[ Page 16 ] 22/11/2022
 
দালাল দৌরাত্ম্য ও এমসি বাণিজ্য
-কাইয়ুম উলস্নাস, সিলেট

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধ চোর চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রটি ভুয়া প্রেসক্রিপশন টোকেন দিয়ে রোগীকে দিয়ে ওষুধ আনিয়ে চুরি করে। হাসপাতালে রয়েছে একাধিক দালালচক্র। সকাল ও রাতে দালালরা রোগীদের বিভ্রান্ত করে টু-পাইস কামাচ্ছে। এরকম বেশ কয়েকজন দালালের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওসমানী হাসপাতালে মূলত সরকারি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করার নিয়ম থাকলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে, নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের একটা চক্র 'হাসপাতালে এই ওষুধ নেই, বাইরে থেকে আনতে হবে'- এই কথা বলে রোগীর স্বজনের হাতে একটা টোকেন প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেন। স্বজনরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে এনে দেন। কিন্তু সেই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা না করে লুকিয়ে ফেলা হয় নিমিষেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরকম ওষুধ চুরির সঙ্গে জড়িতরা হলেন, ইমারজেন্সি বিভাগের আলাউদ্দিন, রহমান, সোহেল, অপু, সুজন। ৩য় তলার নিউরো সার্জারির ১১ নং ওয়ার্ডের বয় বলাই, গৌরাঙ্গ, গোপাল, এমদাদ ও রবি। ২য় তলার গাইনি লেবার ওয়ার্ডের মিলাদ, বাদল ও শাহিন। নিচ তলার সার্জারি ৩১ নং ওয়ার্ডের হিরন ও রুবেল। হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, রোগীর স্বজনদের দিয়ে কিনিয়ে আনা বাইরের ওষুধগুলো লুকিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে স্তূপ করা হয়। পরে এই ওষুধ বাইরের ফার্মেসিগুলোতে আবার দালালদের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। একই ওষুধ হাসপাতালের ভেতর-বাহির হয় কয়েকবার। ইমারজেন্সি ও তয় তলার নিউরো সার্জারি বিভাগের ১১ নং ওয়ার্ডে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার ওষুধ চুরি করে বাইরে বিক্রি করা হয়। রোগীর স্বজনদের দিয়ে কিনিয়ে আনা এসব ওষুধ চুরি অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘটছে। আবার উল্টোও হয়। বিশেষ করে সিজারের রোগীর ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনকে বলা হয়, বাইরে থেকে ওষুধ আনা লাগবে না। ভিতর থেকে ওষুধ ম্যানেজ করে দেওয়া যাবে। অবশ্য, নার্স ও বয়দের রোগীর ম্যানেজ করতে হয় ওষুধের বাড়তি বিল দিয়ে। গত ১৬ নভেম্বর হাসপাতালের পুরাতন স্টাফ কোয়ার্টারের ছাদ থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ওষুধের বাজারমূল্য প্রায় ৪ লাখ টাকা। এদিকে ওসমানী হাসপাতালে নাইট দালালদের দৌরাত্ম্য আবারও বেড়েছে। বেশ কিছু দালাল রোগীদের বিভ্রান্ত করে আশপাশের ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নিয়ে যায়। বাড়তি টাকায় ওষুধ ও রোগ পরীক্ষার বিল ধরিয়ে সুবিধা নিচ্ছে তারা। এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, আরবিএস, ইসিজি, কিটিনাইন ও বস্নাড পরীক্ষাসহ অনেক টেস্ট ওসমানীতেই করা যায়। কিন্তু এই দালালরা রোগীদের বাইরে নিয়ে সরকারি সিটিস্ক্যান বিল ২ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ হাজার টাকা আদায় করে। ইসিজি হাসপাতালে ৮০ টাকা, বাইরে দালালরা করাচ্ছে ২০০ টাকায়। দালালদের গোপন চুক্তি আছে, বাইরের কমফোর্ট মেডিচেক, দেশ এক্স-রে, মেডি এইড, মেডিনোভা ও পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে। এই দালাল সিন্ডিকেটের তালিকায় আছেন, পান জালাল, জুনেদ, রুমান, হামিদ, বাবুল, মাজহারুল, জহির ওরফে বটলা জহির, জুয়েল, রাসেল, মুন্না, মাসুম, মিজান, বাট্টি জালাল ও ফকির আলী। অন্যদিকে গত ২৭ এপ্রিল জালালাবাদের কুড়িরগাওয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা বোরহান উদ্দিন হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ৩ দিন ভর্তি ছিলেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তের জন্য দেওয়া ছাড়পত্রে বলা হয়, তিনি একদিন চিকিৎসা নিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বুরহান উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, 'রেকর্ড শাখার শামীম আমার হামলাকারীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তিন দিন থাকার জায়গায় একদিন লিখে দিয়েছেন। এতে আমি ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি, আমার মামলাটির ধারা হালকা হয়ে গেছে।' গত ৪ নভেম্বর বিশ্বনাথ উপজেলার হাবরা বাজার থেকে ফজলু মিয়া জখমের শিকার রোগীকে নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ফজলু মিয়া অভিযোগ করেন, গুরুতর জখম থাকার পরও আসামিপক্ষে ম্যানেজ হয়ে রাতেই রোগীকে বের করে দিতে চায় এমসি শাখার লোকজন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ওষুধ চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। দালালদের প্রায়ই ধরা হয়। এমসি শাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, আমি আসার আগে অনেক সমস্যা ছিল, এখন ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পাওয়ার নিশ্চয়তা তৈরি করেছি। হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। ওষুধ চোর ও দালাল সিন্ডিকেট নির্মূলে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। আমিই খবর নিয়ে পুরাতন মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার থেকে চোরাই ওষুধগুলো উদ্ধার করেছি।'