Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ বন্ধের সিদ্ধান্ত সঠিক হবে না [ পাতা-১ ] 04/05/2024
সাক্ষাৎকারে মাহবুব আহমেদ
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ বন্ধের সিদ্ধান্ত সঠিক হবে না
প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী আশানুরূপ কর্মসংস্থান হচ্ছে না, এরপর প্রবৃদ্ধিকে অবজ্ঞা করা যাবে না
 মিজান চৌধুরী

সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ না করে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হবে না। এতে বিনিয়োগকারীরা মূলধন সংকটে পড়তে পারেন। আইএমএফ’র এ ধরনের পরামর্শ এখন কার্যকারিতা হারিয়েছে। এছাড়া নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যও কমেনি। তবে অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে ‘প্রবৃদ্ধি’ এবং ‘মূল্যম্ফীতি’ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে।

সাবেক বাণিজ্য ও অর্র্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ যুগান্তরের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী আশানুরূপ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। এরপরও প্রবৃদ্ধিকে যথাযথ অবজ্ঞা করা যাবে না। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের প্রাধান্য বিষয়ও তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মিজান চৌধুরী

যুগান্তর : মূল্যস্ফীতির প্রতিঘাতে জর্জরিত সাধারণ মানুষ, এ সময় আসন্ন বাজেট প্রবৃদ্ধি না মূল্যস্ফীতি কোনটি প্রাধান্য দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন আপনি?

মাহবুব আহমেদ : বিগত বছরের বাজেট প্রকাশের আগে একই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে মূলত জবাব এসেছে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ বছর সরকার ঘোষণা করেছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে তাদের এক নম্বর এজেন্ডা। আমি মনে করি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ মূল লক্ষ্য হলেও স্বাভাবিকভাবে প্রবৃদ্ধিকে অবজ্ঞা করা যথাযথ হবে না। কারণ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসৃজনের ও দারিদ্র্য হ্রাসের একটা সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে ‘প্রবৃদ্ধি’ এবং ‘মূল্যম্ফীতি’ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে।

যুগান্তর : আপনি বলছেন, কর্মসংস্থানের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির সম্পৃক্ততা আছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কর্মসংস্থান আশানুরূপ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে করণীয় কী?

মাহবুব আহমেদ : কর্মসংস্থান সৃষ্টির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নানা বিভ্রান্তি আছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর ২০-২১ লাখ যুবক ও যুব মহিলা শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। এদের সবার জন্য যথাযথ মানে কর্মসৃজন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বেশিরভাগই আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবনযাপন করছেন। ২০২৪ সালে আমাদের বেকারত্বের হার ৪.৯৯ শতাংশ। তবে বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা অধিকতর। তারা কেউই কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন নয়। শ্রমিক পর্যায়ে বেকারত্বের হার কম। আমি মনে করি শিক্ষিত বেকার সৃষ্টির পেছনে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়টিও এখানে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের জিডিপির অনুপাতে কর্মসংস্থান ০.৪৫ শতাংশ। যা প্রমাণ করে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসৃজন সমান্তরাল নয়, অর্থাৎ যে হারে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে সে হারে কর্মসৃজন বাড়ছে না।

যুগান্তর : অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অনেক ক্ষেত্রে কর ছাড় সুবিধা প্রত্যাহারের চিন্তা করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা?

মাহবুব আহমেদ : আমি আগে বলব, আমাদের মতো অর্থনীতিতে বাজেটের আকার হওয়া উচিত জিডিপির অন্তত ২৫ শতাংশ। কিন্তু বাজেট করতে পারছি ১৫ শতাংশের মতো, খরচ করছি ১৩-১৪ শতাংশ। মূল কারণ সরকারের আয়ের অভাব। বর্তমান রাজস্ব জিডিপির অনুপাত ৮.২ এবং কর জিডিপি ৭.২ শতাংশ। ফলে আয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। কর ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই নানারূপ ছাড় সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ সুবিধার পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এরূপ একটি পরামর্শ দিয়েছে যা ভাবা যেতে পারে। কর ছাড় নয়-অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা, ব্যবসায়িক জটিলতা হ্রাস ও নানারূপ নীতি-সহায়তার মাধ্যমে ওই বিনিয়োগকারীকে সহায়তা করা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত হবে।

