চট্টগ্রাম বন্দরে প্রস্তাবিত চারটি বে-টার্মিনালের
নির্মাণকাজ শিগগিরই শুরু হবে। এর মধ্যে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে
চার নাম্বার টার্মিনালটি লিইকুড টার্মিনাল তথা গ্যাস ও তেল টার্মিনাল
নির্মাণে প্রস্তাব দিয়েছে দেশের জ্বালানি খাতের অন্যতম বড় শিল্প গ্রুপ
ইস্ট-কোস্ট গ্রুপ। এ টার্মিনাল নির্মাণে গ্রুপটিসহ তাদের বিদেশি পার্টনার
মিলে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। চলতি বছরের এ
বিষয়ে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশের আমদানি ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধির
সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ
বে-টার্মিনাল প্রকল্প। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের
ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প হলো বে-টার্মিনাল। নগরীর
পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার সাগর তীরঘেঁষে প্রস্তাবিত এ টার্মিনালের জেটিতে ১২
মিটার গভীরতা এবং ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারবে। কর্ণফুলীর
তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান জেটিগুলোয় ৯ দশমিক ৫ মিটার
গভীরতা ও ১৯০ মিটারের বড় কোনো জাহাজ ভিড়তে পারে না। আর বে-টার্মিনালে
কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা হবে প্রায় ৫০ লাখ টিইইউএস। অর্থাৎ এ প্রকল্প
বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান সক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ পণ্য
হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে বে-টার্মিনালের ভূমি বরাদ্দ জটিলতা
প্রায় শেষদিকে। পাশাপাাশ মাস্টারপ্ল্যান হয়ে গেছে। ১২-১৪ মিটার ড্রাফটের
চ্যানেল। সব নকশা চূড়ান্ত। এতে চারটি টার্মিনাল করা হবে। এর মধ্যে
মাল্টিপারপাস টার্মিনালে আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ (এডি পোর্ট) এক বিলিয়ন ডলার
বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে। অন্যদিকে টার্মিনাল-১ ও ২ নির্মাণে পিএসএ
সিঙ্গাপুর ও ডিপি ওয়ার্ল্ড টার্মিনাল নির্মাণে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার
বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। বাকি লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণে দেশি
প্রতিষ্ঠান ইস্ট-কোস্ট গ্রুপ এবং তাদের সহযোগী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সাড়ে ৩
বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। অর্থাৎ বিদেশি বিনিয়োগে
বে-টার্মিনালের পুরোটাই হবে।
বন্দর কর্মকর্তারা বলেন, গত ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বে-টার্মিনাল নির্মাণ
প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ
জটিলতা, চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, অর্থায়নসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের
বাস্তবায়ন কাজ এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে বে-টার্মিনালের ভূমি
বরাদ্দ জটিলতা প্রায় শেষদিকে। পাশাপাাশ মাস্টারপ্ল্যান হয়ে গেছে। ১২-১৪
মিটার ড্রাফটের চ্যানেল হবে। সব নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিয়াল মোহাম্মদ
সোহায়েল বলেন, ‘গতানুগতিক সিস্টেম থেকে বেরিয়ে ল্যান্ডলর্ড সিস্টেমে বন্দর
পরিচালনা শুরু করেছি। এর মধ্যে পিসিটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিতে সক্ষম
হয়েছি। চলতি বছরের শেষ দিকে আমরা বে-টার্মিনালের কাজ শুরু করতে পারব।
বিদেশি বিনিয়োগে বে-টার্মিনালের পুরোটাই হবে। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা
রিজার্ভ বাড়বে।’
উল্লেখ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং আগের
অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত
থাকলে এবার ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে। অপরদিকে
অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখ ৪৯
হাজার টন। এ সময় জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ১টি।