[ অনলাইন ] 09/05/2024 |
|
|
|
সবজি চাষিদের শতকোটির ক্ষতি, কর্মহীন হচ্ছেন শ্রমিক |
|
|
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ আর পানি সংকটে টানা এক মাসে সবজির ‘রাজ্য’ খুলনার ডুমুরিয়ায় কৃষকের শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সবজি বাজারেও পড়েছে তার প্রভাব। বাজারে দ্বিগুণের বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের সবজি কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলায় সবজি পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত হাজারও শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ৯টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া সবজি উৎপাদনে বিখ্যাত। চলতি খরিপ মৌসুমে ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লাউ, বেগুন, ডাঁটা, লালশাক, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পটোল, পুঁইশাক, বরবটিসহ অন্যান্য সবজি চাষ হয়। এবার সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার টন, যার মূল্য ধরা হয় ৫৪৬ কোটি টাকা। তবে পানি সংকট ও তাপপ্রবাহের কারণে সবজির উৎপাদন বেশ কমেছে। সারাবছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ডুমুরিয়ার চাষিরা খুলনা, যশোর, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডুমুরিয়ার সবজি রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু সবজি উৎপাদন কম বলে রপ্তানিতেও ধস নেমেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাপপ্রবাহে উপজেলার সবজি চাষিদের প্রায় শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের ক্ষতির প্রকৃত চিত্র জানতে মাঠ পর্যায়ে জরিপের কাজ চলছে।
কৃষকদের ভাষ্য, চলতি মৌসুমের শুরুতে টানা প্রায় এক মাস প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং পানি সংকট ছিল প্রকট। এ কারণে কৃষকের অতিরিক্ত সেচ সুবিধা ও শ্রমিকের জন্য বাড়তি উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। সবজির উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
স্থানীয় সবজি চাষি নবদ্বীপ মল্লিক, প্রকাশ কুমার রায় ও আমজাদ আলী জানালেন, অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের কারণে খালেবিলে ও পুকুরে কোথাও পানি নেই। সেচ সুবিধা সন্তোষজনক নয়। আবাদি জমির মাটি ফেটে চৌচির। দেখলে মনে হবে, মাটির বুকে যেন চাবুকের আঘাত পড়েছে। সবজি গাছ শুকিয়ে গেছে। গাছে ফলন নেই। চলতি মৌসুমে ক্ষেতে সবজি চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সবজি উৎপাদন অনেক কম বলে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থাও বিপর্যস্ত। বৃষ্টি নামলে নতুন করে ক্ষেতে বীজ বপন করা হবে।
আটলিয়া ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক প্রসেনজিৎ মণ্ডল বলেন, গত মৌসুমে তিনি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছিলেন। চলতি মৌসুমে ১ লাখ টাকার লাউ বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
কৃষি ও সবজি বাজারের (শ্রমিক) সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলায় ১০টি পাইকারি কাঁচাবাজার রয়েছে। এসব বাজারকেন্দ্রিক কয়েক হাজার শ্রমিক এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার রংপুর-কুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ মণ্ডল ও নারায়ণ বিশ্বাসের ভাষ্য, আগে ডিঙি নৌকা দিয়ে বিল থেকে কৃষকের ক্ষেতের সবজি বহন করে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা আয় করতে পারতেন। এখন খালবিলে পানি নেই। মাঠে তেমন সবজিও নেই। তাই বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।
ডুমুরিয়ার শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এক মাস আগে একটি লাউ ২০ টাকায় কিনতে পারতেন। এখন একই আকারের একটি লাউ কিনতে ৫০ টাকা খরচ হচ্ছে। এক কেজি ডাঁটাশাকের দাম ছিল ৮ টাকা। তা এখন ২০ টাকা। অন্যান্য সবজির দামও চড়া।
উপজেলার ‘আল্লাহর দান’ বাজারের স্বত্বাধিকারী জি এম আনিচুর রহমান এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, মাস খানেক আগে প্রতিদিন তাঁর বাজারে ৯ থেকে ১১ ট্রাক সবজি আমদানি হতো। এখন প্রতিদিন ২-৩ ট্রাক সবজি আসে। এতে বাজারের প্রায় ৬০-৭০ জন শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, তাপপ্রবাহে ও অনাবৃষ্টিতে চাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত দু’দিন রাতে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। এখন সবজি ক্ষেত আবারও সতেজ হয়ে উঠবে। কৃষক সাময়িক ক্ষতি পুষিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াবেন বলে তিনি আশাবাদী।
|
News Source
|
|
|
|
|
|
|
|
Today's Other News
|
Related Stories |
|
|
|
|