[ অনলাইন ] 17/04/2024
 
উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে চাপে থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতি
চলতি বছর মোট দেশজ উৎস্যদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকতে পারে। এ অবস্থায় ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৭ শতাংশ হতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি তাদের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনের সর্বশেষ সংস্করণে এই তথ্য জানিয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বসন্তকালীন বৈঠক চলাকালে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল আইএমএফ।

গত বছর আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হওয়ার প্রক্ষেপণ করেছিল, যা সংশোধন করে ৫.৭ শতাংশে নামানো হয়েছে। তবে ২০২৫ সালে তা কিছুটা বেড়ে ৬.৬ শতাংশ হতে পারে। আর ২০২৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ শতাংশে।

এর আগে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ হওয়ার অনুমান করলেও এখন তা বার্ষিক ৯.৩ শতাংশ হারে হওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৬ শতাংশ হতে পারে, মূল্যস্ফীতির হারও নামতে পারে ৬.১ শতাংশে।

 চলতি মাসের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাংক তাদের সবশেষ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, স্বল্পমেয়াদে চাপের মধ্যে থাকবে দেশের অর্থনীতি। চড়া মূল্যস্ফীতি ব্যক্তি বা বেসরকারি পর্যায়ে ভোগ চাহিদা কমাচ্ছে, তার সঙ্গে জ্বালানি ও কাঁচামালের সংকট, সুদহার বৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা বিনিয়োগের আস্থা কমাচ্ছে।

এতে প্রকৃত মোট দেশজ উৎস্যদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধিও গতি হারিয়ে হতে পারে ৫.৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের আরেক বড় উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক চলতি এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়। এডিবির মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.১ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা ৬.৬ শতাংশ হবে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির হাত ধরে।

এডিবি আরো বলেছে, মূল্যস্ফীতি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি ভোগ চাহিদা বাড়বে, একই সময় সরকারি ভোগ চাহিদায় মাঝারি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ে বাধা নেই: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

তিনি বলেন, এই বাজেট সহায়তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির দেওয়া ১০টি শর্তের মধ্যে ৯টিই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। ফলে পরবর্তী কিস্তি ছাড় পেতে কোনো সমস্যা হবে না। গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের প্রথম দিন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান গভর্নর।

করোনা মহামারি ও যুদ্ধসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের মুখে চাপে পড়ে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে সহায়তা দিতে আশ্বাস দিলেও সংস্থাটি বাংলাদেশকে ১০টি শর্ত জুড়ে দেয়।

এ বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, আইএমএফের ঋণের জন্য দেওয়া ১০টি শর্ত পূরণের মধ্যে বাকি আছে শুধু রিজার্ভ। সেটির উন্নয়নেও কাজ চলছে। তাই তৃতীয় কিস্তির ঋণ ছাড়ে কোনো সমস্যা হবে না।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশ সফরে আসছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রাথমিক সম্মতি দেয় আইএমএফ। এরপর গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার ও ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ।

রাজস্ব বাড়ানো এবং যৌক্তিক ব্যয় ব্যবস্থা চালু, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক মুদ্রানীতি তৈরি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা, নজরদারি বাড়ানো, সরকার ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের আওতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পরিবেশ তৈরি, মানব দক্ষতা বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে ব্যাবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তোলা, পরিবেশের উন্নতির পদক্ষেপ নেওয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত খাতে আরো বিনিয়োগ ও আর্থিক সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ ১০ শর্তে বাংলাদেশকে এই ঋণ দেওয়া হয়।

দারিদ্র্যমুক্ত ও বাসযোগ্য পৃথিবী করার অঙ্গীকার নিয়ে সোমবার শুরু হয়েছে আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের বসন্তকালীন বৈঠক। যেখানে বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও নীতিনির্ধারকরা আলোচনা করছেন কিভাবে বাসযোগ্য পৃথিবী করা যায়, উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা যায়।

উদ্বোধনী বক্তব্যে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টেলিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরো কঠিন হচ্ছে। শান্তির আহ্বান ও যুদ্ধের দামামা একসঙ্গে চলতে পারে না। আইন সবাইকে মানতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কার্বন নিঃসরণ ও প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন করতে হবে।

এবারের সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০২৬ সালের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে গেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সোচ্চার হতে হবে। বাংলাদেশকে সুযোগ তৈরি করে দেবে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক গ্রুপের এই বৈঠক।

বৈঠকে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের গভর্নরদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেন, ‘মরিশাস থেকে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করতে দেশটির সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। তাদের কোনো একটি ব্যাংককে আমাদের কোনো একটি ব্যাংকের করেসপন্ডিং ব্যাংক করে দিতে সম্মত হয়েছেন তাঁরা। এতে প্রবাসীরা সহজেই দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন।’