Hawkerbd.com     SINCE
 
 
 
 
বহিঃস্থ ও মূল্যস্ফীতির চাপ তীব্রতর হলে আরো কঠোর নীতির পরামর্শ [ পাতা ১ ] 09/05/2024
আইএমএফের রিভিউ মিশন সমাপ্ত
বহিঃস্থ ও মূল্যস্ফীতির চাপ তীব্রতর হলে আরো কঠোর নীতির পরামর্শ
ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে বেঁধে দেয়া শর্ত ও সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পরিদর্শনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদের রিভিউ মিশন শেষ হয়েছে গতকাল। গত ২৪ এপ্রিল এ মিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। মিশন শেষে গতকাল বাংলাদেশ ও আইএমএফের কর্মকর্তাদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। আইএমএফ বলছে, বহিঃস্থ ও মূল্যস্ফীতির চাপ আরো তীব্র হয়ে উঠলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে পরবর্তী সময়ে আরো কঠোর নীতি গ্রহণের জন্য তৈরি থাকতে হবে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সঙ্গে গতকাল তার কার্যালয়ে আইএমএফের গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে রিভিউ মিশনের কর্মকর্তারা সমাপনী বৈঠক করেন। এ সময় অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে যেসব সংস্কার করেছি এবং আগামীতে করার উদ্যোগ নিয়েছি তাতে আইএমএফ সন্তুষ্ট। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, আইএমএফ তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় প্রায় অর্ধেক। আইএমএফ করের পরিসর বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়েও তাদের কিছু পরামর্শ রয়েছে। আমরা আশা করছি, পর্ষদের অনুমোদনের পর দ্রুত আইএমএফ অর্থ ছাড় করবে।’

এ সময় অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে দুই সপ্তাহ ধরে আলোচনা হয়েছে। বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সংস্থাটির বেঁধে দেয়া ১০ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আমরা নয়টিই পূরণ করতে পেরেছি। যেটি পূরণ করতে পারিনি, সেটির কারণ আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি। তারা আমাদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট। আশা করছি আমরা পরবর্তী কিস্তির টাকা পাব। আগামী জুনে আইএমএফের পর্ষদের অনুমোদনের পর কিস্তির অর্থ ছাড় হবে বলে আশা করছি।’

রিভিউ মিশন শেষে আইএমএফের পক্ষ থেকে গতকাল এক লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মিশনের কর্মকর্তারা। আইএমএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঋণ কর্মসূচির দ্বিতীয় রিভিউ সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগুলোর বিষয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তারা ও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ মতৈক্যে পৌঁছেছে। রিভিউটি বর্তমানে আইএমএফের পর্ষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পর্ষদের অনুমোদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ তৃতীয় কিস্তির ৮৭ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) বা ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার পাবে। এর মধ্যে ইসিএফ/ইইএফের আওতায় ৭০ কোটি ৪৭ লাখ এসডিআর বা ৯৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং আরএসএফের আওতায় ১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার এসডিআর বা ২২ কোটি ডলার দেয়া হবে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সামষ্টিক অর্থনীতির অসামঞ্জস্য দূর করার জন্য বিনিময় হার পুনর্বিন্যাস, ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা চালু ও সুদহার উদারীকরণের মতো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য চলমান প্রচেষ্টা ও সংস্কার কার্যক্রমের গতি ধরে রাখার জন্য এটি অপরিহার্য। আইএমএফের সহায়তায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সংস্কার কর্মসূচি দেশটিকে কঠিন বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে পথ চলতে সাহায্য করবে।

পাপাজর্জিও তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ আইএমএফের কর্মসূচির আওতায় জ্বালানি পণ্যের দর সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ফর্মুলাভিত্তিক পদ্ধতি বাস্তবায়নসহ কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবুও বৈশ্বিক ক‌ঠিন আর্থিক পরিস্থিতির অপ্রত্যা‌শিত প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখিতার সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের অস্থিরতা যুক্ত হয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাতে ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় রয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। এটি অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে এবং সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জকে বাড়িয়ে তুলছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিনিময় হার পুনর্বিন্যাস ও ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আইএমএফ বলছে, বাহ্যিক সহনশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিনিময় হারে নমনীয়তা এক্ষেত্রে সহায়ক হবে। সুদহার উদারীকরণের পাশাপাশি কঠোর মুদ্রানীতি ও বিনিময় হারে সংস্কার মূল্যস্ফীতির চাপ দূর করতে সহায়তা করবে। মুদ্রাবাজারের এ কঠোরতাকে রাজস্বভিত্তিক সমন্বয়ের মাধ্যমে আর্থিক নীতির সহায়তা করা উচিত।

