[ সম্পাদকীয় ] 28/04/2024 |
|
|
|
আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন: আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা জরুরি |
|
|
ব্যাংক খাতকে আগামী জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া একটি কঠিন শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ঝুঁকি মোকাবিলার রীতি ব্যাসেল-৩-এর মানদণ্ড অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। জানা গেছে, আইএমএফ থেকে সরকার ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ নিয়েছে, তার মধ্যে বেশকিছু শর্ত আছে, যার মধ্যে এটিও রয়েছে।
এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ শর্ত মানতে গেলে ব্যাংক খাতের ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। দেশের ভেতরে ইমেজ সংকটের পাশাপাশি বিদেশেও ভাবমূর্তি হবে প্রশ্নবিদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ বাড়লে এ খাতের দুর্বলতা আরও বেশি করে প্রকাশ হয়ে যাবে।
এতে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। তখন অনেক ব্যাংক বিশেষ করে বৈদেশিক এলসি খোলার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষীয় গ্যারান্টি আরোপ করতে পারে।
ফলে গ্যারান্টিদাতা ব্যাংককে বাড়তি কমিশন দিতে হলে আমদানির খরচ তো বটেই, ব্যবসার খরচও বেড়ে যাবে। এতে ব্যবসায়ীসহ ভোক্তারাও বিপাকে পড়তে পারেন। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, ব্যাসেল-৩ মানদণ্ডে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ খুব বেশি বাড়বে না। কারণ খেলাপি ঋণ আদায় বেড়েছে।
ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বা ৫০০ কোটি টাকা-এর মধ্যে যেটি বেশি, তা ন্যূনতম মূলধন হিসাবে রাখতে হবে। এর বাইরে দেশের প্রতিটি ব্যাংককে আপৎকালীন সুরক্ষা দিতে অতিরিক্ত আরও আড়াই শতাংশ হারে মূলধন রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এটি প্রতিপালন হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার স্বার্থেই আইএমএফের শর্ত মেনে তা প্রকাশ করাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি আমরা।
এর ফলে এ খাত নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে তা যেমন দূর হবে, তেমনি ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থাও জানা সম্ভব হবে। আমরা দেখছি, সুশাসনের অভাবে ঋণ বিতরণে জালিয়াতি ও অনিয়মের ফলে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে অস্তিত্ব রক্ষার্থে অপেক্ষাকৃত সবলদের সঙ্গে একীভূত করা হচ্ছে। এতে জনমনে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা কাম্য নয়। ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলে এ বিভ্রান্তি অনেকটাই দূর হবে।
মনে রাখতে হবে, আর্থিক খাতে অনিয়ম ও খেলাপি ঋণ আদায়ে শিথিলতার সুযোগ নেই। এমনিতেই বৈশ্বিক কারণে ডলারের দাম বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে।
এমন অবস্থায় ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতার স্বার্থে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড দ্বারা প্রণীত আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) সিস্টেম বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তাহলে ব্যাংকগুলোর হিসাব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা কিছুটা হলেও ফিরে আসবে, একইসঙ্গে তা আন্তর্জাতিক মানেরও হবে। আইএমএফের শর্তের কারণে নয়, স্বচ্ছতার স্বার্থেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজ উদ্যোগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তথ্য দ্রুত প্রকাশ করবে, এটাই প্রত্যাশা। |
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|