশোধনী পাস হলে সব কারখানার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ থ্রেসহোল্ড প্রযোজ্য হবে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোন দেশ আমাদের কী দেবে, আর কী দেবে না সেটার ওপর নির্ভর করে শেখ হাসিনার সরকার শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে না। সরকারের লক্ষ্য শ্রমিকরা যে অধিকার ভোগ করছে, তার থেকে বেশি যাতে তারা পায়, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।’ আগামী বাজেট অধিবেশনের শেষের দিকে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন বিল পাস হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, ‘তারা (মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল) মূলত বাংলাদেশের শ্রম আইন, শ্রমিকদের অধিকার এবং তা নিয়ে আমরা কী কাজ করছি, তা নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্ন ছিল, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ শ্রমিক আইনের যে সংশোধন হচ্ছে, সেটার বর্তমান পরিস্থিতি কী, কী করা হচ্ছে? ১১টা বিষয়ে তাদের জানার ইচ্ছা ছিল এবং এ ব্যাপারে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তা তাদের জিজ্ঞাসায় ছিল।’
বাংলাদেশের শ্রম আইন ও অধিকারের বিষয়ে শোনার পর মার্কিন প্রতিনিধিদল সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এ আলোচনার পর মার্কিন প্রতিনিধিরা আমাকে বলেছেন, তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের লেবার অ্যাটাসে লিনা খানসহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।
এ ছাড়া আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিব হাফিজ আহমেদ চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে রবিবারের বৈঠকের পর তপন কান্তি ঘোষ বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে বাংলাদেশের শ্রম অধিকারের আরও উন্নয়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শ্রম আইনের সংস্কারের দাবি জানিয়ে ১১ দফার একটি কর্মপরিকল্পনা দিয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন যেন সহজ হয় সে বিষয়ে কথা হয়েছে। এ আইনের সংস্কারে ত্রিপক্ষীয় (মালিক, শ্রমিক ও সরকার) কমিটির ঐকমত্যের প্রয়োজন আছে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ নেতৃত্ব দেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব নুসরাত জাবিন বানু, যুগ্ম সচিব ড. ফারহানা আইরিশ উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটনে টিকফার সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই পরিকল্পনা করা হয় টিকফার পরবর্তী অষ্টম কাউন্সিল বৈঠকের আগেই দুই দেশ দুই দেশের গুরুত্বপর্ণ দ্বিপক্ষীয়-বাণিজ্যবিষয়ক সংলাপ চালিয়ে যাবে। তারই অংশ হিসেবে এবারের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরটি সাজানো হয়েছে। এ বছরে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিতব্য টিকফা বৈঠকের আগে এ সফরের আলোচনা গুরুত্ব পাচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত টিকফা কাউন্সিলে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। টিকফার অষ্টম কাউন্সিল বৈঠকের আগে হওয়া ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকেও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন তপন কান্তি ঘোষ।
এর আগে গত বছর ওয়াশিংটনের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানিয়েছে, শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা ও মালিকদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারাসহ শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করা বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার। টিকফার মধ্যে এ বিষয়টি রয়েছে। তারা শ্রমিক ও ইউনিয়ন সংগঠকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলার ওপর গুরুত্ব দিতে চায়। এর পাশাপাশি ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্য ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেন কোনো অন্যায্যতা না হয় তার ওপরও জোর দিয়েছিল। এ সফরে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি টিকফা স্বাক্ষরিত হয়। ২০০১ সাল থেকেই এ চুক্তি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হয়। এরপর এর নাম হয় (ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট) টিকফা। সর্বশেষ টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট) বা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি নামে চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন নামে বিশ্বের ৮৭টি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|