[ অনলাইন ] 23/04/2024
 
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী বাড়ছে
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তহবিল সীমাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকছে।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বৈঠকে ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোসহ কিছু কর্মসূচিতে ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। তবে সার্বিকভাবে নতুন বাজেট হবে কিছুটা সংকোচনমূলক। তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে  খুব বেশি ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ নেই। এ জন্য আপাতত প্রায় পাঁচ লাখ ভাতাভোগী বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ভিত্তিতেই সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দসহ অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্তত দুইবার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এসব বৈঠকের পর উপকারভোগী এবং ভাতা বাড়ানোর বিষয় চূড়ান্ত হবে।  

ওই কর্মকর্তা বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা আরও দরিদ্র মানুষকে আওতায় আনতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এ খাতে ব্যয় অনেক  বাড়াতে সরকারের সক্ষমতা থাকা দরকার। কিন্তু বর্তমানে সে আর্থিক সক্ষমতা নেই। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্ত হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে ৫৮ লাখ ১ হাজার প্রবীণ প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে পাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের সংখ্যা দুই লাখ বাড়তে পারে। সরকার চলতি অর্থবছরে ‘বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচিতে ৪ হাজার ২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বার্ষিক গড় আয় ১০ হাজার টাকার কম– এমন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ও ৬২ বছরের বেশি বয়সী নারীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বিধবা, পরিত্যক্ত বা দুস্থ নারীদের জন্য ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রায় ২৫ লাখ ৭৫ হাজার নারী এতে সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী বাজেটে এ সুবিধা আরও দুই লাখ মানুষ পেতে পারেন। এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সী নারী, যাদের বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকার নিচে, তারা প্রতি মাসে ৫৫০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। এ ছাড়া ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার উপকারভোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে এ উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার করা হতে পারে।

বর্তমানে  মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ১৩ লাখ ৪ জন ৮০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। আগামী বাজেটে এ খাতে নতুন করে ১ লাখ ৩০ হাজার উপকারভোগী অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। একই সঙ্গে ভাতা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করার আলোচনা চললেও তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ৮০ বছর বা এর বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের ভাতা প্রতি মাসে ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করার প্রস্তাব এসেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে।
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এলে তা বাস্তবায়ন করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ১১৫টি কর্মসূচিতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও তাদের পরিবারের পেনশন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়াম এবং কৃষিসহ বেশ কিছু ভর্তুকি সামাজিক সুরক্ষায় অন্তর্ভুক্ত থাকায় এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। চলতি বাজেটের মতো নতুন বাজেটেও জিডিপির প্রায় একই হারে বরাদ্দ রাখা হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।