যুগান্তর : বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

মাহবুব আহমেদ : আমরা যত কথাই বলি না কেন, চূড়ান্ত বিচারে দ্রব্যমূল্য অস্থির হয় চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও গাজা পরিস্থিতি ইত্যাদি কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্যের সরবরাহ চেইনে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার এবং ডলারের মানের ক্রমাগত বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ভার শুধু সরকারের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। ইতোমধ্যে সরকার নানারূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আশানুরূপ ও ফল পাওয়া যায়নি। মূল্যস্ফীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তাসাধারণ। এই পর্যায়ে তাদের কিছু করণীয় আছে কিনা তাও ভাবে দেখা প্রয়োজন।

আমি আরও বলব, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে কোনো কোনো মহল ব্যবসায়ীদের অনুনয়-বিনয় করেছে। বাজার মনিটরিং হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। ডলার সংকটের মধ্যেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানিতে যাতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা হয়। অর্থাৎ বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের কোনো অভাব ছিল না। দেশের অভ্যন্তরের উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তারপরও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাহলে ভোক্তা হিসাবে আমরা কি ব্যবসায়ীদের লাভ বা অতিলোভের শিকার হয়ে বেঁচে থাকব? আমাদের কি কিছু করণীয় নেই? এক কথায় উত্তর হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে আমার-আপনার অর্থাৎ ভোক্তাদের হাতে। ভোক্তারা যদি সাময়িক ক্রয় কমিয়ে দেন তাহলে বাজারে চাহিদার পরিমাণ হ্রাস পেয়ে মূল্য কমে যেতে বাধ্য।

যুগান্তর : আসন্ন বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর আইএমএফ’র পরামর্শে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে না। এ সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত?

মাহবুব আহমেদ : আইএমএফ যখন এরূপ পরামর্শ দেয়, তখন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাজারের সুদের হার অপেক্ষা অনেক বেশি ছিল। ইতোমধ্যে সুদের হারের ছয়-নয় ক্যাপ তুলে নিয়ে বাজারভিত্তিক করা হয়। ফলে ব্যাংকে আমানতের সুদের হার অনেক বেড়েছে, সেটি অনেক ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র অপেক্ষা বেশি। আইএমএফ’র ওই পরামর্শ এখন কার্যকারিতা হারিয়েছে। তাই সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ না করে ব্যাংক থেকে বেশি করার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে হয় না। এতে করে বেসরকারি খাত বিনিয়োগের জন্য মূলধন সমস্যায় পড়তে পারে।

যুগান্তর : বিদেশি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, যে কারণে পরিশোধের চাপও বাড়ছে। শেষ পর্যন্ত এটি অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কিনা?

মাহবুব আহমেদ : সরকারি ঋণের ৬৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ও ৩৭% বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাপ্ত। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৯৯ বিলিয়ন ডলার, জিডিপি ৪৫৪ বিলিয়ন ডলার। ফলে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ২১.৮০ শতাংশ। এছাড়া ঋণের ৮৩ বিলিয়ন ডলার দীর্ঘমেয়াদি এবং ১৬ বিলিয়ন ডলার স্বল্পমেয়াদি।

বৈদেশিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত মাত্র ২১.৮০ শতাংশ হলেও মোট সরকারি বৈদেশিক ঋণ ও সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ এক বছরের রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের মাত্র ৮২.৭৭ শতাংশ। হিসাব অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে মোট রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশের সমান অর্থ কিস্তি বাবদ পরিশোধ করতে হবে।

বৈদেশিক ঋণ নিয়ে আতঙ্কিত না হলেও সতর্ক ও সাবধান হওয়া প্রয়োজন। বৈদেশিক ঋণ নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ অতিসতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। যাতে এসব ঋণ ভবিষ্যতে পরবর্তী প্রজন্মের গলার কাঁটা না হয়ে দাঁড়ায়। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কোনো খারাপ রেকর্ড নেই।

এছাড়া এ পর্যন্ত বিদেশি ঋণের ৬৩ শতাংশই নেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি থেকে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক থেকে ৩৮ শতাংশ, এডিবি থেকে ২৫ শতাংশ। ১৭ শতাংশ জাপানের। এগুলোর অধিকাংশই স্বল্প সুদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। এছাড়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে চীনের ৭ শতাংশ, রাশিয়া থেকে ৬ শতাংশ এবং ভারত থেকে এক শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
• অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবসায়িক অগ্রগতি বিষয়ক সভা
• জেনেক্স ইনফোসিসের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চুক্তি
• কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিল সাউথইস্ট ব্যাংক
• কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
• অগ্রণী ব্যাংকে ব্যবসায়িক অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা সভা
• কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক
• অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবসা উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত
• ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ
• অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবসা উন্নয়ন সভা অনুষ্ঠিত
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved