[ অনলাইন ] 28/03/2024
 
রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতিতে এনবিআর
রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতিতে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৮ মাসে রাজস্ব আদায়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ঘাটতি রয়েছে ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এই ৮ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়ে ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা কম আদায় করতে পেরেছে এনবিআর। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

আর চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৪ মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব।

প্রতি বছরের মতো এবারও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে এবার বাড়তি রাজস্ব আদায়ের শর্তও পূরণ করতে হবে সংস্থাটিকে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। যদিও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রাক্কলন ৮২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এনবিআর।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব আদায়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে যা গত পাঁচ বছরে ১০ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৯ শতাংশের বেশি, যা বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আয়কর থেকে, প্রায় ২০ শতাংশ। এ ছাড়া সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। ৮ মাসে আয়কর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ৭২ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ কম আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা।

আমদানিতে গত ৮ মাসে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও এ খাতে ঘাটতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এ খাত থেকে ৮ মাসে ৭৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ কম আদায় হয়েছে ৭ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ভ্যাট আদায়ে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ভ্যাট কম আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। ৯২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকার ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকার ভ্যাট। রাজস্ব বোর্ডের দাবি ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

এদিকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সঙ্গে রয়েছে আইএমএফের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার চাপ। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। যদিও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রাক্কলন ৮২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এনবিআর।

এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে, ৮ মাসে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৭২ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। পাশাপাশি মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। বিপরীতে আয় হয়েছে ৮৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। এ ছাড়া শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

অর্থবছরের আট মাসে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আয়কর থেকে, প্রায় ২০ শতাংশ। ঘাটতি ৬ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। আর শুল্ক বিভাগে গত ৮ মাসে ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও এ খাতে ঘাটতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এ খাতে কম আদায় হয়েছে ৭ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। অন্যদিকে ভ্যাট আদায়ে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ভ্যাট কম আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা।

এদিকে এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব আদায় আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর ফেব্রুয়ারিতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৯ শতাংশের বেশি, যা বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এ বিষয় এনবিআরের নাম প্রকাশ না শর্তে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকার গত অর্থবছর থেকেই আমদানিকে নিরুৎসাহী করেছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি রয়েছে। ফলে আমদানি ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ায় শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা ছিল ভ্যাট ও আয়কর থেকে বেশি রাজস্ব আদায় হবে। দুই খাতে যে প্রবৃদ্ধি সে অর্জন কম সাফল্য নয় বলে মনে করি।

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৯১.৭৯ শতাংশ, যার মধ্যে কাস্টমস ৮৮.৯৬ শতাংশ, মূসক ৯৪.৪১ এবং আয়কর ৯১.৩৫ শতাংশ। এটাও আমাদের জন্য বড় অর্জন বলে মনে করি।