Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক [ পাতা ৫ ] 29/04/2024
জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অর্থ পাচার প্রতিরোধে গবেষণা
আদালতের নির্দেশনার এক বছরের বেশি সময় পার হলেও কার্যক্রম শুরু হয়নি অর্থ পাচার প্রতিরোধে গঠিত গবেষণা সেলের। অর্থ পাচার বন্ধের উপায়, কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে গবেষণা সেল গঠন করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত জনবল নিয়োগ দেয়নি। ফলে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অধীনে গঠিত এই সেলটির কার্যক্রমও শুরু হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশনার পর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে সেলটির কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দিয়েছেন। তখন বিএফআইইউর পক্ষ থেকে গবেষণা সেলটি পরিচালনার জন্য ১১ জনের একটি অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছিল। এই জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু এখনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একজন অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে গবেষণা সেলটি পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাউকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলেও জানা গেছে। আইন অনুযায়ী, বিএফআইইউ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও জনবল, অবকাঠামো, অর্থসহ সামগ্রিক লজিস্টিক সহায়তা বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়।

বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, বিএফআইইউর অধিকাংশ কাজই গবেষণাধর্মী। গবেষণা সেলটি গঠন করা হয়েছে এবং কার্যক্রম চলছে। লোকবল নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ১১ জন নিয়োগের একটি চাহিদাপত্র দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিভাগেই লোকবলের কিছু ঘাটতি আছে। সেজন্য এখনো সেটা দিতে পারেনি। তবে শিগগির নিয়োগের আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা কঠিন। তাই পাচার রোধেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এ উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই গবেষণা সেলটি গঠন করা হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কেমন, তাও পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় বাধা। বিদেশে অর্থ পাচার দিন দিন বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে। এটি প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন ভেস্তে যাবে। জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ পাচারের মাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে। দেশের একশ্রেণির সরকারি আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিরাই অর্থ পাচার করছেন। তারা অবৈধ অর্থ, ব্যাংকের টাকা, জনগণের আমানত, দেশের সম্পদ ইত্যাদি আত্মসাৎ ও লুট করে নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়ে অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর কালবেলাকে বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধে আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জনবলের কারণে সেলটির কার্যক্রম শুরু না করার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ভালো একটি উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কার্যক্রম এগোচ্ছে না। কারণ অর্থ পাচারকারীদের মধ্যে সরকারি আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিরাই রয়েছেন। সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই এসব অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, সরকার যদি আন্তরিকভাবে এ গবেষণা সেল গঠন করত, তাহলে অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ হতো এবং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধ অনেকাংশে ঠেকানো যেত। সেলের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধের বিদ্যমান ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা, অর্থ পাচার বন্ধে উপায় বের করতে গবেষণা করা, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিভিন্ন দেশের নেওয়া উদ্যোগ বিশ্লেষণ করা। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য গ্রহণীয় পদক্ষেপের প্রস্তাব তৈরি, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও সফলতা পাওয়া ঘটনাগুলোর পর্যালোচনা, পাচার হওয়া অর্থের তথ্য সন্ধানে যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিদ্যমান আইনে সংশোধনের কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা পর্যালোচনা করা ইত্যাদি।

গত বছরের ৩১ আগস্ট অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে এবং পাচারের অর্থ ফেরত আনতে একটি গবেষণা সেল গঠনে বিএফআইইউকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত লিজুর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশের সময় তিন মাস বাড়িয়ে দেন। এরপর ডিসেম্বরে সেলটি গঠন করা হয়।

গত বছরের ১০ আগস্ট বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা নিয়ে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কারও তথ্য চায়নি। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ প্রধানকে আদালতে ডাকা হয়েছিল। সেই সময় উচ্চ আদালতের নির্দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি করার কথা আদালতে হলফনামা আকারে জমা দিয়েছে বিএফআইইউ। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চীন। মূলত এসব দেশেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়—বিএফআইইউর পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হলেও বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কী পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে, তার আনুষ্ঠানিক তথ্য সংস্থাটি প্রকাশ করে না। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যই দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের কী পরিমাণ অর্থ রয়েছে, তার হিসাব সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০২২ সালে যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, সেখানে অস্বাভাবিক হারে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ কমে গেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও জমার পরিমাণ কমেছে। যদিও এর আগে প্রতি বছরই বাংলাদেশিদের পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৫৩ লাখ সুইস ফ্রাঁতে। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের অর্থ প্রায় ৮২ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৯৪ শতাংশ কমে গেছে। বাংলাদেশে সুইস ফ্রাঁর খুব বেশি লেনদেন হয় না। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য প্রায় ১২১ টাকা। সেই হিসাবে ৫ কোটি ৫৩ লাখ সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়ায় প্রায় ৬৬৯ কোটি টাকা। যদিও ২০২০ সালে জমার পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২১ সালে বেড়েছিল ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ। হঠাৎ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়ার জন্য দেশের চলমান ডলার সংকটকে বড় কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, দেশে ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় দেশটিতে অর্থ জমার বা বিনিয়োগের সক্ষমতা হারিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে অর্থ তুলে নিয়েছে।

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইসলামী ধারার ৩ ব্যাংকের মাধ্যমে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর আগে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা লোপাট, ফারইস্ট ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান হতে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। ২০১১ সালে হলমার্ক নামক কোম্পানির মালিক সোনালি ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নেয়।

গত এক দশকে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট ও থার্মেক্স গ্রুপ ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ফার্মার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে লোপাট হয়েছে সাড়ে ১২০০ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংক থেকে লুট করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এসব লোপাট করা অর্থের সামান্যও ফেরত পাওয়া যায়নি। গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তছরুপকৃত টাকার বেশিরভাগই বিদেশে পাচার হয়েছে।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ কমে ১৩.২২ বিলিয়ন ডলার
• শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৭৯তম সভা অনুষ্ঠিত
• আড়াই কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি রাফসানের বাবা-মা
• ডলারের দাম বাড়ার সুফল মিলবে কি
• সোনালী ব্যাংক-বিডিবিএলের একীভূতকরণে চুক্তি স্বাক্ষর
• ইউসিবির সঙ্গে ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের চুক্তি স্বাক্ষর
• তড়িঘড়ি করে সোনালী ব্যাংক-বিডিবিএলের সমঝোতা সই
• একীভূত হতে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করল বিডিবিএল
• শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের হজ বুথ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন
• সোনালী ব্যাংক-বিডিবিএলের একীভূতকরণে চুক্তি স্বাক্ষর
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved