Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট ভয়ংকর হবে [ অনলাইন ] 08/05/2024
যুগান্তরকে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি
আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাজেট ভয়ংকর হবে
কাস্টমস-ভ্যাটের হয়রানি অব্যাহত থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হতে বাধ্য * নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের শর্ত হিসাবে কর অব্যাহতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে বলেছে। এই শর্ত পূরণে আলাপ-আলোচনা ছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া হলে তা স্থানীয় শিল্পের জন্য ভয়ংকর হবে। আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাজেটে রাজস্ব নীতি গ্রহণ যৌক্তিক হবে না। যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমএই) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সাক্ষাৎকার নিয়েছে স্টাফ রিপোর্টার সাদ্দাম হোসেন ইমরান

যুগান্তর : ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে বাজেটে কী পদক্ষেপ থাকা উচিত?

মোহাম্মদ হাতেম : ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। মোটা দাগে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য জ্বালানি সংকট দূর করে নিরবচ্ছিন্ন জালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ম্যান মেইড ফাইবারের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কর প্রত্যাহার করতে হবে। সর্বোপরি আমদানি ও রপ্তানির সব স্তরে কাস্টমসের জটিলতা দূর করে হয়রানিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই। শুধু নামকাওয়াস্তে নয়, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রকৃত অর্থে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখতে আইনি সংস্কার জরুরি। রাস্তাঘাটে বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি শিল্পের মালামাল বহনকারী গাড়ি আটকানো এবং জরিমানার বিধান থাকতে হবে বাজেটে। ডলারের দামের ওঠানামা বন্ধ ও সুদ হার স্থিতিশীল রাখতে হবে।

যুগান্তর : আইএমএফের পরামর্শে কর অব্যাহতি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা থাকছে বাজেটে। এতে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা?

মোহাম্মদ হাতেম : আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাই চায় না বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক বা দেশীয় শিল্প বিকশিত হোক। তারা চায় ঋণের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশের অগ্রগতি স্থবির করে রাখতে। যেমন সামান্য ঋণের বিনিময়ে আইএমএফ শিল্পের কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া বা জ্বালানির ভর্তুকি কমিয়ে আনার মতো শর্ত দিয়েছে। বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে, শর্ত কতটুকু মানা হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ নির্বাচনের আগেও এক পরাশক্তির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিয়ে সাহকিতার পরিচয় দিয়েছেন। সুতরাং দেশের জনবিরোধী ও শিল্পায়নবিরোধী আইএমএফের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানা ঠিক হবে না।

যুগান্তর : ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সরকার জ্বালানির দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এতে শিল্পে কেমন প্রভাব পড়বে?

মোহাম্মদ হাতেম : জ্বালানির ভর্তুকি কমানোর জন্য দাম বাড়াতে হবে, এ পদ্ধতির সঙ্গে শিল্প মালিকরা একমত নয়। দাম না বাড়িয়েও সিস্টেম লসের নামে চুরি বন্ধ করা হলে বিদ্যুৎ-গ্যাসের ভর্তুকি কমিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়া ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কুইক রেন্টালকে বসিয়ে বসিয়ে টাকা দেওয়ার মতো বিলাসিতা করার অবস্থায় বাংলাদেশ এখন আর নেই। অতি সত্বর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া বন্ধ করা উচিত। তাছাড়া সরকার তো শিল্প খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে না। জ্বালানির দাম সবচেয়ে বেশি শিল্প খাতে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইএমএফের প্রেসক্রিপশনের জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে তা শিল্পের জন্য আত্মঘাতী হবে।

যুগান্তর : সুদহার বাড়ছেই। এতে রপ্তানিমুখী প্রতিযোগী সক্ষমতায় প্রভাব ফেলছে কিনা? বাজেটে এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ থাকতে পারে?

মোহাম্মদ হাতেম : ব্যাংক খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ঋণের সুদের হারে লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ব্যাংকগুলো এখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা না করে সরকারকে ঋণ দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। কিছুদিন আগে স্মার্ট পদ্ধতির ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হতো। এ পদ্ধতি করা হয়েছে, বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুদের হার ওঠানামা করবে। কিন্তু স্মার্ট (ঋণের সুদ নির্ধারণের পদ্ধতি) কারণে সুদহার শুধু বেড়েছেই। এখন আবার সুদহার বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অবস্থায় সুদহার কোথায় যাবে একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। সুদহার বৃদ্ধিসহ নানা কারণে যারা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের জন্য বাজেটে সেফ এক্সিট পলিসি প্রণয়ন করা উচিত এবং সেখানে বরাদ্দ রাখা উচিত।

যুগান্তর : বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ নেই। তারপরও কাস্টমসে রপ্তানিমুখী শিল্পের হয়রানির অভিযোগ শোনা যায়। এর কারণ কী?

