সরকারের সার্বিক জবাবদিহিতায় ধস নেমেছে। দেখা যাচ্ছে অনিয়ম ধরা পড়েছে, কিন্তু তার কিছু হচ্ছে না। ব্যাংক খাতে নিয়ম তৈরি হয়েছে দুর্নীতির জন্য, লুটপাটের জন্য। অনিয়মের ধারাবাহিকতায় অদক্ষ অর্থনৈতিক শাসনে পরিণত হয়েছে।
ফলে এক ধরনের বড় সামষ্টিক অর্থনীতির ধসের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় দ্য ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘রিজিওনাল অর্থনীতি : এখন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মোস্তাফিজুর রহমান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল ও আলী রিয়াজ, সাবেক মুখ্য সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক ব্যাংকার আবু নাসের, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
হোসেন জিল্লুর বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতিতে তিনটি মডেল দাঁড়িয়েছে। প্রথমত, উন্নয়নের অর্থায়ন পুরোপুরি ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়ত, উন্নয়নের খরচের অদক্ষতা বহুগুণ বেড়েছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব অতিমাত্রায় হয়ে গেছে।
তৃতীয়ত, ঋণনির্ভর হয়ে খরচ উল্টো দিকে হেঁটেছে। যশোরে হাই-টেক পার্ক করে সেখানে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, কারণ ভালো বিনিয়োগকারী আসেনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে সামগ্রিক দায়দেনা ও বেসরকারি খাতের দায় খুবই জটিল। অবস্থা এমন হয়েছে যে নিট রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকার পরও প্রবৃদ্ধির ধারা আরো শ্লথ হয়েছে।
গত বছরের বাজেটে শুধু চ্যালেঞ্জ ছিল মূল্যস্ফীতি, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদেশি ঋণের ঝুঁকি। এ পরিস্থিতির বড় কারণ, যে রাজনৈতিক জবাবদিহির প্রয়োজন ছিল সেটি নেই। নাগরিকদের দুর্ভাগ্য যে তারা কায়েমি স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে আমরা। ব্যবসা, রাজনৈতিক দল ও আমলারা একটা জালে আটকা। এই জালের সঙ্গে আছে আন্তর্জাতিক সমর্থন। যাঁরা সিভিল সোসাইটিতে আছেন তাঁরাও দুর্বল। সিভিল সোসাইটি বলতে আমরা যাদের বুঝি, তাঁরা কোনো না কোনো সমস্যায় জর্জরিত। তাঁদের নৈতিক স্খলন হয়েছে।’