নীতি ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ক্রমান্বয়ে স্থিতিশীলতার দিকে যাবে বলে প্রত্যাশা করছে আইএমএফ। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, চলমান আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও নীতি কঠোরতার কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। আমদানি বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সহনীয় হয়ে এলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪ শতাংশ থাকলেও চলমান কঠোর নীতি ও বৈশ্বিক পর্যায়ে পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য কমার আভাস থাকায় ধরে নেয়া যায় আগামী অর্থবছরে এটি ৭ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

মিশনের কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন হলো বাংলাদেশের নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত বিবেচনায় সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ বাড়াতে টেকসই রাজস্ব আহরণ অপরিহার্য। এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে দৃশ্যমান করনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল বাস্তবায়ন কাঠামো ভবিষ্যতের সংস্কারকে পথ দেখাবে। ভর্তুকি কমানো, ব্যয় দক্ষতা উন্নত করা এবং রাজস্ব ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মতো কার্যক্রম সামাজিক সুরক্ষা জাল ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি ব্যয়ের সুযোগ করে দেবে।

ব্যাংক খাতের অস্থিরতা কমিয়ে আনাকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার কৌশল বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অর্থনীতির বাড়তি অর্থায়ন চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে। আর্থিক খাতের সহনশীলতা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ঝুঁকিভিত্তিক নজরদারি চালু রাখতে হবে। করপোরেট সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো উন্নত করতে আইনি সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য স্থানীয় পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশের ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংস্কার কার্যক্রমে গতি বজায় রাখা আবশ্যক উল্লেখ করে আইএমএফ বলছে, বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ ও জলবায়ু বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সুশাসন সংহত করা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সহনশীলতা তৈরি করা সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক ঝুঁকি প্রশমনে সহায়ক হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের রিভিউ মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেশ উচ্চ অবস্থানে ছিল। এর পর থেকে বৈশ্বিক কঠিন পরিস্থিতির প্রভাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমছে। ঋণ কর্মসূচি রিজার্ভের আওতায় গৃহীত পদক্ষেপ রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে। নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ অনুরোধ করেছে। আমরা নিজেদের মধ্যে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। আগামী জুনে আমাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিট রিজার্ভের পুনর্নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা প্রকাশ করা হবে।’

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‌এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আইএমএফের নীতি অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অর্থ পাচারের বিষয়ে আমরা বিএফআইইউর সঙ্গে কাজ করছি।’

উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‌বিনিময় হার বাড়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে। এ সময় বাংলাদেশকে কিছুটা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে সুদহার বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক পর্যায়ে পণ্যের দাম কমে এলে সামনের বছর মূল্যস্ফীতি সহনীয় হয়ে আসবে বলে আশা করছি।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
News Source
 
 
 
 
Today's Other News
• ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি
• চূড়ান্ত ধাপে বাজেট তৈরির কাজ
• ‘টেকা দেন দুবাই যামু’
• কালোটাকা আর সাদা নয়: সিপিডি
• শেষ হচ্ছে শূন্য শুল্কের দিন
• ১২ পণ্যে ভ্যাট বসছে ১৫ শতাংশ
• ইন্দোনেশিয়ায় ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে
• টেকসই প্রবৃত্তি অর্জনে শক্তিশালী ও দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে
• বিজিএমইএকে সাত দেশের কুটনীতিকরা
• ই-ফাইলিং বাধ্যতামূলক হলে বাড়তি কর আসবে ২ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা
More
Related Stories
 
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
Forward to Friend Print Close Add to Archive Personal Archive  
 
 
Home / About Us / Benifits / Invite a Friend / Policy
Copyright © Hawker 2013-2012, Allright Reserved