[ অনলাইন ] 04/12/2021
 
ডিএসইর সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে ১২৬৬ কোটি টাকা
আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহেও লেনদেন কমেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির লেনদেন কমেছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার বেশি। তবে লেনদেন কমলেও এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন বেড়েছে। বড় উত্থান হয়েছে সব সূচকেও। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গত সপ্তাহে সব সূচকে পয়েন্ট যোগ হয়েছে। কিন্তু আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে লেনদেন।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবসে সূচকে উত্থান-পতন হলেও শেষ দুই কার্যদিবসে সূচকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যকার মতপার্থক্যের জেরে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শেষ দুই কার্যদিবসে সূচকে বড় উত্থান হয়েছে। এছাড়া দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের আভাসের কারণেও পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত সূচক টেনে তুলতে ভূমিকা রেখেছে।

সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৬ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন কমেছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার বেশি বা ২০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

গত সপ্তাহে টাকার অংকে ডিএসইর গড় লেনদেনও কমেছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭ কোটি টাকা। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির গড় লেনদেন কমেছে ২৫৩ কোটি টাকার বেশি।

লেনদেন কমলেও গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমলেও গত সপ্তাহে সেটি বেড়েছে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। সপ্তাহ শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকার বেশি।

বাজার মূলধনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইর সব সূচকই বেড়েছে। এর মধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৪ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৯৩৬ দশমিক ২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৬ হাজার ৮৫২ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্টে।

নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৩ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬৩৫ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৬০২ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে।

ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৬ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪৫৮ দশমিক ৯২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪৪২ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৮৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৬টির, কমেছে ১৬৮টির, অপরিবর্তিত ছিল ৩৬টির। আর লেনদেন হয়নি ৪টির।

খাতভিত্তিক লেনদেনে গত সপ্তাহেও ব্যাংক খাতের আধিপত্য ছিল। লেনদেনচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ নিয়ে শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ১২ দশমিক ৭ শতংশ নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে বিবিধ খাত। ৮ দশমিক ৯ শতাংশ নিয়ে তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। এছাড়া পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। খাত দুটোর প্রতিটির লেনদেন ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে সমাপনী দরের ভিত্তিতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইতে সমাপনী দরের ভিত্তিতে দর পতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো আরামিট সিমেন্ট, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, এইচআর টেক্সটাইল লিমিটেড, সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এনআরবিসি ব্যাংক লিমিটেড, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড ও নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে প্রায় ২৪২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল প্রায় ২৬১ কোটি টাকার। গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৯৮ শতাংশ বেড়ে ২০ হাজার ২৫৪ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২০ হাজার ৫৮ দশমিক ১৩ পয়েন্টে।

আলোচ্য সময়ে সিএসইতে মোট ৩৩৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৩টির। কমেছে ১৬২টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ২৪টির শেয়ারদর।