মোহাম্মদ হাতেম : কাস্টমসের হয়রানি চরমে পৌঁছেছে। এনবিআরের প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট নানা কায়দায় হয়রানি করছে। যেমন বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমস রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের পূর্বে স্বর্ণ মাপার নিক্তি (ডিজিটাল স্কেল) দিয়ে তৈরি পোশাক ওজন করছে। ওজনে সামান্য হেরফের হলে মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগে মোটা অঙ্কের জরিমানা তো করছেই, সঙ্গে মানি লন্ডারিং মামলার হুমকি দিচ্ছে। আবার অনেক রপ্তানিকারকের মাল আটকে দিচ্ছে ব্র্যান্ডের পোশাক রপ্তানি করা যাবে না-এ অজুহাত। কাস্টমসের কাজ কী কোনো রপ্তানি পণ্য মনিটরিং করা। পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশকে ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত করেছে, সে বিষয়ে তো কাস্টমসকে ভূমিকা নিতে দেখেনি। তখন তারা দোষ চাপায় আমদানি নিতে আদেশের ওপর, আর সরকারের অন্য সংস্থার ওপর। কাস্টমস-ভ্যাটের অত্যাচারে শিগগিরই বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা আর থাকবে না, সব বন্ধ হয়ে যাবে।

যুগান্তর : ভ্যাটের হয়রানির সম্পর্কে বলুন?

মোহাম্মদ হাতেম : ভ্যাটে অডিটের নামে, রাস্তায় গাড়ি আটকে চালান দেখার নামে হয়রানি বেড়েই চলেছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। রপ্তানিমুখী শিল্প ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও অডিট রিপোর্ট নিয়ে কেনাকাটার বিপরীতে ৫০ কোটি, ৬০ কোটি টাকার দাবিনামা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কাজ ব্যবসা করা, নাকি এনবিআরের পক্ষে ভ্যাট আদায় করা। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীর দুই প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি টাকা দাবিনামা পাঠানো হয়েছে, ওই ব্যবসায়ী বছরে ৪৫০ কোটি টাকার মতো রপ্তানি করেন। অর্থাৎ ১৪ শতাংশের কাছাকাছি ভ্যাট দাবি করা হয়েছে। আবার রাস্তায় রাস্তায় ভ্যাটের অফিসাররা রপ্তানিমুখী শিল্পের গাড়ি আটকিয়ে চালানপত্র দেখতে চাচ্ছেন। রপ্তানিমুখী শিল্পকে বিকশিত করতে চাইলে এ ধরনের হয়রানি বন্ধ করতেই হবে। এভাবে চলতে থাকলে বেশিদিন লাগবে না, এ ব্যবসা অন্য দেশে চলে যেতে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করতে ভ্যাট-কাস্টমসের হয়রানির যথেষ্ট।

যুগান্তর : আয়করে রপ্তানিমুখী শিল্পে সমস্যা আছে কিনা?

মোহাম্মদ হাতেম : শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আদায় করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এই কর আদায় করা হয় কিনা তা আমার জানা নেই। এআইটি আদায় করা হলেও পরবর্তীতে রপ্তানিমুখী শিল্পে সেটি সমন্বয় করা হয় না। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআর সেই পথ বন্ধ করে রেখেছে। কেন এটি করা হয়েছে, তার জবাব কারও কাছে নেই। এআইটি তৈরি পোশাক খাতের জন্য আতঙ্ক বলা চলে। আবার রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর আদায় করা হয়। আগে দশমিক ৫ শতাংশ আদায় করা হলেও এখন ১ শতাংশ আদায় করা হয়। এ করকে চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা দাবি দীর্ঘদিন জানিয়ে আসলেও এনবিআর কোনো কর্ণপাত করছে না। উলটো অ্যাসেসমেন্টের নামে উৎকোচ গ্রহণের পথ খোলা রাখা হয়েছে।

যুগান্তর : কর আদায় বাড়াতে এনবিআর কী উদ্যোগ নিতে পারে?

মোহাম্মদ হাতেম : এখন যারা ভ্যাট-ট্যাক্স দেন, শুধু তাদের কাছ থেকেই ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করা হয়। আর যারা ভ্যাট-ট্যাক্স দেন না, তাদের দিকে এনবিআরের মনোযোগও নেই। যত জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন শুধু যারা ভ্যাট-ট্যাক্স দেন তাদের ওপর। এর অবশ্য কারণও আছে। এনবিআর কখনোই কষ্ট করে রাজস্ব আদায় করতে হবে, এমন কৌশল নেয় না। প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা। করজাল বাড়ানোর মাধ্যমেই শুধু করের বোঝা লাঘব করা সম্ভব, সেটি এনবিআরও জানে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয় না। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের সম্ভাবনাময় এলাকা থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ে এনবিআরকে মনোযোগী হতে হবে।


News Source
 
 
 
 
Today's Other News
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved