Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে [ অনলাইন ] 05/05/2024
কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে
১৯০ দেশের মধ্যে ৯৮টি দেশ নারীদের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানের আইন করেছে ♦ যেসব নারী গণপরিবহন ব্যবহার করে কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়া করে, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবে খুব কমসংখ্যক দেশ
বিশ্বের কোনো দেশেই পুরুষের সমান সুযোগ-সুবিধা পায় না নারীরা। ধনী দেশের নারীরাও সমতা থেকে বঞ্চিত। গত মার্চ মাসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ‘উইমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল’ শিরোনামের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে জানা যায়, ১৯০ দেশের মধ্যে ৯৮টি দেশ নারীদের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানের আইন করেছে।

২০২৩ সালে বিশ্বের সব দেশ তিনটি ক্যাটাগরিতে সমতা আনতে প্রচেষ্টা চালায়। এগুলো হলো বেতন প্রদান, অভিভাবকের অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা। প্রতিটি দেশ দুটি ক্যাটাগরিতে কম স্কোর পায়। এই দুই ক্যাটাগরি হলো শিশু লালনপালন ও নারীর নিরাপত্তা।

নারীর সুরক্ষার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের বিষয়টিও রয়েছে। বিশ্বের ১৫১টি দেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিষিদ্ধ। তবে মাত্র ৩৯টি দেশ জনসমাগমস্থলে হয়রানি নিষিদ্ধ করেছে। যেসব নারী গণপরিবহন ব্যবহার করে, কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়া করে, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবে খুব কমসংখ্যক দেশ।

সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মা যেন কাজে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করেছে এক-তৃতীয়াংশেরও কম দেশ। বাকি দেশগুলো শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় মানসম্মত সেবা দেয় না। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে গিয়েও তাদের সন্তানের সুরক্ষার ব্যাপারে চিন্তা করতে হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২২ সালে ‘হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে’ রিপোর্ট প্রকাশ করে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন দিক উঠে আসে এই রিপোর্টে।

জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে বেকারত্বের হার নারীদের মধ্যে ৫.৯ শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ২.৮ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৬.৫ শতাংশ, একই বয়সী পুরুষদের চেয়ে যা দ্বিগুণ বেশি। শ্রম বাজারে নারীর হার ৪৩ শতাংশ, পুরুষের ৮১ শতাংশ।

অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের সমপরিমাণ কাজ করলেও বেতন কম পায় নারীরা। ঘণ্টায় নারীদের তুলনায় পুরুষরা ৩৫.৪৮ শতাংশ মজুরি বেশি পেয়ে থাকে। কৃষি খাতে এই বৈষম্য আরো প্রকট। এই খাতে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্যের হার ৫৭.২ শতাংশ। বয়সভিত্তিক প্রতিটি শ্রেণিতে পুরুষদের চেয়ে নারীদের আয় কম। নারীর বার্ধক্য আসলে এই বৈষম্য আরো প্রকট হয়। ৬৫ বছর বয়সী বা তার ঊর্ধ্ব বয়সী নারীরা একই বয়সের পুরুষদের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম আয় করে। লিঙ্গভেদে আয়ের পার্থক্যের প্রধান কারণ পেশাগত বিভাজন। এর ফলে কম বেতন দেওয়া এমন খাত বা চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। নিয়োগের সময় বৈষম্যের কারণেও তারা সুযোগ হারায়। সিদ্ধান্ত বা নীতিমালা তৈরির পর্যায় নারীদের সংখ্যা খুবই কম। ফলে মজুরিবৈষম্য দূর করার নীতিমালা খুব একটা গতি পায় না। এ ছাড়া নারীদের কাছে সম্পদ কম থাকে। এতে ব্যবসা শুরু করতে, উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে কিংবা প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে তারা বাধার সম্মুখীন হয়। ২০২২ সালের হিসাবে ২২.৩ শতাংশ নারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এর বিপরীতে ৩৪.৫ শতাংশ পুরুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে।

নারীদের মধ্যে পূর্ণকালীন চাকরিতে যোগদান করার হার কম। নারীদের (৩৫.৪ শতাংশ) খণ্ডকালীন চাকরি করার হার পুরুষদের (২৮.৭শতাংশ) তুলনায় বেশি। কৃষি খাতে নারীদের খণ্ডকালীন কাজের হার বেশি। প্রতি ১০ জনে আটজন খণ্ডকালীন কৃষিকাজ করে। পুরুষদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে পাঁচজন খণ্ডকালীন কাজ করে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষরা গড়ে নারীদের চেয়ে দুই ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় করে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাঙ্কর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক জরিপ থেকে জানা যায়, দেশের রেডিমেড গার্মেন্ট (আরএমজি) ফ্যাক্টরিগুলোতে ‘জেন্ডার পে গ্যাপ’ বা লিঙ্গভেদে আয়ের পার্থক্য ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে।

আরএমজি খাতে বেশির ভাগ কর্মী নারী হলেও ফ্যাক্টরির ম্যানেজারিয়াল পদে পুরুষরাই থাকেন। যোগ্যতা থাকলেও ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব পান না নারীরা। এর প্রধান কারণ সংসারের চাপে তারা যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। সময় দিতে না পারার কারণে অনেক সময় পদোন্নতি পেলেও স্বেচ্ছায় সুযোগ ছেড়ে দেন।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, জেন্ডার পে গ্যাপ কমিয়ে আনলে সামষ্টিক অর্থনৈতির উন্নতি ঘটে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটার পাশাপাশি দারিদ্র্যও কমে। এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল বলেন, ধীরগতিতে চলা বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা খুব দ্রুত ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে নারীদের। বিশ্বজুড়ে বৈষম্যমূলক আইন ও প্রচলিত ধ্যান-ধারণা নারীকে পুরুষের কাতারে দাঁড়িয়ে ব্যবসা শুরু করার সুযোগ দেয় না। এই দূরত্ব ঘুচলে বিশ্বব্যাপী মোট জিডিপির হার ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে আগামী দশকে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দ্বিগুণ বাড়তে পারে। তবে বৈষম্য কমিয়ে আনতে আইন সংস্কার হচ্ছে খুব ধীরগতিতে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, মজুরিতে সমতা আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৭২.২ শতাংশ। বৈশ্বিক তালিকায় দেশের অবস্থান ৫৯।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved